মুসবা তিন্নি : আগের দিনে পরিবারে অনেক ভাইবোন থাকায় এবং সংসারের নানা ব্যস্ততায় মা-বাবার পক্ষে ছেলেমেয়েদের অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া অনেক সময় সম্ভব হতো না। ছোট শিশুরা পরিবারের অন্য ভাইবোনদের সঙ্গে থাকতে থাকতেই সবকিছু শিখে নিত। এখন পরিবারে সন্তানের সংখ্যা কম। বাবা-মায়েরা স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি সচেতন থাকেন, যাতে কোনোভাবেই সন্তানের পরিচর্যায় কোনো ঘাটতি না হয়। কখনো কখনো এই যত্ন-আত্তি এত অতিরিক্ত হয়ে যায় যে তা শিশুর জন্য বিপত্তিই বয়ে আনে। যেমন ..
১.খাবার নিয়ে বাড়াবাড়ি : জন্মের পর ছয় মাস শিশুকে শুধু মায়ের দুধ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা এর ওপর খুব একটা নির্ভর করতে পারেন না। সন্তানের পুষ্টি ঠিকমতো হচ্ছে না, এই আতঙ্কে চিনির পানি, গ্লুকোজ, টিনের দুধ ইত্যাদির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ফলে শুরু হয় পেটফাঁপা, পায়খানা কষা, বমি, জন্ডিসসহ নানান বিপত্তি। সবচেয়ে খারাপ হলো, এর ফলে শিশু ধীরে ধীরে মায়ের দুধ খাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তারপর একটু বড় শিশুকে বাড়িতে তৈরি খাবারের পরিবর্তে বাজারজাত কৌটার খাবার, সিরিয়াল, বেবি ফুড ইত্যাদি খাওয়াতে আগ্রহ দেখা যায়। অভিভাবকদের ধারণা, বিদেশি ও দামি এসব খাবারে নিশ্চয়ই পুষ্টি বেশি, শিশু বাড়ে দ্রুত। এই অভ্যাস বাচ্চাকে বাড়িতে তৈরি করা পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাবার থেকে বিমুখ করে বাইরের খাবারে আসক্ত করতে সাহায্য করে। এর ফলাফল স্থূলতা, রক্তশূন্যতাসহ নানা জটিলতা।
২.বেশি খাওয়ানোর প্রবণতা : আজকাল মায়েদের জীবনের একটাই লক্ষ্য, যে করেই হোক, শিশুকে একটু বেশি খাওয়ানো। তার জন্য জোরজবরদস্তি, নাচ-গান, ঘুমের মধ্যে খাওয়ানো থেকে শুরু করে মুঠোফোন, কার্টুন ইত্যাদি নানা আয়োজন করা হয়। এতে শিশু আসক্ত হয়ে পড়ে মুঠোফোন বা কার্টুনে, না দিলে চিৎকার-চেঁচামেচি করে, আর খেতে চায় না। তার মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, ভাবের আদান-প্রদান কমে যায়, কথা বলতে দেরি করে।
৩.শিশুকে কর্মহীন করা : মমতাময়ী অভিভাবকেরা এখন শিশুদের কোনো রকম কষ্ট করাতে রাজি নন। ছোট মানুষ, কষ্ট হবে, পারবে না, নষ্ট করবে—এসব অজুহাতে বড়রা তাদের সবকিছুই করে দেন। যথেষ্ট বড় হওয়ার পরও মা খাইয়ে দেন। স্কুলের ব্যাগ বহন করতে দেন না। জামাকাপড় পরিয়ে দেন। ফলে শিশু কিছুই শেখে না, কর্মদক্ষতারও বিকাশ হয় না।
৪.কোনো কিছুতে বাড়াবাড়ি নয় : শিশুকে ভালোবাসা, আদর, সাহায্য-সহযোগিতা অবশ্যই করতে হবে, তবে কোনো কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি ভালো নয়। সন্তানের স্বাভাবিক বিকাশ নিশ্চিত করুন। কোনো কিছু চাপিয়ে দেবেন না। তাকে নিজের কাজ নিজে করতে দিন, ভুল হলে সংশোধন করুন।