ইফতেখার আলম বিশাল, রাজশাহী প্রতিনিধি: বিএনপির ওপর জনগণের বিশ্বাস ও আস্থাই আগামী নির্বাচনে বিজয়ের পথ দেখাবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, “আগামী নির্বাচনে বিএনপি জনগণের প্রথম চাওয়া প্রতিষ্ঠা করবে। আমরা বিশ্বাস করি, অধিকাংশ ভোট বিএনপির পক্ষেই যাবে।”
রোববার (১০ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টায় রাজশাহী মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, “জনগণের এই আস্থা ধরে রাখা শহীদ জিয়া ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার আদর্শে বিশ্বাসী নেতাকর্মীদের দায়িত্ব। এই আস্থা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, কারণ ভোটের পরও নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে।”
রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপির ভূমিকা
তিনি জানান, “আমরা বহু আগে ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি। আজ অন্তর্বর্তী সরকারও প্রায় একই সংস্কারের প্রস্তাব দিচ্ছে—যা আমরা আড়াই বছর আগেই উপস্থাপন করেছি। দেশের উন্নয়ন ও জনগণের জীবনমান বৃদ্ধিতে এই সংস্কার বাস্তবায়ন অপরিহার্য।”
জনগণের বিশ্বাস নিয়ে এই সংস্কার বাস্তবায়নই এখন বিএনপির মূল চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন তিনি। তা না হলে দেশ আরও পিছিয়ে পড়বে এবং মানুষ আরও কষ্টে পড়বে বলেও সতর্ক করেন।
কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংস্কারের প্রতিশ্রুতি
তারেক রহমান বলেন, “মানুষ জানতে চায় তাদের ভবিষ্যৎ কী। এখন আমাদের দায়িত্ব বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, শিক্ষাকে ঢেলে সাজানো ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার পুনর্গঠন করা। স্বৈরাচার হাসিনার সময় এমন স্বাস্থ্যব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল, যাতে জনগণ পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হতো। বিএনপি সে ব্যবস্থা পাল্টাবে।”
পদ্মার পানির দাবি
ফারাক্কার প্রভাবে পদ্মা নদী শুকিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এক সময়কার সুজলা-সুফলা অঞ্চল এখন মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। আমরা পদ্মার পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে প্রয়োজনে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আদালতে যাবো।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের খাল-নদী পানিতে ভরিয়ে রাখতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো সংকট দেখা দিলে মানুষ তা ব্যবহার করতে পারে।”
বিএনপির পুনর্গঠনের সক্ষমতা
“স্বাধীনতার পর ১৯৭৪–৭৫ সালে দেশ দুর্ভিক্ষে পড়েছিল, কিন্তু শহীদ জিয়ার সময় খাদ্য উৎপাদন বেড়ে আমরা খাদ্য রপ্তানি শুরু করি। বিএনপির সেই অভিজ্ঞতা আছে। তাই দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্বও বিএনপিই নিতে পারবে,”—বলেন তিনি।
তিনি দাবি করেন, জনগণ বিএনপির দিকেই তাকিয়ে আছে এবং তাদের প্রত্যাশা—বিএনপি দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনা করবে।
সম্মেলনের চিত্র
দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক পর রাজশাহী মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় নগরীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মোড়ে। বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম।
সকাল থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে নেতাকর্মীরা দলে দলে এসে সম্মেলনস্থল ভরিয়ে তোলেন। জায়গা না পেয়ে অনেকে পদ্মার পাড়সহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন।
প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা। সঞ্চালনায় ছিলেন সদস্য সচিব মামুন অর রশিদ। বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহীন শওকত, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আলিমুজ্জামান আলিমসহ আরও অনেকে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর রাজশাহী মহানগর বিএনপির ৪৯ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়, যা পরে ৬১ সদস্যে উন্নীত হয়। তার ধারাবাহিকতায় এবার অনুষ্ঠিত হলো বহুল প্রত্যাশিত এই সম্মেলন।