ড. অনুপম সেন : ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক সামসুল হকসহ সকল নেতৃবৃন্দকে স্মরণ করছি। এছাড়া হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় চার নেতাসহ স্বাধিকার আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও গণতন্ত্রের সংগ্রামে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের ভুমিকা অসামান্য। বাঙালি জাতির মুক্তি ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ভূখন্ডে যা কিছু বিশাল অর্জন, সবই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে।

আরো পড়ুন : আবারো লড়াইয়ে নামছেন খালেদার আইনজীবীরা

আওয়ামী লীগের ইতিহাস মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের আত্মপরিচয়ের সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯৫২’র ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২-এর আইয়ুবের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৪’র দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানসহ সকল আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগ দেশের মাটি ও মানুষের দল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক এবং মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্বদানের সুমহান গৌরবের অধিকারী। ১৯৭০-এর নির্বাচনে বাঙালি জাতি আওয়ামী লীগের পক্ষে নিরঙ্কুশ রায় দেয়।

যার ধারাবাহিকতায় ১৯৭১’র ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু করে ইতিহাসের নির্মমতম গণহত্যা। গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। গ্রেফতারের পূর্বে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন ইপিআর-এর ওয়ারলেসের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়। ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে এই সরকার শপথ গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত সফল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের ফসল-স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।

আরো পড়ুন : আওয়ামী লীগকে হারাতে আওয়ামী লীগই যথেষ্ট

সদ্য স্বাধীন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে যখন জাতির পিতা তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরের সংগ্রামে নিরন্তর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তখনই ঘাতকেরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে ৩ নভেম্বর কারাগারে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে আবারও রাষ্ট্র্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সফলভাবে রাষ্ট্র্র পরিচালনা করে। উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ সরকারই খাদ্য ঘাটতির দেশ বাংলাদেশকে খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত করে। আওয়ামী লীগ সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পায়। ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

কারও মধ্যস্থতা ছাড়াই স্বাক্ষরিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি। আওয়ামী লীগের এই নয় বছরের শাসনামল ছিল জাতীয় ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ¦ল সময়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অপশাসন, দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে পুনরায় বিজয় অর্জন করে। ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার গত সাড়ে ৯ বছরে দেশের কৃষি, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কূটনৈতিক সাফল্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ প্রতিটি খাতে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি বাংলাদেশ।

আরো পড়ুন : অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয় দিলে ভরাডুবি হবে নৌকার : তৃণমূল নেতারা

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। দারিদ্র্যের হার কমে এখন ২২ শতাংশ। মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। ‘আমাদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৭৫২ মার্কিন ডলার। রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ৫ কোটির বেশি মানুষ নিম্ন আয়ের স্তর থেকে মধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দেশ খাদ্যে স¦য়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে। সাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ৬৭ লাখ মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন ধরনের ভাতা পাচ্ছেন।

দেশের ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায়। মানুষ বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ঔষধ পাচ্ছেন। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭২ বছর। মোবাইল ফোন প্রত্যেকের হাতে হাতে, এমনকি ভিডিও কলেও কথা বলার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকার।  সারাদেশে সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার, পাতাল সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রেল, নৌ ও যোগাযোগসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে। ‘আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করছি।

পরিচিতি : উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য, আওয়ামী লীগ / মতামত গ্রহণ : মো.এনামুল হক এনা / সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

আরো পড়ুন : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ১০