ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা দখল করে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে নির্মূল করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। শুক্রবার ওই পরিকল্পনা দেশটির মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেলে বিশ্বজুড়ে নিন্দা, হুশিয়ার, উদ্বেগ ও আশংকার ঝড় নামে। কিন্তু এসব সমালোচনায় পাত্তা না দিয়ে নিজের অবস্থানে অটল আছেন নেতানিয়াহু।
রোববার জেরুজালেমে এক সংবাদ সম্মেলনে গাজা দখলের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন নেতানিয়াহু। দাবি করেন, এটাই যুদ্ধ অবসানের সেরা ও দ্রুততম উপায়।
এএফপির প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
নিজ দেশে ও বিশ্বজুড়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছে নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনা।
তা সত্ত্বেও, সংবাদ সম্মেলনে গাজার যুদ্ধে 'বিজয় অর্জনের' খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তুলে ধরেন তিনি।
নেতানিয়াহু জানান, সামরিক বাহিনীকে হামাসের সর্বশেষ দুই ঘাঁটি ধ্বংসের 'সবুজ সংকেত' দেওয়া হয়েছে। ওই ঘাঁটিগুলো গাজা সিটি ও দক্ষিণের আল মাওয়াসি এলাকায় অবস্থিত বলে তিনি দাবি করেন।
সাংবাদিকদের নেতানিয়াহু বলেন, 'ইতোমধ্যে গাজার ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ ভূখণ্ড ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে আছে। অবশ্য এটা শুধু সামরিক নিয়ন্ত্রণ। তবে (হামাসের) আরও দুইটি ঘাঁটি টিকে আছে। বুঝলেন? এগুলো গাজা সিটি ও আল মাওয়াসের কেন্দ্রের শিবিরে অবস্থিত।'
'ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা ইতোমধ্যে আইডিএফকে হামাসের ওই দুই ঘাঁটি নির্মূলের নির্দেশনা দিয়েছে', যোগ করেন তিনি।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর আনুষ্ঠানিক নাম ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) বা সংক্ষেপে আইডিএফ।
নেতানিয়াহু বলেন, 'এটাই যুদ্ধ অবসানের সেরা উপায়। এবং দ্রুত শেষ করার উপায়'।
নেতানিয়াহু বলেন, এই সামরিক অভিযানের স্থায়িত্ব খুব কম সময়ের জন্য হবে। তবে এতে কতদিন লাগতে পারে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি তিনি।
তিনি বলেন, 'আমি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নিয়ে কথা বলতে চাই না। তবে এটা খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে না, কারণ আমরা চাই দ্রুত যুদ্ধের অবসান ঘটুক।'
সাম্প্রতিক সময়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র জার্মানিসহ অন্যান্য বিদেশি সরকারের কাছ থেকে আসা তীব্র সমালোচনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নেতানিয়াহু বলেন, প্রয়োজনে ইসরায়েল একাই এগিয়ে যেতে প্রস্তুত।
ইতোমধ্যে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করেছে জার্মানি।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'আমরা এই যুদ্ধে জিতব। অন্যদের সমর্থন থাকুক বা না থাকুক।'
নেতানিয়াহু বলেন, সামরিক অভিযানের আগে 'যুদ্ধক্ষেত্র' থেকে বেসামরিক মানুষদের সরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। তাদের সরে যাওয়ার জন্য 'নিরাপদ করিডরের' ব্যবস্থা করা হবে।
'আমরা কিছু নিরাপদ এলাকা চিহ্নিত করে দেব। শুরুতেই বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে ওইসব নিরাপদ জায়গায় চলে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।'
তিনি বলেন, 'ওইসব নিরাপদ জোনে তাদেরকে যথেষ্ঠ খাবার, পানি ও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।'
'আবারও বলছি, যুদ্ধের পুরোটা সময় আমাদের উদ্দেশ ছিল মানবিক সংকট যাতে না দেখা দেয়, সেটা নিশ্চিত করা। অপরদিকে, হামাসের নীতি ছিল ওই ধরনের সংকট সৃষ্টি করা', যোগ করেন তিনি।