আবুল বাশার: [২] ময়মনসিংহের ভালুকায় চাঞ্চল্যকর মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রব্বানী হত্যা মামলায় দুই কিশোরসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে থানাপুলিশ। ভালুকা মডেল থানা পুলিশ সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে।
[৩] গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নেত্রকোনা দুর্গাপুর বারমাড়ি লক্ষীপুর গ্রামের হারুন-অর-রশিদের ছেলে কারখানা শ্রমিক সোহেল রানা (১৯), ত্রিশাল নয়া পাড়ার আবদুল মতিনের ছেলে সাব্বির হোসেন (১৯), উপজেলার দক্ষিণ হবিরবাড়ি হামিদের মোড়ের সুজন ইসলামের ছেলে মো, নাঈম (১৯), একই এলাকার আবদুল আজিজের ছেলে মামুন-অর-রশিদ (১৬), শাজাহানের ছেলে মো. পারভেজ (১৯) ও জামিরদিয়া গ্রামের আবদুল মালেকের ছেলে রাব্বি (১৩)।
[৪] গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মাঝে রাব্বি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র এবং মামুন-অর-রশিদ ও মোঃ নাঈম দুজন মামাতো-ফুাফাতো ভাই বলে জানা গেছে।
[৫] মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেফতারকৃতরা ময়মনসিংহ চীফ জুটিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমাম হাসানের আদালতে ১৬৪ ধারায় ৬জনই খুনের স্বীকারোক্তি মূলক জবান বন্দি দেয়।
[৬] মামলা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েক দিন পূর্বে মামুনের কাছে থেকে রাব্বানী ১হাজার টাকা ঋণ করে। সেই ঋণের টাকা ফেরৎ নিয়ে দেই দিচ্ছি বলে রাব্বানী ঘোরাচ্ছিল। এ ছাড়াও রাব্বানীর সাথে প্রতিবেশি এক মেয়ে প্রেম ছিল। সেই মেয়েকে মামুনের ফুফাতো ভাই নাঈম খুব পছন্দ করতো। এ নিয়ে নাঈমের সাথে রাব্বানীর অন্তঃদ্বন্দ্ব চলছিল। ঘটনার দিন দুপুরে তারা রাব্বানীকে বাড়ি থেকে ফোন করে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে। রাব্বানী ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাকে ডেকে দুই স্কুল ভবনের মাঝখানের গলিতে নিয়ে ৭জন মিলে রাব্বানীকে মাটিতে ফেলে দেয়। পাশের সেলুন থেকে পূর্বেই সংগ্রহ করা ব্লেডের ভাঙা অর্ধেক অংশ দিয়ে রাব্বানীর গলায় নাঈম ৩টি পুস দিলে রক্তক্ষরণ হয়ে ঘটনাস্থলেই রাব্বানী মারা যায়। পরে লাশ গোপন করার জন্য আসামিরা ইট ভর্তি বস্তা দিয়ে নিহতের মুখ ঢেকে দেয়।
[৭] এর আগে নিহত রব্বানীর বাবা শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ছেলে হত্যার অভিযোগে ভালুকা মডেল থানায় মামলা করেন। সোমবার মামলাটি দায়ের করা হয়। এদিকে, মামলার দায়েরের পরপরই অভিযান নেমে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। এ ঘটনায় আরও একজন আসামী পলাতক রয়েছে তাকে ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
[৮] মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভালুকা মডেল থানার এস আই ইকবাল হোসেন জানান, মাদরাসা ছাত্র রব্বানী হত্যা মামলায় প্রথমে স্থানীয় একটি কারখানা থেকে শ্রমিক রানাকে এবং তার স্বীকারোক্তি মতে অন্যান্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ব্লেড ও ভিকটিম রব্বানীর খোয়া যাওয়া মোবাইলটি ফোনটিও স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে পুলিশ উদ্ধার করে।
[৯] ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন জানায়, মাদরাসা ছাত্র রব্বানী হত্যা ঘটনা তদন্তে ৭ জনের নাম এসেছে। তাদের মাঝে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতে তারা সকলেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। অপর আসামিকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।
[১০] গত রবিবার দুপুরে উপজেলার হাবিরবাড়ি ইউনিয়নের জামিরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে দিনে দুপুরে গলাকেটে হত্যা করা হয় জামিরদিয়া আইনুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র রব্বানীকে (১২)। সে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার যোগানীয়া ইউনিয়নের কাপাসিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে। তারা জামিরদিয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এমদাদুল হক মাস্টারের বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করেন এবং বাবা মোঃ শফিকুল ইসলাম জামিরদিয়া মোড়ে রেডিও টেলিভিশনের মেরামতের কাজ করে ও মা হেনা স্থানীয় ওরিয়ন মিলে চাকুরী করেন। রব্বানী তাদের একমাত্র সন্তান। বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। সম্পাদনা: হ্যাপি