লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চরশাহীর রুপাচরা উচ্চবিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর চুল কেটে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান কাজল। এ ঘটনায় এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিচারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছেন অভিভাবকেরা। বিষয়টি শনিবার বিকেলে নিশ্চিত করেন অন্তত ১০ জন অভিভাবক। এর আগে বৃহস্পতিবার স্কুল চলাকালীন ৯ম ও ১০ম শ্রেণিকক্ষে এমন ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক কাজল চরশাহী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ঢাকা ধানমন্ডি থানায় শিক্ষার্থী হত্যা মামলার আসামিও এই প্রধান শিক্ষক।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান কাজল কারণে-অকারণে শিক্ষার্থীদের মারধর করেন। এ ছাড়া নানা অজুহাতে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। কথা না শোনার অজুহাতে বৃহস্পতিবার স্কুল চলাকালীন ৯ম ও ১০ম শ্রেণিকক্ষে ঢুকে কাঁচি দিয়ে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর মাথার চুল এলোমেলো করে কেটে দেন। এতে করে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।
তাদের অভিযোগ, এর আগেও প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান কাজলের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ার কারণে এর প্রভাব পড়েনি। সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি রুপাচরা বিদ্যালয় মাঠে সভা করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিএনপির পক্ষে স্লোগান দেয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন প্রধান শিক্ষক। এর জের ধরে শিক্ষার্থীদের মাথার চুল কেটে দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে পাঁচ শিক্ষার্থী জানায়, কোনো কারণ ছাড়াই ক্লাসে ঢুকে শিক্ষার্থীদের মাথার চুল কেটে দেন। এর আগেও প্রধান শিক্ষক কারণে-অকারণে শিক্ষার্থীদের মারধর করতেন। চুল কেটে দেওয়া শিক্ষার্থীরা লোকলজ্জার ভয়ে স্কুলে যাচ্ছে না।
অভিভাবক জামাল উদ্দিন বিপু ও আবদুল কাদের লিটনসহ অনেকেই জানান, প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুর রহমানের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের বিচার ও অপসারণের দাবি জানান তাঁরা।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘অনেক অভিভাবক বিদ্যালয়ে এসে বলেন সন্তানেরা কথা শুনে না। চুল বড় রাখে। তাই শিক্ষার্থীদের শাসন করতে ৯ম ও ১০ম শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থীর মাথার কিছু চুল কেটে দিই। বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ফেরাতে এমন কাজ করছি। এটি দোষের কিছু নয়।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জামশেদ আলম রানা বলেন, ‘বিষয়টি অভিভাবকেরা জানিয়েছেন। কী কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে, সেটা তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের মাথার চুল কেটে দেওয়া ঠিক হয়নি।’
সূত্র: আজকের পত্রিকা