দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ লেবার এমপি এবং সাবেক ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে দায়ের করা দুর্নীতি মামলার বিষয়ে প্রথমবার মুখ খুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, শেখ হাসিনার ভাইঝি হিসেবে তার প্রভাব ব্যবহার করে ঢাকায় জমি অর্জনের অভিযোগ 'হাস্যকর'। তিনি এখনো অভিযোগের বিস্তারিত বা আনুষ্ঠানিক সমন পাননি, যা তাকে একটি 'কাফকায়েস্ক দুঃস্বপ্নে' আটকে রেখেছে।
টিউলিপ শেখ হাসিনার শাসনের পতন এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে নিজেকে 'মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার খালার বিরোধের ক্ষতিগ্রস্ত' হিসেবে বর্ণনা করেন। সাক্ষাৎকারে তিনি ২০০৪ সালে উপহার হিসেবে পাওয়া ফ্ল্যাট, তার বর্তমান বাড়ির মালিকানা এবং রাশিয়ায় ২০১৩ সালের একটি ছবি নিয়ে অভিযোগের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কোনো অন্যায় করেননি এবং বাংলাদেশের জনগণ ন্যায়বিচার পাক, তবে তার বিরুদ্ধে নির্বিচারে মামলা অন্যায়।
এদিকে, গার্ডিয়ানে টিউলিপ সিদ্দিকের দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান তার অভিমত তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, টিউলিপ সিদ্দিকের দ্য গার্ডিয়ানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ছয়টি উল্লেখযোগ্য বিষয় উঠে এসেছে। সেগুলো হলো:
১. বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের অভাব: টিউলিপ বারবার বলছেন, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা সম্পর্কে তাকে কিছুই জানায়নি। তিনি বলেন, 'আমি একটি কাফকায়েস্ক দুঃস্বপ্নে আটকে আছি, যেখানে আমাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে, কিন্তু আমি জানিই না অভিযোগ কী বা বিচার কী নিয়ে।' এটি অযৌক্তিক। বাংলাদেশে তার স্বার্থ রক্ষার জন্য তিনি স্থানীয় একজন আইনজীবী নিয়োগ করতে পারতেন, যা তিনি স্পষ্টতই ইচ্ছাকৃতভাবে করেননি। তাই এই অভিযোগের কথা বারবার বলা বন্ধ করা উচিত।
২. তার খালার প্রতি অবস্থান: টিউলিপ বলেন, 'আমি আমার খালাকে রক্ষা করতে এখানে নেই। আমি জানি তার সরকারের সমাপ্তি নিয়ে তদন্ত চলছে। আমি আশা করি বাংলাদেশের মানুষ তাদের কাঙ্ক্ষিত ন্যায়বিচার পাবে।' কিন্তু একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এটুকু বলাই কি যথেষ্ট? সিদ্দিক নিশ্চয়ই জানেন যে, জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে তার খালা শেখ হাসিনার সরকারকে ২০২৪ সালের জুলাই/আগস্টে শত শত নিরস্ত্র প্রতিবাদকারী ও দর্শকের হত্যার জন্য দায়ী করা হয়েছে এবং তার খালা নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
৩. ফ্ল্যাট উপহারের বিষয়ে অজ্ঞতার দাবি: টিউলিপ বলছেন, ২০০৪ সালে তিনি যখন বিশের কাছাকাছি বয়সে ছিলেন, তখন তাকে একটি ফ্ল্যাট উপহার দেওয়া হয়েছিল, যা সম্পর্কে তিনি জানতেন না। এখন তিনি তার 'বয়স্ক পিতামাতার' স্মৃতির ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়, বিশেষ করে তার বোনকেও কয়েক বছর পরে একটি ফ্ল্যাট উপহার দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়।
৪. বর্তমান বাড়ির মালিকের সঙ্গে সম্পর্ক: টিউলি দাবি করেন, তিনি যে বাড়িতে থাকেন, তার মালিকের সঙ্গে তার পরিচয় লেবার পার্টির মাধ্যমে হয়েছিল। এটি সত্য হলেও, তিনি নিশ্চয়ই শিগগিরই জানতে পেরেছিলেন যে, ওই ব্যক্তি যুক্তরাজ্যের আওয়ামী লীগের একজন পরিচিত নেতা। এই বিষয়টি তিনি উল্লেখ করতে ভুলে গেছেন বলে মনে হয়।
৫. খালার সঙ্গে সম্পর্ক এবং রাজনৈতিক অবস্থান: তিনি বলেন, 'আমার খালা কে, তা আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।' এটি সত্য। কিন্তু তিনি তার খালার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে কী ধরনের সম্পর্ক রাখবেন এবং তার খালার ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতি কীভাবে সাড়া দেবেন, তা তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
৬. 'ক্ষতিগ্রস্ত' হওয়ার দাবি: টিউলিপ বলেন তিনি 'ক্ষতিগ্রস্ত', কিন্তু তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী নয়। তিনি দাবি করেন, এটি মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার খালার মধ্যে 'বিরোধের' কারণে। এটি সঠিক নয়। বর্তমানে যদি কোনো বিরোধ থাকে, তা হলো তার খালা এবং বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে, যে দেশটি বছরের পর বছর স্বৈরাচার থেকে পুনরুদ্ধার করছে এবং ২০২৪ সালের জুলাই/আগস্টে তিন সপ্তাহের মারাত্মক রক্তপাতের ঘটনায় তার খালার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রায় ১০০০ মানুষকে হত্যা করেছে। তবে, যদি এই 'বিরোধের' ফলে তাকে নির্বিচারে মামলার মুখোমুখি করা হয়, তা অবশ্যই অন্যায়। অনুবাদ: ইত্তেফাক।