এল আর বাদল : পাকিস্তানের নিম্মমধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষদের ভিক্ষাবৃত্তি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পেশা হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যা ২৩ কোটি এবং এর মধ্যে প্রায় চার কোটি মানুষ ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবনযাপন করেন। পাকিস্তানিরা কেবল তাদের দেশেই ভিক্ষা করছে না, বিদেশেও এই 'পেশা' অবলম্বন করছেন। ভিক্ষুকদের কারণে পাকিস্তান সরকারকে বিশ্বব্যাপী তার ভাবমূর্তি সামলাতে নানা অসুবিধা সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
সে দেশের প্রথম সারির সংবাদপত্রে ডনের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের জনসংখ্যা ২৩ কোটি, যার মধ্যে ৩.৮ কোটি পেশাদার ভিক্ষুক। একজন ভিক্ষুকের জাতীয় গড় আয় প্রতিদিন ৮৫০ পাকিস্তানি রুপি। এই ভিক্ষুকরা প্রতিদিন ৩২ বিলিয়ন রুপি ভিক্ষা পান বলে জানা গেছে। বার্ষিক ১১৭ ট্রিলিয়ন রুপি। মার্কিন ডলারে পাকিস্তানি ভিক্ষুকদের বার্ষিক আয় ৪২ বিলিয়ন ডলার।
ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে প্রায় চার কোটি মানুষ কোনও কাজ না করেই বার্ষিক ৪২ বিলিয়ন ডলার আয় করছেন। এটি দেশের বাকি জনসংখ্যার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। পাকিস্তানের বিজনেস অ্যান্ড সোসাইটি সেন্টারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে দেশে ভিক্ষাবৃত্তির প্রবণতা বাড়ছে কারণ এই শ্রেণী অন্যান্য অদক্ষ শ্রমের তুলনায় বেশি আয় করছে।
এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (AHRC) অনুযায়ী, পাকিস্তানের জনসংখ্যার ২.৫ থেকে ১১ শতাংশ জীবিকা নির্বাহের জন্য ভিক্ষা করে। এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের হিসেব অনুযায়ী, প্রায় ১২ লাখ শিশু দেশের প্রধান শহরকেন্দ্রগুলির রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়।
পাকিস্তান সরকার বিদেশে রাস্তায় ভিক্ষা করা দেশবাসীর তথ্য সংগ্রহ করেছে। এই পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা হচ্ছে কারণ বিদেশে ধরা পড়া ৯০ শতাংশ ভিক্ষুকই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। ইরাকি এবং সৌদি রাষ্ট্রদূতরা পাকিস্তান সরকারের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগও করেছেন।
পাকিস্তান সরকার ধর্মীয় তীর্থযাত্রা এবং ভিক্ষাবৃত্তির আড়ালে সৌদি আরব, ইরাক এবং ইরানের মতো দেশে যাওয়া হাজার হাজার ভিক্ষুকের পাসপোর্ট স্থগিত করেছে।
গত আড়াই বছরে সৌদি আরব এবং অন্যান্য উপসাগরীয় দেশ থেকে ৪৪ হাজার ভিক্ষুককে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
গত ১৬ মাসে সৌদি আরব ৫,০৩৩ জন পাকিস্তানি ভিক্ষুককে বিতাড়িত করেছে। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি জাতীয় পরিষদে এই তথ্য প্রকাশ করেছেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভিক্ষুকদের বিদেশে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। মন্ত্রী নিজেই সংসদে এটি স্বীকার করে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিরা ইতিমধ্যেই বিশ্বের অনেক দেশকে সমস্যায় ফেলছে। গত কয়েক দশক ধরে পাক ভিক্ষুকরাও উপসাগরীয় দেশগুলিতে অভিবাসনের চেষ্টা করছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়া সত্ত্বেও তারা এই পাকিস্তানি নাগরিকদের তাড়িয়ে দিচ্ছে।
অনেক পাকিস্তানি বিভিন্ন ধরণের ভিসায় বিদেশে ভ্রমণ যান। কিন্তু পরে সেখানে ভিক্ষাবৃত্তিই তাঁদের পেশা হয়ে ওঠে। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ চাকরির নাম করে গিয়েছিলেন, যদিও পরে এই ধরনের কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়েন এবং তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়।
পাকিস্তানের যেকোনও অঞ্চলে ভিক্ষুক পাওয়া যেতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শেয়ার করা তথ্য থেকে দেখা যায় যে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যক্তিরা এই প্রবণতার সঙ্গে জড়িত। যেমন, সিন্ধ প্রদেশ থেকে ২,৭৯৫ জন, পাক পাঞ্জাব থেকে ১,৪৩৭ জন, খাইবার পাখতুনখোয়া থেকে ১,০০২ জন, বালোচিস্তান থেকে ১২৫ জন এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীর থেকে ৩৩ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাদ নেই রাজধানী ইসলামাবাদও। এখানকার ১০ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।