আইনজীবী ফয়জুল করিম মুবিনকে কিশোরগঞ্জের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে কিশোরগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানান ফোরামের সদস্যসচিব মো. শরীফুল ইসলাম।
শরিফুল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরে থাকা অপশক্তি ও বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা জনগণের অর্জিত মহান স্বাধীনতা ও জুলাই বিপ্লবকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। যার ফলে আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এক চরম হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক সময়ে কিশোরগঞ্জ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম (মুবিন) দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী বিভিন্ন বক্তব্য ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছেন। যা দলের গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী।’
তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও গঠনতন্ত্র বিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় ফয়জুল করিমকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কিশোরগঞ্জের যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ফোরামের সাবেক সহসভাপতি মো. শফিউজ্জামান শফি, শেখ মাসুদ ইকবাল, আহ্বায়ক কমিটি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা প্রমুখ।
এ বিষয়ে কথা বলতে আইনজীবী ফয়জুল করিম মুবিনকে বেশ কয়েকবার ফোন কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর ফেসবুক লাইভে এসে বিএনপির সব পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের কথা বলেন ফয়জুল করিম। গত ৯ অক্টোবর লিখিত আবেদন করে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর পদ থেকেও পদত্যাগ করেন তিনি। আইনজীবী ফয়জুল করিম দীর্ঘদিন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জেলা বিএনপির সম্মেলনের আগের কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক ও পৌর বিএনপির সদস্য ছিলেন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কিশোরগঞ্জ শাখার যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
ফয়জুল করিম মুবিনের বাবা মরহুম ফজলুল করিম ছিলেন কিশোরগঞ্জ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী (১৯৭৮–৮২)। তিনি কিশোরগঞ্জ মহকুমা বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ফয়জুল করিম তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সম্পর্কে চাচাতো ভাই আইনজীবী ফয়জুল করিম।
গত বুধবার (২২ অক্টোবর) বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে আওয়ামী লীগের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন ফয়জুল করিম মুবিন। ফেসবুক আইডিতে ২ মিনিট ১২ সেকেন্ডের বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা যেহেতু বলেছেন, তিনি অবশ্যই দেশে ফিরবেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশে অবশ্যই আসবেন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’
এ বিষয়ে কথা হয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কিশোরগঞ্জের সদস্যসচিব আইনজীবী মো. শরীফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মুবিন ফেসবুক লাইভে এসে বিএনপি থেকে পদত্যাগ এবং আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা দিয়েছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু করেননি। আজ তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
এদিকে ফয়জুল করিমের ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার ঘোষণা নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া একটি লাইভে শেখ হাসিনার দেশে ফেরা ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর বক্তব্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। মুবিন কেন আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিলেন এবং এর পেছনে কোন রাজনৈতিক চিন্তা কাজ করেছে—সে প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম এখন নিষিদ্ধ। এমন প্রেক্ষাপটে ফয়জুল করিম মুবিনের আওয়ামী লীগে যোগদান নিয়ে স্থানীয় বিএনপিতেও নানা আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।