শিরোনাম
◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ৩১ মার্চ, ২০২১, ০৪:৫৯ সকাল
আপডেট : ৩১ মার্চ, ২০২১, ০৪:৫৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তুষার আবদুল্লাহ: বদলে যাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া

তুষার আবদুল্লাহ: পথে নামলে আমার প্রথম চোখ চলে যায় কিশোর তরুণদের দিকে। তাদের চোখের দিকে তাকাই। চোখে চোখ রাখার চেষ্টা করি। কান পাতি তাদের আলোচনায়। এই তো কিছুদিন আগেও ঢাকা থেকে দেশের যে প্রান্তেই রওনা হতাম, দেখতাম চায়ের দোকানগুলোতে বসে তরুণরা খবর দেখছে। কিশোররাও ছিল তাদের দলে। খবর দেখে ঘটনা নিয়ে, দেশ-বিদেশ নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্য আমাকেও চিন্তিত করতো, নতুন ভাবনার জোগান দিতো। আমি কখনও কখনও তাদের পর্যবেক্ষণ দেখে আবেগে ভেসে যেতাম। অনেক জায়গায় তরুণদের সঙ্গে প্রবীণদের তর্ক দেখেছি। সেই তর্ক সুন্দর। সেই তর্কে স্বপ্ন ছিল। তর্কে ছিল দেশ গড়ার প্রত্যয়। আমি কিশোর- তরুণদের দেখেছি মুঠোফোনে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের আলোচিত টকশোর খণ্ডাংশগুলো দেখছে। এ নিয়ে পথের পাশে, ট্রেনে, লঞ্চে তাদের সঙ্গে বিস্তর কথা হয়েছে। সেসব কথা বিস্তার পেয়েছে আমার নানা লেখায়, এমনি তাদের কাছ থেকে পাওয়া পর্যবেক্ষণকে আমার টকশোর আলোচনার বিষয়ও করেছি একাধিকবার। পরে দেখলাম রাজনৈতিক, সামাজিক আলোচনায় বিনোদন যোগ হচ্ছে ধীরে ধীরে। চায়ের দোকানের টেলিভিশনে হিন্দি, বাংলার ভাঁড়ামিযুক্ত নাটক, সিরিয়াল, সিনেমা দেখার ধুম পড়ে যায়। মুঠোফোনেও এ জাতীয় বিনোদন যোগ হতে থাকে।

টকশো ও রাজনীতি নিয়ে তাদের মন্তব্য ছিল- সবাই এক কথাই বলে যাচ্ছে। কোনও নতুন কথা নেই। সারাক্ষণ নেতা তোষণ চলছে। যারা কথা বলে দলে তাদের বড় অবস্থান নেই। নিজেকে বড় করতে বক বক করে। এছাড়া ভোটও যেহেতু মনের মানুষকে দেওয়া যাচ্ছে না, তাই তারা রাজনীতি ও সমাজনীতির আলোচনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু তারা বিনোদনে এসেই থামলেন না। দেখলাম তাদের মনোযোগ চলে গেছে ওয়াজে। বিশেষ করে কয়েকজন মাহফিল বক্তা তাদের আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কিশোরকে, যে তরুণকে দেখেছি সার্বক্ষণিক গান, নাটক, টকশো দেখতে শুনতে, সে উচ্চস্বরে ওয়াজ শুনছে। তাদের আড্ডা, গল্পের আলোচনায় ওয়াজের বিষয়ই উঠে আসছে। ওয়াজ বা মাহফিল শোনাতে কারও আপত্তি হওয়ার কথা নয়। দেশে বিদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইসলামি চিন্তাবিদ আছেন। যাদের বক্তব্য শুনলে ধর্ম নিয়ে অন্ধত্ব, অপব্যাখ্যার অবসান হয়। ধর্মকে সঠিকভাবে জানা যায়। তখন কারও প্রতি মনে প্রতিহিংসা তৈরি হয় না। কিন্তু মুঠোফোন, চায়ের দোকান থেকে যে বক্তব্যগুলো কানে আসে, সেগুলো ‘বীভৎস চিৎকার’। বেশিরভাগই নারীর প্রতি অশ্লীল আপত্তিকর মন্তব্য। আর আছে রাজনৈতিক হুঙ্কার।

যা সত্যিকারের আলেম ওলামার করার কথা নয়। তাদের প্রভাব কিশোর-তরুণদের মধ্যে পড়েছে ব্যাপকভাবে। তারা তাদের কাজের ক্ষেত্রতেও এ বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন ঘটাতে থাকে। আচরণ বদল হয়ে যায় পরিবারের মাঝেও। যেহেতু তারা ধর্মকে ব্যবহার করছে, বিষয়টি স্পর্শকাতর, তাই প্রতিবাদ বা চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেওয়ার সাহস দেখায়নি কেউ। না পরিবার। না সমাজ। না রাষ্ট্র। রাজনীতি এক জাদুর খেলা সেখানে ধর্মটা বরাবরই লেপ্টে যায় আলগোছে। বাংলাদেশেও গেলো। একদম। তৃণমূল থেকে শুরু হলো ব্যাপারটা। নিজের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়াই কেমন বদলে গেলো। সংস্কৃতির এই নগরটি ধীরে ধীরে মৌলবাদীদের দখলে চলে গেলো। তবলার বোলে, নূপুরের ঝংকারে, শিল্পীর সুরেলা রাগে যে শহরে সূর্যোদয় হতো, সূর্যাস্ত হতো, সেখানে অন্ধকার নামে ধর্মান্ধদের বীভৎস হুঙ্কারে। সাংস্কৃতিক এই শহরটিতে বরাবরই ধর্মচর্চা ছিল। একসময়ের হিন্দু প্রধান শহরে গ্রামে মুসলমান ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মচর্চা করে গেছেন নির্বিঘ্নে। একে অপরের উৎসবে যোগ দিয়েছেন। এমন একটি উৎসবের শহর ক্রমশ রণক্ষেত্র হতে থাকে ধর্মের দোহাই দিয়ে।

এই কিছুদিন আগেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েকটি উপজেলা ঘুরে এলাম। দেখলাম সাংস্কৃতিক চর্চা কমে আসছে। কমে আসছে ধর্মের চর্চা ও অনুশীলনও। কিচু মৌলবাদী, কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী মাদ্রাসার সাইনবোর্ড সামনে রেখে উগ্রবাদ ছড়াচ্ছে। একাত্তরের উত্তাল শহর আখাউড়া।

প্রতিটি গ্রাম ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের পদচারণায় উদ্দীপ্ত। সেই গ্রামগুলোতে সাম্প্রদায়িকতার আগাছা বাড়ছে। আগাছা উৎপাদনে মৌসুমি রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি প্ররোচনা দিচ্ছে প্রবাসীরা। প্রবাস থেকে আসছে টাকার জোগান। এই যে মৌলবাদীদের আস্ফালন সেটা মুখ বুজে সহ্য করার খেসারত দিচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। আলাউদ্দিন খাঁ সংগীত অ্যাকাডেমি পুড়িয়ে দেওয়ার পরেও আমরা মুখ বুজে ছিলাম, ভোটের লালসায়। এখন সুদে আসলে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে তা পরিশোধ করতে হচ্ছে। শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়াই নয়, অন্য শহরগুলো একই মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে। শুরুতে কিশোর তরুণদের কথা বলছিলাম। আমাদের তাদের কাছেই যেতে হবে।

যে মগজ ধোলাইয়ের শিকার তারা, সেখান থেকে তাদের মুক্তচিন্তার পথেই আনতে হবে। এক্ষেত্রে প্রকৃত আলেম ওলামা ও ইসলামি চিন্তাবিদদের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। নবী-রসুলের বাণী তাদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। একই রাজনীতিবিদদের ভোটের বাজারে ধর্মকে মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। ধর্ম ভোটের মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার হলে, তেজী হয়ে উঠবেই মৌলবাদীরা। তাদের তেজী বাজারে লাগাম টেনে ধরতে হলে রাজনীতিবিদদের নিজ দলের আদর্শ, উন্নয়নের বাস্তব পথচিত্র নিয়ে মাঠে নামতে হবে, সেই সঙ্গে তাদের বাঙালি সংস্কৃতিকে অবলম্বন করে ভোটের রাজনীতি করতে হবে। তবেই ধর্মীয় উগ্রবাদ মুক্তচিন্তা ও শুভবুদ্ধির কাছে নতজানু হবে। বাংলাট্রিবিউন। লেখক: গণমাধ্যমকর্মী, মামুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়