ব্রাজিলের বেলেম শহরে আয়োজিত ২০২৫ জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (কপ৩০) চলাকালে ভেন্যুতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের স্থানত্যাগ করতে হয়।
বৃহস্পতিবারের (২০ নভেম্বর) ওই আগুনে কেউ আহত হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্রাজিলের পর্যটনমন্ত্রী সেলসো সাবিনো। পরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি আগুনের ঘটনাকে তেমন গুরুতর নয় বলে মন্তব্য করেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে একটি ছোট আগুন লেগেছিল, যা বড় কোনো অনুষ্ঠানে ঘটতেই পারে। এমন ক্ষুদ্র আগুন পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় ঘটতে পারে।’
আয়োজকদের বরাতে জানা যায়, দ্রুতই সবাইকে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং মাত্র ছয় মিনিটের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। সামান্য ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি।
জাতিসংঘ ও কপ৩০ নেতৃত্বের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৩ জনকে আগুনের ধোঁয়ায় অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থলের অংশটি ‘ব্লু জোন’ নামে পরিচিত। স্থানীয় সময় রাত ৮টা পর্যন্ত এলাকা বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
আগুন লাগার কারণ এখনও নিশ্চিত নয়। তবে সম্মেলন যে পারা অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেখানকার গভর্নর হেলদার বারবালহো ব্রাজিলিয়ান চ্যানেল গ্লোবোনিউজকে বলেন, জেনারেটর বিকল হওয়া বা শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি আশ্বস্ত করেন যে কপ৩০-এর অন্যান্য অংশ স্বাভাবিকভাবেই চলছে। তিনি লিখেছেন, ‘এটি কীভাবে ঘটেছে তা আমরা খুঁজে বের করব এবং আজই ব্লু জোনে কাজ পুনরায় শুরু করা সম্ভব কি না তা নির্ধারণ করব। গ্রিন জোন স্বাভাবিকভাবে চলছে।’
স্থানীয় সময় দুপুর ২টার দিকে ব্লু জোনের প্যাভিলিয়নে আগুনের খবর ছড়িয়ে পড়ে। এই এলাকা কেবল আলোচনায় যুক্ত প্রতিনিধি এবং অনুমোদিত গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য সংরক্ষিত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে আতঙ্কের দৃশ্য দেখা যায়, যেখানে নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুত সবাইকে ভেন্যু থেকে বের হতে নির্দেশ দিচ্ছেন।
আল জাজিরাকে স্বাধীন সাংবাদিক ফের্নান্দো রালফের অলিভেইরা বলেন, আগুন লাগার সময় তিনি ব্লু জোনেই ছিলেন এবং আগুনের ভিডিও ধারণ করেছেন। তিনি জানান, ‘আমি বড় করিডোরে ছিলাম, যেখানে মিটিং রুমগুলোর দিকে যাওয়া যায়। হঠাৎ দেখলাম অনেকে দৌড়াতে শুরু করেছে। আমার হাতে ফোন ছিল, সঙ্গে সঙ্গে রেকর্ডিং শুরু করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্যাভিলিয়নের কাছে যেতেই একজন দৌড়ে এসে চিৎকার করে বলল, আগুন! আগুন! আমি একটু সামনে দৌড়ে গিয়ে আগুনের মুহূর্তটা ধারণ করি। তখনই নিরাপত্তা সদস্যরা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছিল এবং বারবার বলছিল, বাইরে যান, বাইরে যান।’
তাদের পরে প্যাভিলিয়নের বাইরে কপ৩০–এর খাবার পরিবেশনের এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টা পর সম্মেলন আয়োজনকারী জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক (ইউএনএফসিসিসি) অংশগ্রহণকারীদের ইমেইলে জানায়, স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ভেন্যুতে পূর্ণ নিরাপত্তা পরীক্ষা করবে।
এরপর জানানো হয়, ব্লু জোন বন্ধ থাকবে: ‘দয়া করে লক্ষ্য করুন, ভেন্যুটি এখন আয়োজক দেশের নিয়ন্ত্রণে। এটি আর ব্লু জোন হিসেবে বিবেচিত নয়।’
এই আগুনের ঘটনা ঘটে এমন এক সপ্তাহ পর, যখন কপ৩০–এর নিরাপত্তা নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগের জবাব দেয় ব্রাজিল সরকার।
গত ১৩ নভেম্বর ইউএনএফসিসিসি–র নির্বাহী সচিব সাইমন স্টিল ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাকে চিঠি লিখে ত্রুটিপূর্ণ দরজা, লাইটের কাছে পানি পড়াসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা–সংশ্লিষ্ট সমস্যার কথা জানান।
ওইদিনই ব্রাজিল সরকার জানায়, ‘জাতিসংঘের সব চাহিদা পূরণ করা হয়েছে’, যার মধ্যে ব্লু ও গ্রিন জোনের মধ্যকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান জোরদার করাও অন্তর্ভুক্ত।
সূত্র: ইত্তেফাক