এম আর আমিন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সরকারি পাহাড় কেটে মাটি সরিয়ে নিচু জমি ও পুকুর ভরাটের অভিযোগ উঠেছে। বর্ষা মৌসুম সামনে থাকলেও থেমে নেই এ পাহাড় নিধনের কর্মযজ্ঞ। স্থানীয়দের আশঙ্কা, পাহাড় কাটা বন্ধ না হলে পাহাড় ধসে ঘটতে পারে প্রাণহানির ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাটহাজারীর নন্দীরহাট ও ফতেয়াবাদ এলাকায় সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরেই পাহাড় কাটা চলছে। যদিও পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, ইউএনও ও এসি (ল্যান্ড) বরাবর একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং পাহাড় কাটার কাজ এখনো অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ বিধ্বংসী এই কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মোহাম্মদ আবুল মনছুর, হাটহাজারী থানার উত্তর ফতেয়াবাদ এলাকার বাসিন্দা। তিনি সরকারিভাবে রেকর্ডকৃত পাহাড়ে আমমোক্তারনামা সংগ্রহ করে গেট দিয়ে তালা লাগিয়ে পাহাড় কাটার আয়োজন করেন। এমনকি প্রশাসনের দৃষ্টি এড়িয়ে চলার জন্য রাস্তার একাংশে পাকা দেয়াল নির্মাণ করে যাতায়াতও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
গত ২৩ এপ্রিল সৈয়দ মো. জহির নামের এক ব্যক্তি পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিচালক বরাবর পাহাড় কাটা বন্ধে লিখিত আবেদন করেন। অভিযোগে বলা হয়, ‘জেসন ব্রিডার্স (ফাতেমা ফার্ম)’ সংলগ্ন সরকারি পাহাড়ে প্রায় ৩০–৪০ ফুট গভীর গর্ত করে নিয়মিত মাটি কাটছেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। এমনভাবে মাটি আলগা করে রাখা হয়, যেন মনে হয় এটি ব্যক্তিগত জমিতে খনন।
পূর্বেও একই এলাকায় গভীর গর্ত করে বর্ষায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এই কৌশলে প্রতি বছর পাহাড়ের মাটি গর্তে এসে জমে, যা মূলত পাহাড় কাটার ‘কৌশলগত কভার’। পাহাড়ের উত্তর-পূর্বাংশ ইতোমধ্যে ধসে পড়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া ফতেয়াবাদের বদরপীর দরগাহ ও কবরস্থানের পশ্চিম পাশে সরকারি পাহাড় থেকেও একইভাবে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী হওয়ায় আবুল মনছুরের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মোহাম্মদ আবুল মনছুর সংক্ষেপে বলেন, “যেখানে অভিযোগ দিয়েছে, সেখানে তদন্ত করুক।”
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক জমির উদ্দীন বলেন, “প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা কার্যালয়কে বলা হয়েছে।”
তবে এ বিষয়ে জানতে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক সেলিনা আক্তার এবং হাটহাজারী উপজেলার ইউএনও এবিএম মশিউজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি, কারণ তাঁরা ফোন রিসিভ করেননি।
স্থানীয়দের দাবি, পাহাড় কাটা বন্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, না হলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি মানুষের জীবনও ঝুঁকিতে পড়বে।