নিউজ ডেস্ক : নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) কারণে ৬৫ দিন বন্ধ থাকার পর গত রোববার থেকে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে আবারো লেনদেন শুরু হয়। লেনদেন শুরুর দিনে সূচকে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও এর পরের দুই কার্যদিবসে টানা দরপতন চলছে। মূলত বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপে সোম ও মঙ্গলবার দুদিনে পুঁজিবাজারে ৯১ পয়েন্ট হারিয়েছে সূচক। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার বিষয়টিও বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। বণিক বার্তা
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বাজার বন্ধ থাকার কারণে দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অনেকেই তাদের প্রয়োজনে শেয়ার বিক্রি করতে পারেননি। রোববার বৈশ্বিক পুঁজিবাজার বন্ধ থাকায় দেশের বাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করতে দেখা যায়নি। কিন্তু সোমবার থেকে বৈশ্বিক পুঁজিবাজার চালু হওয়ার পর দেশের বাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়েছে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে বহুজাতিক ও মৌলভিত্তির বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ার থাকে। ফলে তারা যখন পোর্টফোলিওতে থাকা এসব কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল লেনদেন শুরুর পর থেকেই সূচক কমতে থাকে, যা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। অবশ্য শেষ দিকে শেয়ার কেনার চাপ বাড়ায় সূচক কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। গতকাল দিন শেষে ডিএসইএক্স প্রায় ৩০ পয়েন্ট কমে ৩ হাজার ৯৭০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা এর আগের কার্যদিবসে ছিল ৩ হাজার ৯৯৯ পয়েন্টে। গতকাল দেশের পুঁজিবাজারে সূচক পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও বেক্সিমকো লিমিটেডের। এর মধ্যে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ১ দশমিক ৮, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ৪ দশমিক ৮ এবং বেক্সিমকো লিমিটেডের ৭ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে।
গতকাল ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস প্রায় ১০ পয়েন্ট কমে দিন শেষে ৯২০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিন যা ছিল ৯৩০ পয়েন্টে। ডিএসইর ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে প্রায় ১৭ পয়েন্ট কমে গতকাল ১ হাজার ৩৩১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিন শেষে যা ছিল ১ হাজার ৩৪৭ পয়েন্টে। বড় মূলধনি কোম্পানির সূচক সিডিএসইটি ৭ পয়েন্ট কমে ৭৮৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা এর আগের কার্যদিবসে ছিল ৭৯৩ পয়েন্টে।
গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে মোট ১৫৫ কোটি ২০ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ১৯৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৯৪টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ১২টির, কমেছে ৫৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২২৯টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৪৯ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ওষুধ খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ করে দখল নিয়েছে ব্যাংক ও টেলিযোগাযোগ খাত। আর ৭ শতাংশ দখলে নিয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো লিমিটেড, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, মুন্নু সিরামিকস, এক্সিম ব্যাংক, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক।
দর বাড়ার শীর্ষ কোম্পানির তালিকায় ছিল আইসিবি সোনালী ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, এক্সিম ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, যমুনা অয়েল ও বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড।
অন্যদিকে দরপতনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো লিমিটেড, এসিআই ফরমুলেশনস, একমি ল্যাবরেটরিজ, বিডি ওয়েল্ডিং, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, শাহাজীবাজার পাওয়ার, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস ও সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস।
দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল সিএসসিএক্স সূচক দিনের ব্যবধানে প্রায় ৫০ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৮২৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৮৭৩ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ১২৮টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০টির, কমেছে ৩০টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৮৮টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে ৫৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৫৫ কোটি ১০ লাখ টাকা।