টাইমস অব ইন্ডিয়া: দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর স্থানীয় বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তারা, বিশেষ করে নেপালে। এমন অভিযোগ তুলেছেন তিব্বতের নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী লবসাং সাংয়ে। একইসঙ্গে তিনি ভারতকেও বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের এক পডকাস্টে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে সাংয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন চীনের ‘বিস্তারবাদী’ নীতির বিষয়ে এবং ভারতের প্রভাব খর্ব করার উদ্দেশ্যে চীনের প্রচেষ্টার ব্যাপারে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া। যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়, ভারতও কি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশের মতো বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার স্বার্থে তিব্বত প্রসঙ্গ এড়িয়ে চলে কি না, তখন সাংয়ে বলেন- তিনি মনে করেন না ভারত সেই পথ অনুসরণ করছে।
তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, চীন পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে। যাতে ভারতের প্রভাবকে সীমিত করা যায়। সাংয়ে বলেন, ভারতের চীনের সঙ্গে বড় স্বার্থ জড়িত। শুধু তিব্বত নয়, শুধু সীমান্ত এলাকা নয়। সব প্রতিবেশী দেশেই তাকান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হোক বা মধ্য এশিয়া- যেখানেই ভারত প্রভাব বিস্তার করতে চায় বা সম্পর্ক গড়তে চায়, চীন সবসময় সেখানে উপস্থিত থেকে ‘চেকমেট’ করার চেষ্টা করছে।
নেপালের উদাহরণ টেনে তিনি অভিযোগ করেন, চীনা কর্মকর্তারা কাঠমান্ডুতে ‘সবচেয়ে প্রভাবশালী শক্তি’ হয়ে উঠেছেন, ‘সম্ভবত ভারতীয় বা মার্কিন দূতাবাসের চেয়েও বেশি প্রভাবশালী।’ তিনি বলেন, একই ধরনের হস্তক্ষেপ ভুটান, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কাতেও দৃশ্যমান। সাংয়ের ভাষায়, তারা এসে হস্তক্ষেপ করে, প্রভাব খাটায়। আমি বলছি না তারা আপনাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু তারা আপনার ঘরের ভেতরে প্রবেশ করছে। তিনি বলেন, আপনি যে বড় প্রশ্ন তুললেন- এশিয়ায় কত দেশ তিব্বতের বিষয়ে কথা বলবে, কারণ তারা চীনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চায় না- এটা একদিকে সত্যি। কিন্তু অন্যদিকে আমরা বলি, তিব্বতে যা ঘটেছে, তা একদিন আপনাদের সঙ্গেও ঘটবে। যদি আপনি তিব্বতের ইতিহাস বুঝতে ও অধ্যয়ন করতে না চান, তাহলে একই ঘটনা আপনার দেশেও ঘটবে।
নেপালের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ধরা যাক নেপাল- তারা আগে বিশ্বাস করত না, তাই না? এখন হ্যাঁ, চীনা দূতাবাস ও কর্মকর্তারা স্থানীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। কাঠমান্ডুতে চীনা দূতাবাস সম্ভবত সবচেয়ে শক্তিশালী- ভারতীয় বা আমেরিকান দূতাবাসের চেয়েও বেশি, অনেকে এমনটাই বলে। সাংয়ে জানান, চীন যেভাবে পুরোপুরি তিব্বতের ওপর ভৌত নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, সেটাই সবচেয়ে বড় পার্থক্য। কিন্তু অন্যান্য দেশে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব এবং দূতাবাসের মাধ্যমে হস্তক্ষেপ এখন সুস্পষ্ট বাস্তবতা। তিনি আরও বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের তিব্বত সফরগুলো আসলে ভারতের জন্য কৌশলগত বার্তা। সীমান্ত ভাগাভাগি ও অঞ্চলে চীনের ব্যাপক সেনা মোতায়েনের দিকটি উল্লেখ করে সাংয়ে বলেন, শি-এর সর্বশেষ সেনাদের উদ্দেশে দেয়া বক্তৃতার প্রতিলিপি প্রকাশিত হয়নি- যেটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বেইজিং সফরের সঙ্গে মিলে যায়। তবে সাংয়ে দাবি করেন, তিনি ‘নিশ্চিত’ যে এতে ভারতবিরোধী যুদ্ধ বা অনুপ্রবেশের প্রস্তুতির বার্তাই দেয়া হয়েছে।
নিজের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে সাংয়ে বলেন, তিব্বতি জনগণ দেশ ছাড়ার পর অস্থায়ী আশ্রয় পেয়েছিল ভারতে। ‘একজন বৌদ্ধ হিসেবে আমরা অস্থায়িত্বে বিশ্বাস করি। একবার দেশ হারালে, আপনি যাযাবর হয়ে যান,’- তিনি বলেন। ভারত হয়ে উঠেছিল তাদের ‘বাসস্থান’, যদিও বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তিনি আরও বলেন, ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে তার স্থায়ী বন্ধন রয়েছে। যখনই আমি ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দর দিয়ে বের হই, দিল্লির বাতাসের গন্ধ পেলেই মনটা শান্ত হয়ে যায়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তিব্বতি ও ভারতীয়দের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ়। যখনই আমি ভারতীয়দের সঙ্গে দেখা করি, সঙ্গে সঙ্গে বলি ‘নমস্কার’... তখনই বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
সাংয়ে স্মরণ করেন, তার ২০১১ থেকে ২০২১ মেয়াদে বহুবার ভারত-চীন সম্পর্কের উষ্ণতার সময় চীনের চাপ বেড়েছিল।
২০১৮ সালের ‘থ্যাঙ্ক ইউ ইন্ডিয়া’ অনুষ্ঠান উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ওই সময়ে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়ায় ভারত সরকার কর্মকর্তাদের অংশ না নিতে পরামর্শ দিয়েছিল, ফলে অনুষ্ঠান সীমিত আকারে পালিত হয়। তবুও সাংয়ে জোর দিয়ে বলেন, ভারত সবসময় তিব্বতিদের পাশে থেকেছে। কোনো দল বা কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হোক না কেন, ভারত সবসময় তিব্বতিদের ভালোভাবে দেখেছে। তিব্বতিদের জন্য এর চেয়ে ভালো আতিথেয় আমরা কল্পনা করতে পারি না- তিনি বলেন। তিব্বতি পরিচয়, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষার পেছনে ভারতের সহায়তাকেই তিনি কৃতিত্ব দেন। অনুবাদ: মানবজমিন