ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকার ৫ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার সাশ্রয় করেছিল আড়াই হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে গত অর্থবছরে সাশ্রয়ের পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি।
গত অর্থবছরে জ্বালানি, ভবন, যানবাহন ও ভূমি অধিগ্রহণে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন খাতে বাজেট বরাদ্দ ছিল ২২ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। তবে এসব খাতে ব্যয় হয়েছে ১৭ হাজার ৬৭ কোটি টাকা।
২০২০ সালের মার্চে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অস্থিরতা সামলাতে প্রথম ব্যয় সংকোচন শুরু করে সরকার।
পরবর্তীতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। এতে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যায় এবং দেশের আমদানি খরচও বৃদ্ধি পায়।
ফলে সরকার ব্যয় সংকোচন নীতি অব্যাহত রাখে এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিভিন্নভাবে ব্যয় কমানো হয়েছে।
গত অর্থবছরে যানবাহন ও নৌযান খাতে বরাদ্দকৃত বাজেটের তুলনায় ব্যয় ৭৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭৭৪ কোটি টাকায়।
উড়োজাহাজ খাতে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা, আর ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৩৬১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যুৎখাতে ব্যয় ১৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭২৯ কোটি টাকায়। পেট্রোল, তেল ও লুব্রিকেন্টে ব্যয় ২০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৩ কোটি টাকায়। ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় কমানো হয়েছে ১ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা এবং আবাসিক ও অনাবাসিক ভবনে ব্যয় কমানো হয়েছে ৫৫৯ কোটি টাকা।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যানবাহন কেনার খাতে ব্যয় কমানো ভালো উদ্যোগ। কারণ, এসব খরচের অধিকাংশটাই অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিকভাবে বেশি। এই খাতে ব্যয় উন্নয়নের মূল লক্ষ্য পূরণ করে না।'
তার মতে, কৃচ্ছ্রতা করতে গিয়ে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে ব্যয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না—এটা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, 'ব্যয় সংকোচন কার্যকর রাখতে হলে অর্থনীতির গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার যদি পরবর্তী সরকারের জন্য অপেক্ষা করে, তাহলে সেটা অর্থনীতির জন্য ভালো হবে না। এটি গুরুত্বপূর্ণ।'
চলতি অর্থবছরেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যয় সংকোচনের নীতিতে অটল রয়েছে।
জুলাইয়ে সরকার বাজেটভুক্ত ব্যয়ে বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বিদেশ ভ্রমণ ও যানবাহন ক্রয়।
তবে যানবাহন কেনার ওপর এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা কঠিন হতে পারে। কেননা, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রায় ৩০০ গাড়ি কেনা প্রয়োজন হবে।
মন্ত্রণালয়, সরকারি সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে এই ব্যয় সংকোচন বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের কৃচ্ছ্রনীতি ও রাজস্ব নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অব্যাহত উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতেই এই নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২৭ মাস পর জুনে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নেমে আসে এবং আগস্টে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্র অনুযায়ী, দুর্বল রাজস্ব আহরণও ব্যয় সংকোচনের আরেকটি কারণ।
সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে বিদ্যুৎ, পেট্রোল, তেল ও লুব্রিকেন্ট, গ্যাস ও জ্বালানিতে ব্যয়ের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে।
এসব খাতে গত অর্থবছরে মন্ত্রণালয়গুলোকে সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বরাদ্দ ব্যয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিখাত ব্যতীত কোনো মন্ত্রণালয়কে চলতি বাজেট থেকে নতুন আবাসিক, অনাবাসিক বা অন্যান্য ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হবে না। উৎস: ডেইলি স্টার।