মনিরুল ইসলাম : অনুষ্ঠিত হলো ‘স্মৃতির আয়নায় কিংবদন্তির দৃশ্য’র ব্যানারে ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রয়াত শিল্পীদের স্মরণে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির স্মরণসভা।
রোববার এফডিসিতে আয়োজন করা হয় এই স্মরণসভা। প্রয়াতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় সেখানে হাজির হয়েছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের প্রয়াত শিল্পীদের স্বজন। নতুন-পুরাতন শিল্পীদের অনেকে। এই অনুষ্ঠান ঘিরে অনেক দিনপর তারকাদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে এফডিসি।
অনুষ্ঠানে শরিক হন নায়ক সোহেল রানা, আনোয়ারা, আহমেদ শরীফ, নায়িকা নূতন, রুবেল, বাপ্পা রাজ, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের তনয় উপল, নায়িকা পলি,নায়িকা মুক্তি, দেবী গাফফার, প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু, শামসুল আলম, নানা শাহ, পরিচালক সমিতির সভাপতি শাহীন সুমন, এফ আই মানিক, রায়হান মুজিব, গাজী মাহবুব,ডিএ তায়েব, মায়া চৌধুরী, রিনা খান, কাবিলা, নাসরিন, শিউলি আহমেদ,ইউসুফ খান,মিসেস দিলদার প্রমুখ।
প্রয়াত শিল্পীদের ছবি এফডিসিতে টানানো হয়। নায়করাজ রাজ্জাক, মান্নাসহ যারা মারা গেছেন তাদের ছবি এতে স্থান পায়। অনুষ্ঠানে আগত শিল্পীরাসহ অতিথিদের শ্রদ্ধার সাথে ছবির সামনে দাঁড়িয়ে সন্মান জানাতে দেখা যায়।
দিন ব্যাপী আয়োজনে ছিলো, সকালে কোরআন খতম, জোহরের নামাজ শেষে দোয়ার আয়োজন, দুুপুরে মধ্যাহ্নভোজ আর বিকালে চলে প্রয়াত শিল্পীদের স্মৃতিচারণ।
এদিকে, আয়োজনে অংশ নিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক খল অভিনেতা আহমেদ শরীফ বলেন, প্রশংসিত এক উদ্যোগ নিয়েছে শিল্পী সমিতি। আমি হেরে গেছি। আমি প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদকসহ সভাপতি ছিলাম এই সমিতির । আমরা যা করতে পারিনি বর্তমান কমিটি তা করে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, আমরা শিল্পীরা এফডিসিতে আসতে চাই। কিন্তু এর আগে এমন আয়োজন হয়নি। এবারই প্রথম প্রয়াত শিল্পীদের পরিবার নিয়ে এই আয়োজন করা হয়৷ বর্তমান শিল্পী সমিতিকে ধন্যবাদ। আমি তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সুদূর আমেরিকা থেকে ছুটে এসেছি। আমি সব সময় শিল্পীদের পাশে ছিলাম। আগামিতেও তাদের পাশে থাকতে চাই।
একই কথা বলেন কিংবদন্তি অভিনেতা সোহেল রানা। তিনি বলেন, অনেক দিন পর শিল্পী সমিতির আয়োজনে অংশ নিয়ে ভালো লেগেছে। অনেক সহকর্মীর সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা হয়েছে। ভালো একটা সময় কেটেছে।
তিনি সকলের কাছে জেনে বা না বুঝে কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে উপস্থিত সকলকে মাফ করে দিতে বলেন। বলেন, কখন ডাক আসে ওপারে চলে যাই। যা বলতে পারি না।
প্রয়াত অভিনেত্রীর সুষমার ছেলে বলেন, শিল্পী সমিতিকে ধন্যবাদ এত সুন্দর আয়োজন করার জন্য। যেখানে মৃত্যুর একদিন পর মানুষ ভুলে যায় সেখানে শিল্পী সমিতি দারুণ এক উদ্যোগ নিয়েছে। আমার মাকে ভুলে নাই।
৩বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রয়াত নৃত্য পরিচালক মাসুম বাবুলের ছেলে বলেন, আমার বাবা নেই কিন্তু তাকে স্মরণ করেছে শিল্পী সমিতি। অনেক ধন্যবাদ সমিতিকে৷ চলচ্চিত্রের সোনালি সময় নেই কিন্তু সবাই চেষ্টা করছে ফিরিয়ে আনতে। বাবা পরিবারের চেয়ে সিনেমা বেশি ভালোবাসতো। নিজের কথা চিন্তা না করে সমিতিতে আসতো। সমিতি তাকে আজ স্মরণ করার জন্য আমার পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আয়োজন প্রসঙ্গে শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য রুমানা ইসলাম মুক্তি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের প্রয়াত শিল্পীদের পরিবার এবং গুণী শিল্পীরা সাড়া দিয়ে আয়োজনে অংশ নিয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে আমরা বেশি সাড়া পেয়েছি। অনেক সিনিয়র শিল্পী এদিন হাজির হয়েছেন। প্রয়াত অনেক শিল্পীর পরিবার উপস্থিত ছিল। এছাড়া চলচ্চিত্রের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সবাই আয়োজনে খুশি, এতেই আমাদের স্বার্থকতা।
চিত্রনায়ক সনি রহমান বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি সুন্দর একটি আয়োজন উপহার দেওয়ার৷ সবার সহযোগিতায় সুন্দর একটি অনুষ্ঠান উপহার দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।
‘স্মৃতির আয়নায় কিংবদন্তির দৃশ্য’র ব্যানারে এই উদ্যোগের নেপথ্যে ছিলেন শিল্পী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুম পারভেজ রুবেল, সহ-সাধারণ সম্পাদক আরমান, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক জ্যোকি আলমগীর, কোষাধ্যক্ষ কমল পাটেকর, কার্যনির্বাহী সদস্য চুন্নু, রুমানা ইসলাম মুক্তি, সনি রহমান ও অভিনেতা শিবা শানু।