নিউজ ডেস্ক : অর্থ-বিত্ত, ক্ষমতার দাপট আর পেশি শক্তির কাছে অসহায় মানবতা। গত দুইমাস ধরে নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবন কাটছে অসহায় এক বৃদ্ধার পরিবারের। বাড়ির মেইন গেটের সামনে ইটের প্রাচীর নির্মাণ করায় এখন অবরুদ্ধ পরিবারটি। এমনিই অমানবিক ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা ইউনিয়নে।
প্রতিকারের আশায় উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও’র কাছে ধরনা দিয়েও কোন প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ অসহায় পরিবারটির। ফলে তাদের এখন অবরুদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে। প্রতিবেশীর এই অমানবিক আচরণ কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয়রা। এ ঘটনাকে চরম অমানবিক বলেন মনে করেন তারা। মানুষের চলাচলের রাস্তা কখনোই বন্ধ করা ঠিক নয় বলেও দাবি তাদের।
সরেজমিনে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ৬০ ঊর্ধ্ব জবেদা বিবি’র বাড়ির প্রধান গেটের সামনে বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে কাটলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস। অন্য দিকে চলাচলের রাস্তা কিছুটা থাকলেও প্রতিবেশী শাহানাজ বেগম ইটের প্রাচীর নির্মাণ করায় এখন পুরোপুরি অবরুদ্ধ বৃদ্ধা জবেদা বিবি’র পরিবার। নির্মাণাধীন ভূমি অফিসের ৩-৪ ফিট উচ্চতার বাউন্ডারি ওয়াল টোপকে বাড়িতে প্রবেশ করতে হয় ৬০ ঊর্ধ্ব জবেদা বিবি ও তার পরিবারের সদস্যদের। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে হবে কখনো ভাবনাই আসেনি এই বৃদ্ধা ও তার পরিবারের।
বৃদ্ধা জবেদা বিবি জানান, এতদিন স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করলেও বাড়ির প্রধান দরজার সামনে স্থানীয় ভূমি অফিস এবং প্রতিবেশী শাহানাজ পারভিন ইটের প্রাচীর তৈরি করায় তাকে এখন ৩-৪ ফিট উচ্চতার বাউন্ডারি ওয়াল টোপকে তাকে বাড়িতে প্রবেশ করতে হয়। এভাবে চলাচল করতে গিয়ে তাকে কয়েকবার দুর্ঘটনার শিকারও হতে হয়েছেন তিনি।
বৃদ্ধার ছেলে নাসির উদ্দিনের অভিযোগ, নির্মাণাধীন ভূমি অফিসের পিছনের দিকে সরকারী ভাবে চলাচলের রাস্তা দেয়া হলেও প্রতিবেশী শাহানাজ পারভিন তার লোকবল নিয়ে রাতারাতি বাড়ির সামনে ইটের প্রাচীর তুলে তাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে। অথচ ওই জায়গাটি শাহানাজ পারভিনের বাবার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ফজুলর রহমানের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ষ্ট্যাম্পের উপর লেখা-পড়া করে কেনা হয়েছে। সেখানে শাহানাজ পারভিনের স্বাক্ষরও আছে।
তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোন বিচার পাচ্ছিনা। দীর্ঘ প্রায় দুই মাস ধরে তারা নতুন-নতুন তারিখ দিয়ে বিচারের নামে কাল ক্ষেপণ করা হচ্ছে অথচ তারা কোন বিচার করছেন না। তিনি অভিযোগ করেন, আমি অসহায় হওয়ায় আমার বিচারের আসায় সবার দারে-দারে ঘুরেও কোন বিচার পাচ্ছিনা।
সম্প্রতি শাহানাজ পারভিনের লোকজন নির্মাণাধীন ভূমি অফিসের পিছনে সরকারী রাস্তা দখল করে আরো একটি ইটের ওয়াল নির্মাণের সময় বিরামপুর থানা পুলিশ এসে বাধা দেয়। পরে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ওয়াল নির্মাণ করলে একজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে রাতে তাকে মুসলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিবেশী শাহানাজ পারভিন প্রাচীর নির্মানের বিষটি অমানবিক হয়েছে শিকার করে বলেন, সেখানে প্রাচীর নির্মাণ করে তার স্কুটি (মটরসাইকেল) রাখার ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন আমার জায়গায় আমি কাউকে ব্যবহার করতে দিবো না। তবে তিনি শিকার করেন তার বাবা প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ফজুলর রহমান প্রতিবেশী নাসির উদ্দিনের কাছে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে জায়গাটির পজিশন বিক্রি করেছেন। যা রেজিস্ট্রি করা হয়নি।
এবিষয়ে বিরামপুর উপজেলা চেয়াম্যান খায়রুল আলম রাজুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃদ্ধার বাড়ির সামনে প্রাচীর নির্মাণ করে চলাচল বন্ধ করার বিষয়টি অমানবিক। তিনি জানান, প্রাচীর নির্মাণ কারী শাহানাজ পারভিন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার কন্যা। একারণে সমাধান হতে বিলম্ব হচ্ছে তবে উভয়ের সাথে আলোচনা চলছে বিষয়টি মীমাংসা করে বৃদ্ধার চলাচলের রাস্তা বের করে দেয়া হবে।
এবিষয়ে বিরামপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ইসাহক আলী মন্ডল ওরফে চেংগিস খাঁ বলেন, মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের কেউ অপরাধ করলে তার বিচার হবে না তা হতে পারে না। আইন সবার জন্য সমান। বৃদ্ধার পরিবারের সাথে যে আচরণ করা হয়েছে তা অন্যায় ও অমানবিক। মুক্তিযোদ্ধার কন্যা হয়ে শাহানাজ পারভিন যে কাজটি করছে তা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য লজ্জাজনক। তিনি অচিরেই বৃদ্ধার পরিবারের চলাচলের জন্য রাস্তা বের করে দেয়ার সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। সময় নিউজ
আপনার মতামত লিখুন :