বিরোধী কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শাণিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, জনগণই তার আসল কর্তা ও ‘রিমোট কন্ট্রোল। তাদের সামনেই তিনি নিজের বেদনা প্রকাশ করেন। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আরজেডি-কংগ্রেসের একটি নির্বাচনী সভা থেকে তার এবং প্রয়াত মা হীরাবেন মোদিকে লক্ষ্য করে করা কটূক্তি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি শিবভক্ত এবং এই ধরনের গালিগালাজের ‘বিষ’ গিলতে প্রস্তুত। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি। আসামের দরং জেলায় এক জনসভায় একাধিক প্রকল্প উদ্ধোধন করেন মোদি। সেখানে তিনি বলেন, আমি জানি পুরো কংগ্রেস শিবির আমার দিকে আঙুল তুলবে। বলবে- মোদি আবার কাঁদছে। কিন্তু জনগণই আমার ভগবান।
যদি তাদের সামনে আমি আমার দুঃখ প্রকাশ না করি, তবে কোথায় করব? তারাই আমার দেবতা, আমার রিমোট কন্ট্রোল। আমার আর কোনো রিমোট কন্ট্রোল নেই। সাম্প্রতিক নির্বাচনী প্রচারে বিহারে আরজেডি-কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে কটূক্তি করা হয় মোদিকে নিয়ে। কংগ্রেস দাবি করেছে, তাদের কোনো নেতা সেই সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন না। পরে আরও বিতর্ক তৈরি হয় কংগ্রেস একটি এআই ব্যবহার করে তৈরি করা ভিডিও প্রকাশ করলে। তাতে মোদির মায়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়। ‘রিমোট কন্ট্রোল’ প্রসঙ্গটির রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। অতীতে মোদি অভিযোগ করেন, ইউপিএ সরকারের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে নিয়ন্ত্রণ করতেন সোনিয়া গান্ধী।
বর্তমান কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকেও গান্ধী পরিবারের ‘রিমোট কন্ট্রোল’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি। তবে তার এ বক্তব্য বার বার অস্বীকার করেছে কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রী জানান, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা তাকে কংগ্রেস সভাপতি খাড়গের এক মন্তব্যের কথা মনে করিয়ে দেন। ভারত সরকার যখন কিংবদন্তি গায়ক ভূপেন হাজারিকাকে ভারতরত্নে ভূষিত করে, তখন খাড়গে বলেন মোদি ‘গায়ক-নৃত্যশিল্পীদের’ পুরস্কার দিচ্ছেন। যদিও ২০১৯ সালে খাড়গে কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন না, তবুও ওই মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয়। পরে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ড. ভূপেন হাজারিকা আমাদের দেশের অন্যতম প্রতিভাবান শিল্পী।
সংগীত, কবিতা, সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে তার অবদান অসামান্য। তার সৃষ্টিকর্ম আসামের সংস্কৃতি ও শিল্পকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিয়েছে। মোদি বলেন, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের পর স্বীকার করেন যে, উত্তর-পূর্বের মানুষের ক্ষত সারেনি। আজকের কংগ্রেস সেই ক্ষতে নুন ছিটাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দশকের পর দশক কংগ্রেস আসাম শাসন করেছে। অথচ ব্রহ্মপুত্রের ওপর মাত্র তিনটি সেতু বানিয়েছে ৬০-৬৫ বছরে। অথচ আপনাদের আশীর্বাদে আমরা মাত্র এক দশকে ছয়টি নতুন সেতু নির্মাণ করেছি। তাই স্বাভাবিকভাবেই আপনারা আমাদের কাজে সন্তুষ্ট এবং আশীর্বাদ দিয়েছেন। সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কংগ্রেসের আমলে সন্ত্রাস হলে তারা নীরব থাকত। এখন আমাদের সেনারা ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালিয়ে পাকিস্তানের প্রতিটি কোণ থেকে সন্ত্রাস উপড়ে ফেলছে।
কিন্তু কংগ্রেস পাকিস্তান সেনার পক্ষে দাঁড়ায়। পাকিস্তানের মিথ্যাই কংগ্রেসের এজেন্ডা হয়ে ওঠে। তাই কংগ্রেস থেকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। অভিবাসন প্রসঙ্গে মোদি বলেন, কংগ্রেসের ‘সবচেয়ে বড় লক্ষ্য ভোটব্যাঙ্ক’ এবং তারা দেশের কথা কখনো ভাবেনি। আজ কংগ্রেস দেশবিরোধী ও অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষক হয়ে উঠেছে। তারা ক্ষমতায় থাকাকালে অনুপ্রবেশকে উৎসাহিত করেছে, আর এখন চায় অনুপ্রবেশকারীরা স্থায়ীভাবে দেশে থেকে ভারতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করুক।