শিরোনাম
◈ পুতিনের উপদেষ্টা ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে এবার যে সুখবর দিলেন ◈ শেখ হাসিনার সঙ্গে বর্তমান শাসনব্যবস্থার খুব বেশি পার্থক্য নেই: রুমিন ফারহানা (ভিডিও) ◈ প্লে-অফে জয় পে‌লো ইন্টার মায়ামি, মে‌সির জোড়া গোল ◈ চিত্রনায়িকা ববি ও প্রযোজক বাশারের কল রেকর্ড ফাঁস (অডিও) ◈ শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড তদন্তে চার দেশকে আমন্ত্রণ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ ফেসবুকের জনপ্রিয় ব্যঙ্গাত্মক পাতা ‘সুইজারল্যান্ড প্রবাসী’র নেপথ্যে আসলে কারা? ◈ ছেলের হাতে প্রাণ গেল বাবার, ছেলেকে বাঁচাতে ছিনতাইয়ের নাটক সাজালো মা (ভিডিও) ◈ যেভাবে উদ্ধার হলেন মুফতি মহিবুল্লাহ, মিললো চাঞ্চল্যকর তথ্য!(ভিডিও) ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে মেলেনি অনেক হিসাব, হতাশ রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ ◈ ভারতে জু‌নিয়র বিশ্বকাপ হ‌কি খেল‌বে না পা‌কিস্তান, নাম তুলে নিলো

প্রকাশিত : ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০৬ দুপুর
আপডেট : ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ০২:১২ দুপুর

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে মেলেনি অনেক হিসাব, হতাশ রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ

এল আর বাদল : অন্তর্বর্তী সরকারের সাড়ে ১৪ মাস অতিবাহিত হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত এই সরকার কতটা প্রত্যাশা পূরণ করেছে? এ বিষয়ে হতাশাই প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাংবাদিক, নারী অধিকার কর্মীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ।

এই ১৪ মাসে ১৩টি দেশে ১৪ বার সফর করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এসব সফর থেকে বাংলাদেশ কী পেয়েছে? ব্যবসা-বাণিজ্য, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কতটা ভূমিকা রেখেছে? বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টার সর্বশেষ রোম সফর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এই সফরে তিনি কী অর্জন করেছেন? প্রোটোকল অনুযায়ী রোমের মেয়রের অফিসে গিয়ে তিনি বৈঠকে অংশ নিতে পারেন কিনা - এমন প্রশ্নও উঠেছে। ---- সূত্র, ড‌য়ে‌চে‌ভে‌লে

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ এ বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, "একটি দেশের শীর্ষ নেতার ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়াটা খুব জরুরি কিনা? উনি একটা মাল্টিলেটারাল বা বহুপাক্ষিক অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। এটা ইটালি ও বাংলাদেশের মধ্যে একটা দ্বিপাক্ষিক সফর নয়। এটা নিয়ে মানুষ চিন্তিত। প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক অনুষ্ঠান সত্যিকার অর্থে খুব কম হচ্ছে। ফলে, এগুলোতে যাওয়া কি ওনার জন্য খুব জরুরি? প্রধান উপদেষ্টার এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব নেওয়ার পর ভাষণে বলেছিলেন, "বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেছে। আমাদের সকল উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করবেন। পর্যায়ক্রমে এটি সকল সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও নিয়মিত ও বাধ্যতামূলক করা হবে।

কিন্তু ১৪ মাস পার হলেও উপদেষ্টারা সম্পদের হিসাব দেননি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-র সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বিষয়টি নিয়ে আক্ষেপ করে বলেছেন, "ঘটনাটা অনেকটা শেখ হাসিনার মতো হলো। কারণ, উনিও উনার নির্বাচনি ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, উনার পুরো যে মন্ত্রিপরিষদ হবে, তাদের তথ্য দিবেন বিত্ত-বৈভব ও আয়ের ব্যাপারে এবং উনি সেটা রক্ষা করেননি। অনেক প্রত্যাশা ছিল যে, বর্তমান সরকার একটা নতুন নজির স্থাপন করবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেটাও হয়নি।

তবে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, "আমি যতদূর জানি অনেক উপদেষ্টাই সম্পদের হিসাব প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছেন। এই সংখ্যাটা অধিকাংশই। তবে এই মুহুর্তে নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। এখনো তো সময় আছে, প্রধান উপদেষ্টা যেহেতু কথা দিয়েছেন, ফলে উনি এটা করবেন।

মবসন্ত্রাস' ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি

অভ্যুত্থানের পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। নির্বাচনের সময় এগিয়ে এলেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হয়েছে? থামানো গেছে ‘মবসন্ত্রাস'? পরিস্থিতি এমনই যে, গত মাসে রাজবাড়ির গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলার' মৃত্যুর পর মরদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।  

গত ৫ সেপ্টেম্বর নুরাল পাগলার কবর কয়েক ফুট উঁচু থেকে নীচে নামানোসহ কয়েকটি দাবি জানিয়ে ‘ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি' ও ‘তৌহিদী জনতা' গোয়ালন্দ বাজারের আনসার ক্লাবে সমাবেশের আয়োজন করে। পরে সেই সভা থেকে কিছু লোক পুলিশের ওপর হামলা চালায়৷ পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)-র গাড়ি ভাঙচুর করার পর একদল উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি নুরাল পাগলার দরবার ও বাড়িতে কয়েক দফা হামলা ও ভাঙচুর চালায়। কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেয়া হয় নুরাল পাগলার মরদেহ৷ 

লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা তোলপাড় তোলে দেশে-বিদেশে৷ ৬ সেপ্টেম্বর রাতে পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা হয়। সেই মামলায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৮ সেপ্টেম্বর নুরাল পাগলার দরবারে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে আরেকটি মামলা হয়। ওই মামলায় পুলিশ রিপন রায়সহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে৷ দুটি মামলাতেই প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় না আনার অভিযোগ রয়েছে৷

দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে উদ্বেগ থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয় পরিস্থিতি অতটা উদ্বেগজনক নয়৷ 

গত ১৪ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে অপরাধ সংক্রান্ত কিছু পরিসংখ্যান দিয়ে এমন দাবি করা হয়৷ সেখানে বলা হয়, গত ১০ মাসে (২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত) দেশে ডাকাতি হয়েছে ৬১০টি, দস্যুতা ১,৫২৬টি, খুন ৩,৫৫৪টি, দাঙ্গা ৯৭টি, ধর্ষণ ৪,১০৫টি, এসিড নিক্ষেপ ৫টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১২,৭২৬টি, অহরণ ৮১৯টি, সিঁধেল চুরি ২,৩০৪টি, চুরি ৭,৩১০টি এবং এই সময়ে রুজুকৃত মামলার সংখ্যা ১,৪৪,৯৫৫টি। পরিসংখ্যান পুলিশ সদর দপ্তরকে ‘উদ্ধৃত' করে

আরো বলা হয়, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৩৬৭টি, খুন হয়েছে ১,৯৩৩টি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২,৭৪৪টি, এছাড়া নারী নির্যাতন ৬,১৪৪টি এবং শিশু নির্যাতন হয়েছে ২,১৫৯টি। সেই ফেসবুক পোস্টে আরো দাবি করা হয়, ২০২৪ সালে সারা দেশে ডাকাতি হয়েছিল ৪৯০টি, খুন ৪,১১৪টি, ধর্ষণ ৪,৩৯৪টি, নারী নির্যাতন ১০,১৯৮টি এবং শিশু নির্যাতন ২,৯৬৪টি। 

এসব পরিসংখ্যান দিয়ে ‘গত ১০ মাসে গুরুতর অপরাধের প্রবণতা স্থিতিশীল রয়েছে' বলেও সেখানে দাবি করা হয়৷ তবে জুলাই অভ্যুত্থানের পর পুলিশের সার্বিক পরিস্থিতি আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত প্রকৃত তথ্য সংরক্ষণে অনুকূল ছিল কিনা সে বিষয়ে বিশ্লেষকদের সন্দেহ রয়েছে৷

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার কতটা সফল - এমন এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আইন-শৃঙ্খলার যতটা উন্নতি হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়নি। পুলিশের মনোবল ফেরাতে ঊর্ধ্বতনদের যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার দরকার ছিল, সেটা নেওয়া হয়নি।আমি মনে করি, একটা নির্বাচিত সরকার এলে ধীরে ধীরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

আলোচনায় বিচারাঙ্গন

গত ১৪ মাসে বিচারাঙ্গন কতটা স্বাধীন হয়েছে? নিয়োগ বা অবসর কি সঠিক নিয়মে হচ্ছে? গ্রেপ্তারকৃতরা কি যথাযথভাবে জামিনের অধিকার পাচ্ছেন? সুপ্রিমকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্না মনে করেন , "আইন আছে, কিন্তু আইনের শাসন নেই। 

বিচারালয়কে দুর্নীতিমুক্ত করা না গেলে দেশের কোথাও দুর্নীতিমুক্ত হওয়া সম্ভব না। দুই দিন আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন, ‘এখন থেকে আমরা দেখবো গ্রেপ্তারকৃতরা যাতে জামিন না পায়। এই বক্তব্য থেকেই তো বোঝা যাচ্ছে বিচার কিভাবে চলছে? স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। ফলে আমি মনে করি, বিচার বিভাগের ১২টা না, ১৪টা বেজে গেছে।”

সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সাইদ আহমেদ রাজা বলেন, "আমরা যদি ২০২৪ সালের মে-জুনের হিসাব দেখি, হাইকোর্ট ডিভিশনের একটা সিদ্ধান্তের কারণে সারা বাংলাদেশে আগুন ছড়িয়ে পড়লো। 

সেটার প্রেক্ষিতে একটা সরকারের পতন হলো। তখন মানুষের ধারণা হয়েছিল বিচার বিভাগের একটা সংস্কার হবে। কিন্তু আমরা দেখলাম, এখানে মব তৈরি হবে হাইকোর্টের বেশ কয়েকজন বিচারককে ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। প্রধান বিচারপতি, আইন উপদেষ্ঠা ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কিছু মন্তব্যে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। বিচারের পরিবেশ এখন আর নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়