ডেস্ক রিপোর্ট : গত বছর মার্চে পাকিস্তানের হাতে বন্দি হওয়া ভারতের উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে ছেড়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন ‘শান্তি আর সৌজন্যের’ প্রতীক হিসেবেই ছাড়া হচ্ছে তাঁকে। কিন্তু পাকিস্তানের বিরোধী দলের এক সাংসদের দাবি, ভারতের হামলার ভয়েই অভিনন্দনকে ছেড়ে দেয় পাকিস্তান। এমনকি ভারত হামলা করতে পারে, এটা আন্দাজ করে সেনাপ্রধান ‘ভয়ে কাঁপছিলেন।’
ঘরে ঢুকে হামলা চালাতে পারে ভারত, এই আশঙ্কাতেই ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে ছেড়ে দিয়েছিল পাকিস্তান। পাক সংসদে এমনই জানিয়েছেন পাকিস্তান মুসলিম লিগের নেতা সর্দার আয়াজ সাদিক। ভারতকে পাকিস্তান যে কতটা ভয় পায় তা খোদ পাক সাংসদের এই স্বীকারোক্তিতেই স্পষ্ট।
পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার প্রতিশোধ নিতে ভারতীয় যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের বালাকোটে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে এয়ারস্ট্রাইক করে। একাধিক জঙ্গি ডেরা গুঁড়িয়ে দয় ভারতীয় বায়ুসেনা। অতর্কিতে চালানো ওই হামলায় বহু জঙ্গি নিহত হয়। তবে তাদের ভূখণ্ডে জঙ্গি ডেরা থাকার কথা অস্বীকার করে পাকিস্তান। বালাকোটে ভারতের এয়ারস্ট্রাইকের ঠিক পরের দিনই আকাশপথে ভারতে হামলার চেষ্টা চালায় পাকিস্তান।
পাকিস্তানকেও মোক্ষম জবাব দেয় ভারত। ধাওয়া করে পাক এফ-১৬ বিমান গুলি করে নামান ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। কিন্তু পাক বিমানকে ধাওয়া করতে গিয়ে পাকিস্তানের সীমান্ত পেরিয়ে চলে যান অভিনন্দন। পরে ভারতীয় বায়ুসেনার এই অফিসারকে আটক করে পাকিস্তান। অভিনন্দন বর্তমানকে আটক করা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় দুই দেশেই। পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে প্রবল চাপ দিতে শুরু করে ভারত।
জানা গিয়েছে, অভিনন্দন বর্তমান আটক হতেই কার্যত ঘুম উড়ে গিয়েছিল পাকিস্তানের। পাক সংসদে দাঁড়িয়ে পাকিস্তান মুসলিম লিগের নেতা সর্দার আয়াজ সাদিক জানিয়েছেন, সেই সময় পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার ঘোর অস্বস্তিতে পড়েছিলেন। এমনকী পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশিও ভয়ে কাঁপছিলেন। অভিনন্দন বর্তমানকে আটক করে রীতিমতো বিপাকে পড়েছিল পাকিস্তান, সংসদে ইমরান খানের সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে এমনই মন্তব্য করেন ওই বিরোধী নেতা।
ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান পাকিস্তানে আক হতেই জরুরি বৈঠকে বসে ইমরান খানের প্রশাসন। সেই বৈঠকে পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি, পাক সেনাপ্রধান বাজওয়া ছাড়াও বিরোধীদের তরফে বৈঠকে ছিলেন পাকিস্তান মুসলিম লিগের নেতা সর্দার আয়াজ সাদিক। তবে সেই বৈঠক এড়িয়ে যান পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
সংসদে দাঁড়িয়েই সেদিনের সেই বৈঠক প্রসঙ্গে পাকিস্তান মুসলিম লিগের নেতা সর্দার আয়াজ সাদিক বলেন, ‘‘অভিনন্দন বর্তমানকে নিয়ে সেদিনের বৈঠকে কথা হচ্ছিল। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আসেননি। সেনাপ্রধানের উপস্থিতিতেই বৈঠকে বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি বলেছিলেন, অভিনন্দনকে ছাড়তেই হবে। তা না হলে রাত ৯টার মধ্যেই পাকিস্তানে হামলা চালাবে ভারত।’’
জাতীয় সংসদে এক ভাষণে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (PML-N) নেতা আয়াজ সাদিক বলেন, অভিনন্দন বন্দি হওয়ার পর পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বলেছিলেন, “অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি না দিলে, ভারত পাকিস্তানের উপর হামলা করবে।” এ-ও বলা হয়েছিল, ওই দিন রাত ৯টার মধ্যে ভারত প্রত্যাঘাত করবে। এমন একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে দুনিয়া নিউজে।
পিএমএল-এন নেতার কথায়, “আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে কুরেশির ওই বৈঠকে ইমরান খান থাকতে অস্বীকার করেন। বৈঠকে এসেছিলেন পাক সেনাপ্রধান। তিনি তখন দরদর করে ঘামছেন, থরথর করে কাঁপছেন। বিদেশমন্ত্রী বৈঠকে উপস্থিত সকলের উদ্দেশে বলেন, ‘আল্লার দোহাই, অভিনন্দনকে যেতে দিন। না হলে রাত ৯টার মধ্যে ভারত পাকিস্তানের উপর হামলা চালাবে’।”
উল্লেখ্য, ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলাকে কেন্দ্র করে আচমকা ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়। জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করতে ভোররাতের অন্ধকারে পাকিস্তানের বালাকোটে, জঈশ-এ-মহম্মদের শিবিরে এয়ারস্ট্রাইক চালিয়েছিল বায়ুসেনা।
সূত্র- কলকাতা৭*২৪ ও খবর অনলাইন