শাহাদাত হোসেন, রাউজান (চট্টগ্রাম): [২] পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আমাদের দেশে প্রতিবছর অসংখ্য অতিথি পাখি আসে। শীতে মৌসুম শুরু হলে অতিথি পাখিরা দল বেঁধে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে এসে আমাদের দেশের বিভিন্ন পুকুর জলাশয়, খাল বিল, নদী ও বড় বড় দিঘিতে আশ্রয় নেন।
[৩] চট্টগ্রামের রাউজানেও প্রতি বছরই শীতের সময়ে অতিথি পাখির আগমন ঘটে পুকুর, নদী, বিল,জলাশয়ে। রাউজানে যেসব স্থানে পাখি আসে, সে স্থানগুলো হচ্ছে- হালদা নদী, ঈসা খাঁ দিঘি, লস্কর দিঘি, পরীর দিঘি, গহিরা নরসরত বাদশা দিঘি, জল পাইন্ন্যা দিঘি,রায় মুকুট দিঘি, বৃকবানুপুর দিঘি, বগোয়ানের কোয়ে পাড়া গোলমা কিবরিয়া পুকুরসহ বড় আকৃতির জলাশয় গুলোতে এখন অতিথি পাখি এসে ভরে গেছে। পাখির কিচির-মিচির শব্দ শুনতে ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন স্থানীয়রা দিঘির পাড়ে সময় পার করেছে।
[৪] বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির পাখি রয়েছে, এর মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ৭১৪ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩২০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি শীতের সময়ে আমাদের দেশে আসে। এই পাখিদের মধ্যে রয়েছে- সোনাজঙ্গ, খুরুলে, কুনচুষী, বাতারণ, শাবাজ, জলপিপি, ল্যাঞ্জা, হরিয়াল, দুর্গা, টুনটুনি, রাজশকুন, লালবন মোরগ, তিলে ময়না, রামঘুঘু, জঙ্গী বটের, ধূসর বটের, হলদে খঞ্চনা, কুলাউ ইত্যাদি।
[৫] এছাড়াও নানা রং আর কণ্ঠ বৈচিত্রের পাখিদের মধ্যে রয়েছে ধূসর ও গোলাপি রাজহাঁস, বালি হাঁস, লেঞ্জা, চিতি, সরালি, পাতিহাঁস, বুটিহাঁস, বৈকাল, নীলশীর পিয়াং, চীনা, পান্তামুখি, রাঙামুড়ি, কালোহাঁস, রাজহাঁস, পেড়িভুতি, চখাচখি, গিরিয়া, খঞ্জনা, পাতারি, জলপিপি, পানি মুরগি, নর্থ গিরিয়া, পাতিবাটান, কমনচিল, কটনচিল প্রভৃতি।
[৬] হালদা গবেষক ড. শফিকুল ইসলাম জানান, বস্তুত প্রচণ্ড শীতে স্ববাসে যখন বাঁচা-মরার প্রশ্ন দেখা যায়, দেখা দেয় খাদ্য ও আশ্রয়ের চরম সঙ্কট; তখন শীতপ্রধান দেশ হিমালয়, সাইবেরিয়া, আসাম, ফিলিপিন্স, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ পশ্চিম চীনের মালভূমি, রাশিয়া, ফিনল্যান্ডসহ বরফের দেশ থেকে অতিথি হয়ে পাখিরা আসে আমাদের দেশে। হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে আসা অতিথি পাখিরা খুঁজে নেয় নির্জন স্থান, জলাশয়, পুকুর, নদী ও বড় বড় দিঘিগুলো।
[৭] বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসব পাখি ৬-৭ মাসের জন্য শীতের শুরুতে আশ্রয় নেয়। উড়ে বেড়ায় হাওর, বিল ও বিভিন্ন জলাশয়ে। দুর্ভাগ্যজনক হল, অতিথি পাখি এদেশে অতিথি হয়ে থাকতে পারছে না, এক শ্রেণীর শিকারীর হাতে তারা শিকার হচ্ছে। পাখিরা মানুষের কাছে একসময় বিস্ময় হিসেবে থাকলেও আজ তা কারও কারও কাছে সৌখিন খাবারে পরিণত হয়েছে। অতিথি পাখি শিকার করা হলে ভবিষ্যতে হয়তো এদের আসা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। সম্পাদনা: এ আর শাকিল
প্রতিনিধি/এআরএস