বাংলাদেশে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি স্টারলিংক স্যাটেলাইট। রাজশাহীর হাইটেক পার্কে ১ একর জমি ৪০ বছরের জন্য ইজারা নিয়ে গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি করেছে কোম্পানিটি। চলতি বছরের এপ্রিলে প্লট বরাদ্দ পাওয়ার পর গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণকাজ শেষ করেছে তারা। এজন্য স্টারলিংককে বছরে প্রতি বর্গমিটার এলাকার জন্য ২ ডলার করে পরিশোধ করতে হবে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে সার্ভিস চার্জ। এর মধ্য দিয়ে বড় বিনিয়োগ হচ্ছে হাইটেক পার্কে। দেশিবিদেশি কোম্পানিগুলোর আগ্রহের ফলে পার্কে বিনিয়োগে গতি পেয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এখানে বিভিন্ন কোম্পানিতে অন্তত ২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হতে যাচ্ছে। স্টারলিংকের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ও ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশের কোম্পানি বন্ডস্টাইন টেকনোলজি লিমিটেড। এ কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও মীর শাহরুখ ইসলাম বলেন, ‘এপ্রিলে প্লট বরাদ্দ পাওয়ার পর জুলাই পর্যন্ত লেগেছে গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণে। ইতোমধ্যে কাজ শেষ হয়েছে। স্টারলিংক গ্রাউন্ড স্টেশনের মাধ্যমে সারা দেশে নেটওয়ার্কিং সার্ভিস দেবে। রাজশাহী হাইটেক পার্ক ছাড়াও গাজীপুরের কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক ও যশোর হাইটেক পার্কে স্টারলিংক গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ করেছে। এসব গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে অপারেশন করা যাবে।’ স্টারলিংক রাজশাহী হাইটেক পার্কে যেসব অপারেটিভ কার্যক্রম করতে চায় তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ কাজও শুরু করতে পারেনি জানিয়ে মীর শাহরুখ ইসলাম বলেন, ‘এখন তো সবে ১০টি অ্যান্টেনা বসেছে। আরও ৩০টি বসবে। পার্কে রোবোটিকস অ্যান্ড আয়োটি রিসার্চ সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে তাদের।’
রাজশাহী হাইটেক পার্কের তথ্যমতে পার্কের ভিতরেও আটটি প্লট আছে। তার একটি ইজারা নিয়েছে স্টারলিংক। তারা ছাড়াও অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি ১ একর জমি বরাদ্দ নিয়েছে। ইতোমধ্যে ব্র্যাক আইটির সঙ্গে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। ব্র্যাকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ সালেহ হাইটেক পার্ক পরিদর্শন করে গেছেন। রাজশাহী হাইটেক পার্কের ডেপুটি ডিরেক্টর মাহফুজুল কবির বলেন, ‘পার্কের সিলিকন টাওয়ারের সামনে আটটি প্লট আছে। যেগুলো বড় কোম্পানিকে বরাদ্দ দেওয়া হবে।
ইতোমধ্যে স্টারলিংক ও অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেড তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। ব্র্যাক আইটির উচ্চ পর্যায়ের ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা হাইটেক পার্কের ২ একরের প্লট বরাদ্দ চেয়েছে। তাদের ৬৫০ জনের মতো আইটি ডেভেলপার আছেন। যাদের এখানে শিফট করতে চায় তারা। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।’
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, হাইটেক পার্কের সিলিকন টাওয়ার ১২ তলাবিশিষ্ট। সেখানে বরাদ্দযোগ্য রেডি স্পেসের পরিমাণ ৮৪ হাজার ৬৬১ বর্গফুট। এ টাওয়ারের ১০ তলার ফ্লোরে ১২ হাজার ৬১২ বর্গফুট বরাদ্দ নেওয়ার জন্য রেজুলেশন সাইনিং করেছে চালডাল কোম্পানি। স্পেস বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান আছে। চালডাল কোম্পানি সেখানে তাদের আইটি বিজনেস বিশেষ করে আইটি ও কল সেন্টার গড়ে তুলবে। সেখানে ৭০০ মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার কথা আছে। নবমতলায় একই পরিমাণ স্পেস বরাদ্দ নেওয়ার জন্য রেজুলেশন সাইনিং করেছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। তাদের স্পেস বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়াও চলমান। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ সেখানে কল সেন্টার ও আইটি সেন্টার গড়ে তুলবে।
চালডালের অন্যতম ফাউন্ডার, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়া আশরাফ বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে অফিসের ডিজাইন করে ফেলেছি। আশা করছি এক মাসের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করব।’
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এমআইএস ডিপার্টমেন্টের জিএম মোহাম্মদ তানভীর হোসেন বলেন, ‘কার্যক্রম শুরু করলে কমপক্ষে ১ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।’
হাইটেক পার্কের ডেপুটি ডিরেক্টর মাহফুজুল কবির বলেন, ‘ইতোমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আরও অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’ সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন