এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল মৎস্যভান্ডার নামে খ্যাতবিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলেরবাগেরহাটের ফকিরহাটে মাছের ঘেরে সারি সারি গাছে ঝুলছে হলুদ, সবুজ ও কালো রঙের অমৌসুমী তরমুজ। কৃষির এই নতুন উদ্যোগ আকৃষ্ট করেছে কৃষক ও ভোক্তাদের দৃষ্টি। আর্থিকভাবে লাভজনক হওয়ায় অনেক কৃষক ঝুঁকছেন এ চাষের দিকে। উপজেলা কৃষি বিভাগের নিয়মিত পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছে এ অমৌসুমী তরমুজ চাষ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ফকিরহাট উপজেলার আটটি ইউনিয়নে বর্তমানে ১০ হেক্টর জমিতে ৮০ জন কৃষক মাছের ঘেরে অমৌসুমী তরমুজ চাষ করছেন। কৃষি বিভাগ কৃষকদের বীজ, সার, প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। মাছের ঘেরের আইলে গাছ রোপণ এবং পানির ওপর মাচা তৈরি করায় বাড়তি ফসলি জমি ব্যবহার করতে হয়নি। পাশাপাশি ঘেরের আইল উঁচু হওয়ায় অতিবৃষ্টি বা জলাবদ্ধতার সময় ফসলের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকিও কম।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, প্রচলিত ফসলের পাশাপাশি এই ভিন্নধর্মী উদ্যোগ কৃষকদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলবে। ঝুলন্ত তরমুজ চাষ এখন ফকিরহাটের কৃষিতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।
নলধা-মৌভোগ ইউনিয়নের কৃষক নিতুল রায় বলেন, প্রথমবার ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে ঘেরে তরমুজ চাষ করেছি। ফলন দারুণ হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। আশা করছি আরও দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারব। প্রতি কেজি তরমুজ গড়ে ৪৫–৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া 'তৃপ্তি' নামের হলুদ তরমুজ কেজিপ্রতি ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে দাম আরও বেশি।
একই এলাকার কৃষক নিরাপদ বৈরাগী ও বিশ্বজিৎ সরকার জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়েছেন। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় আগামী মৌসুমে আরও বেশি জমিতে চাষের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। ঘেরে চাষ হওয়ায় মাছের স্বাস্থ্য রক্ষায় তরমুজে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে না। নিরাপদ চাষ পদ্ধতি হওয়ায় ক্রেতাদের চাহিদাও বেশি।
ফকিরহাট বাজারের ডাকবাংলো মোড়ে তরমুজ কিনতে আসা শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, দুদিন আগে একটি তরমুজ কিনেছিলাম। বেশ মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় আজ আবার কিনতে এসেছি।
উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে আশেপাশের জেলাগুলোতেও সরবরাহ করা হচ্ছে এসব তরমুজ। মৌভোগ ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব দাস বলেন, অফসিজন তরমুজ একটি লাভজনক ফসল। অনেক কৃষক প্রথমবার চাষ করেই লাভবান হচ্ছেন। বাজারে তরমুজের চাহিদা ও দাম—দুটোই ভালো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ফকিরহাটে তৃপ্তি, ফর্মেলো, বিগ ফ্যামিলি ও ছক্কা—এই চার জাতের তরমুজ চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে নলধা-মৌভোগ ও লখপুর ইউনিয়নে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কৃষকদের আগ্রহ দেখে মনে হচ্ছে, আগামীতে আরও বেশি জমিতে তরমুজ চাষ হবে।