শিরোনাম
◈ ভাইসা আসি নাই, কথা বলার সময় মুখ সামলায় বলবা : আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (ভিডিও) ◈ ফোন হারিয়ে রেলস্টেশনে বিদেশির কান্না ভাইরাল, অভিযোগ পায়নি পুলিশ (ভিডিও) ◈ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে সম্মতি, তবে পিআর পদ্ধতিতে ভোটের দাবিতে অটল জামায়াত ◈ রিজার্ভ এখন ৩০.২৫ বিলিয়ন ডলার ◈ মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা, গুরুত্ব পাবে যেসব বিষয় ◈ বাংলাদেশের মেয়েরা যেভা‌বে অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপের মূলপর্বে  ◈ দ‌ক্ষিণ আ‌ফ্রিকা‌কে হা‌রি‌য়ে ত্রিদেশীয় সি‌রি‌জে চ‌্যা‌ম্পিয়ন বাংলা‌দেশের যুবারা ◈ তারেক রহমানের ঢাকায় বাড়ি নেই, তাই ভাড়া বাড়ি খুঁজছেন: আবদুস সালাম ◈ ভারত নির্ভরশীলতা থেকে বৈরিতা, চীন ও পাকিস্তানের সাথে নৈকট্য: অন্তর্বর্তী সরকারের কূটনৈতিক অর্জন কতটা? ◈ ভারতীয় বো‌র্ডের চা‌পে ওয়ানডে থেকেও অবসর নিচ্ছেন রোহিত শর্ম ও বিরাট কোহলি

প্রকাশিত : ১০ আগস্ট, ২০২৫, ০৮:৩৫ রাত
আপডেট : ১১ আগস্ট, ২০২৫, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চারঘাটে জলাবদ্ধতায় কৃষকদের বিপর্যয়: আমন আবাদ অনিশ্চিত, ক্ষতির আশঙ্কা ৩ কোটি টাকা

ইফতেখার আলম বিশাল, রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা এবার চরম বিপাকে পড়েছেন। টানা বৃষ্টিতে ফসলি জমি তলিয়ে গেছে, ফলে আমন চাষে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। কোমরসমান পানিতে দাঁড়িয়ে চারা তুলছিলেন কৃষক আব্দুল কাদের (৫৭)। তিনি বলেন, “সাড়ে ছয় বিঘা জমিতে ধান রোপণের পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু জমি এখন পানির নিচে। হাঁটুপানিতে চারা নষ্ট হয়ে গেছে। যতটুকু চারা বেঁচে আছে, সেগুলোই বাঁচানোর চেষ্টা করছি। নতুন করে চারা কিনে আবাদ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

আব্দুল কাদেরের মতো অসংখ্য কৃষকই একই সমস্যায় পড়েছেন। একসময় উঁচু জমি হিসেবে পরিচিত বরেন্দ্র অঞ্চলের বিলগুলো অতিবৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে। স্থানীয় কৃষকদের মতে, অপরিকল্পিত পুকুর খনন, খাল ভরাট, দখল ও কালভার্টের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়া এই জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ। এতে শুধু ফসল নয়, বসতবাড়িও প্লাবিত হয়েছে।

নিজেদের উদ্যোগে পানি নিষ্কাশন
জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে কৃষকরা শ্যালো মেশিন বসানো, নালা খনন এমনকি সড়ক কেটে পানি বের করার মতো উদ্যোগ নিচ্ছেন। বালিয়াডাঙার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, “পুকুর খননের পর পাড়ে কলাগাছ লাগিয়ে পানি চলাচলের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। হাঁটুপানিতে জমি পড়ে আছে, এখন ধান লাগাব কীভাবে?”

চারঘাট উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, জলাবদ্ধতায় অন্তত ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আগস্টের শেষ দিকে পানি নেমে গেলে কিছু জমিতে রোপণ সম্ভব হলেও প্রায় ৩০০–৪০০ হেক্টর জমি চাষের বাইরে থেকে যাবে। কৃষকদের দাবি, বাস্তব অবস্থা আরও ভয়াবহ—অন্তত ১,০০০ হেক্টর জমি এখনও পানির নিচে, অনেকের ঘরেও পানি ঢুকেছে।

বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ও খাল-পুকুর সংকট
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, ২৯ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত সাত দিনে ১৬৭.৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা এ মৌসুমে সর্বোচ্চ।

উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, গত এক দশকে চারঘাটে ১,৪৭২টি নতুন পুকুর খনন হয়েছে—যার বেশিরভাগই তিন ফসলি জমিতে এবং নিয়মবহির্ভূতভাবে। এতে পানিনিষ্কাশনের স্বাভাবিক পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

শলুয়া গ্রামের কৃষক সবুর আলী বলেন, “আগে বৃষ্টির পানি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বড়াল নদীতে চলে যেত। এখন খাল দখল হয়ে যাওয়ায় সেই পথ নেই।” কাগজে-কলমে চারঘাটে ২১টি খাল থাকলেও ১৬টির কোনো অস্তিত্ব নেই, বাকি পাঁচটিও দখল ও দূষণে অকার্যকর।

চামটা গ্রামের মুক্তা হোসেন জানান, “আমরা নিজেরাই খাল কাটার চেষ্টা করছি, যেন পানি নিষ্কাশন হয়।”
সরদহ ইউনিয়নের সুমন আলী বলেন, “কালভার্টের মুখ বন্ধ, পানি যেতে পারছে না। খাল নেই, পুকুরে সব পথ আটকে গেছে।”

ক্ষতির আশঙ্কা
উপজেলা আদর্শ কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বলেন, “১,০০০ হেক্টর জমি চাষ না হলে কমপক্ষে ২৫ হাজার মণ ধান উৎপাদন হবে না। প্রতি মণ ১,০০০–১,২০০ টাকা ধরলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩ কোটি টাকা।” তিনি আরও বলেন, “অপরিকল্পিত পুকুর খনন বন্ধ করতে হবে, দখলকৃত খাল উদ্ধার করে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে।”

চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আল মামুন হাসান বলেন, “কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করছি যাতে কোনো জমি চাষের বাইরে না থাকে। উঁচু জায়গায় অতিরিক্ত বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। আশা করছি, আগস্টের শেষের দিকে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হবে।”

চারঘাটে জলাবদ্ধতা শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং বছরের পর বছর অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার ফল। এখনই সঠিক ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়বে—যা সামাল দেওয়া কঠিন হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়