রুমা মোদক
একবার বোর্ডে গেছি খাতা জমা দিতে। কর্তৃপক্ষ যথারীতি আমার খাতাপত্র গ্রহণ করলেন। হঠাৎ ঊর্ধ্বতন কারও ফোন এলো, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বললেন, জী স্যার আমার সামনে রুমা মোদক বসা আছেন। আমি সচকিত হলাম। আমাকে আরও বিস্ময়ে পতিত করে সেই দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমাকে একটি কক্ষে নিয়ে গেলেন এবং তিনি না আসা পর্যন্ত এই কক্ষেই অবস্থান করার কথা বলে বাইরে থেকে কক্ষটি তালাবন্ধ করে চলে গেলেন। আমি কিছুই আন্দাজ করতে পারছি না। কে ফোন দিলেন, কেনই বা দিলেন, কেনই বা আমাকে আটকানো হলো! মিনিট পনেরো পরে একজন পিয়নসহ কর্মকর্তা রুমে এলেন। আমার সামনে একটি সিলগালা করা প্যাকেট খুললেন। একাধিক কাগজে স্বাক্ষর নিলেন যে প্যাকেটটি আমার সামনেই খোলা হয়েছে। তারপর একটি প্রশ্ন আর প্যাকেট থেকে একটি পরীক্ষার খাতাসহ বসিয়ে দিয়ে বললেন, খুব ভালো করে খাতাটি নিরীক্ষা করতে হবে। এ জাতীয় অভিজ্ঞতা আমার আর ছিলো না। আমি বুঝতে পারছিলাম না ঘটনা কী!
ঘণ্টাখানেক সময় লেগেছিলো খাতাটি দেখতে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেও খাতায় আমি ৮০ শতাংশ নম্বর দিতে বাধ্য হলাম। আমার ফোনটি কর্মকর্তা নিয়ে গিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি এসে নম্বরপত্র সমেত খাতাটি গ্রহণ করলেন, আরও একাধিক কাগজে স্বাক্ষর নিলেন। আমার সামনে খাতাটি আবার সিলগালা করা হলো, কর্মকর্তা বারবার জিজ্ঞেস করছেন, ভালো করে দেখেছেন তো? কোনো কমপ্লেইন আসবে না তো? আমি তাঁকে আশ্বস্ত করার পর তিনি আমাকে তাঁর চেম্বারে নিয়ে গেলেন। ব্যাপারটি বললেন, এটি একজন ছাত্রীর খাতা, যাকে ভুল বুঝে কক্ষ পরিদর্শী কক্ষ থেকে বের করে দিয়েছিলেন। মেয়েটির সচেতন অভিভাবক হাইকোর্টে রিট করে রায় পেয়েছেন। এখন স্পেশালি মেয়েটির পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে এবং খাতা দেখা হয়েছে। মাঝখান থেকে মেয়েটির জীবন থেকে কয়েকটি মাস চলে গেছে, আর একটি নিষ্পাপ টিনএজ মেয়ের মানসিক চাপের কথা আমাদের দেশ সমাজ সিস্টেম কবে বিবেচনায় এনেছে? আমাদের সিস্টেম আদৌ কোনোদিন বিবেচক হবে? ফেসবুক থেকে