মনজুর এ আজিজ : বাংলাদেশের রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকলেও ইউরোপের বাজারে চীনের তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়ছে। অন্যদিকে পোশাকে সতর্কবার্তা পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪৭৪ কোটি ৬১ লাখ ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩.৬৪ বিলিয়ন ডলার বেশি। আগের জুলাই-সেপ্টেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৪৫৭ কোটি ৯৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের তৈরি রপ্তানির প্রধান গন্তব্য। মোট তৈরি পোশাকের প্রায় অর্ধেক ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানি হয়। জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসেও দেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ৪৭ শতাংশ রপ্তানি হয়েছে এই বড় মার্কেটে। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল দেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ৪৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। তিন মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তৈরি পোশাক হ্রাস পাওয়ায় একটি খারাপ বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য তুলনামূলক নিরাপদ বাজার। বাজারটিতে এখন পর্যন্ত জিএসপি সুবিধা পায় বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশ এই বাজারে সর্বোচ্চ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। এই অবস্থায় বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগী কোনো দেশ পুরোপুরি আধিপত্য তৈরি করে ফেললে দেশের তৈরি পোশাক খাত সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পোশাক সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল গণমাধ্যমকে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের জন্য যেমন বড় বাজার, তেমনি চীন ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রধান দেশ। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বেশি শুল্কের মুখোমুখি হওয়ার কারণে ইউরোপের দিকে ঝুঁকছে। যার প্রভাব পড়ছে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে। তবে দেশটিতে অর্থনৈতিক মন্দাভাব বিরাজ করার কারণে ইউরোপের বাজারে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে এসেছে বলে মনে করছেন নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক।
তিনি বলেন, ইউরোপের মার্কেটটা চাঙ্গা না। মার্কেট চলছে, কিন্তু খুব শক্তিশালী না। আর বর্তমানে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কমেছে। এমন হতে পারে, বাড়তি শুল্কের কারণে চীন বা ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অসুবিধার মুখোমুখি হচ্ছে, তখন তারা ইউরোপের বাজারে বেশি মনোযোগ দেবে। তখন ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ফেলে দিচ্ছে। আবার উল্টো চিত্রও তৈরি হবে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে বাংলাদেশের বাড়তি সুবিধা তৈরি হবে, রপ্তানি বাড়বে।
সূত্র মতে, চলতি পুরো বছর ধরেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির গতি মন্থর হয়ে এসেছে। একই সময়ে চীনের রপ্তানিতে গতি এসেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-জুলাই সাত মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬.৪৫ শতাংশ; আর চীনের রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ শতাংশ। একক মাস হিসেবে জুলাই মাসে এই দূরত্ব আরও বেড়ে গেছে-বাংলাদেশের রপ্তানির প্রবৃদ্ধি যেখানে ৭.০৫ শতাংশে নেমেছে, সেখানে চীনের প্রবৃদ্ধি বেড়ে ২৪.৮৫ শতাংশ হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ শুরুতে ৩৭ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করলেও পরে তা কমিয়ে ৩০ এবং পরে ২০ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করেছে। এতে কিছুটা সুবিধা তৈরি হলেও এখনো তা রপ্তানিতে প্রতিফলিত হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্য রপ্তানিতে উচ্চ শুল্ক চাপানোর ফলে চীন বিকল্প বাজারের সন্ধানে নেমেছে এটা স্পষ্ট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন এক সময় ইউরোপে চীনের রপ্তানি অব্যাহতভাবে বাড়ছে, যখন দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে উচ্চ শুল্কের মুখোমুখি হয়েছে। টিকে থাকতে দেশটিকে বড় বিকল্পের দিকে যেতে হচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে যখন সংকটের মুখোমুখি হয়েছে, তখন থেকেই ইউরোপে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। আর ইউরোপে চীনের পর দ্বিতীয় রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ক্রমান্বয়ে কমছে। তবে ইউরোপে তৈরি পোশাক রপ্তানির এই প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়াকে সাময়িক বলে মনে করছেন পোশাক খাতের অধিকাংশ উদ্যোক্তা। কারণ ব্যবসার ওঠানামা থাকে, এখনও তাই হচ্ছে। আবার ঠিক হয়ে যাবে।