শিরোনাম
◈ পিআর পদ্ধতি কী, কেন প্রয়োজন ও কোন দেশে এই পদ্ধতি চালু আছে?" ◈ ইসরায়েলি হামলায় ৪৩৭ ফুটবলারসহ ৭৮৫ ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদের মৃত্যু ◈ পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলিদের সাথে তাদেরই সেনা জড়ালো সংঘর্ষে! (ভিডিও) ◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি

প্রকাশিত : ২৩ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৩:৫২ রাত
আপডেট : ২৩ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৩:৫২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাতের শব্দসন্ত্রাস বন্ধ হবে কবে ?

ওয়াসিম ফারুক : গত বছর জানুয়ারি মাসের কোন এক রাতে, আমাদের মহল্লার সরকারি দলের স্থানীয় নেতার ছোট ভাইয়ের বিয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছিল, বেশ জমকালো ভাবে আয়োজন করা হয়ে ছিল। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল গান আর বাদ্যযন্ত্রের মাত্রাতিরিক্ত শব্দ। নানান রোগে আক্রান্ত আমার বয়োঃবৃদ্ধ মা সেই সাথে ছোট ভাইয়ের দুই বছরের ছোট ছেলে গান আর বাদ্যযন্ত্রের শব্দে একেবারেই কাবু হয়ে গিয়েছিলেন। গান আর বাদ্যযন্ত্রের শব্দ কিছুটা কমানোর অনুরোধের জন্য অনেকটা সাহস করেই ঘর থেকে বের হয়ে গেলেও অনুষ্ঠানের পরিবেশ দেখে টু শব্দ না করেই বাসায় ফিরতে হয়েছিল। এর পর কোনো উপায়ন্ত না পেয়ে স্থানীয় থানায় বিনয়ের সুরে এই সমস্যার কথা বলি। থানাতে কর্তব্যরত যিনি ফোন ধরেছিলেন, তিনি আমার বিনীত অনুরোধে ঐ নেতার বাড়ির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের শব্দ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বন্ধ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন। ত্রিশ মিনিটের মধ্যে গান আর বাদ্যযন্ত্রের ঐ শব্দ থেকে আমার পরিবারে ভুক্তভোগীদেরসহ আশেপাশের সবাইকে মুক্তি দিতে পেরেছিলেন। ঐ রাতে আমার মহল্লার নিরীহ মানুষেরা কোনো অঘটন ঘটা ছাড়াই মুক্তি পেয়ে ছিল ঐ শব্দ সন্ত্রাসের হাত থেকে।

তবে রাজধানীর আর কে মিশন রোডের অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা নাজমুল হককে জীবন দিতে হলো, তেমনই একটি অনুষ্ঠানের শব্দ সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করায়। তিনি যে বাসায় থাকতেন, সেটির ছাদে ফ্ল্যাট মালিকদের কমিউনিটি হলে বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি ২০১৮) রাতে গায়েহলুদের এক অনুষ্ঠানে উচ্চ শব্দে গান বাজনা চলছিল। এতে সদ্য ওপেন হার্ট সার্জারি রোগী নাজমুল হকের সমস্যা হচ্ছিল। তিনি নিচে গিয়ে কেয়ারটেকারকে সমস্যার কথা জানালে ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেনের সঙ্গে তার বাগবিত-তা হয়। পরে আলতাফ হোসেন যদিও উচ্চ শব্দের গান বাজনা বন্ধ করেন কিন্তু তার মনের ক্ষোপ কোনোভাবেই কমেনি। পরের দিন সকাল এগারোটার দিকে কেয়ারটেকারকে দিয়ে নাজমুল হকের ছেলে নাসিমুল হককে নিচে ডেকে পাঠান। ছেলের সাথে বাবা নাজমুল হকসহ পরিবারের অন্যরাও নীচে নেমে আসেন। ক্ষিপ্ত আলতাফ হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা নাসিমুল নিচে আসা মাত্রই অনাকাঙ্খিত হামলা চালায় নাসিমুলের উপর।

ছেলের জীবন রক্ষায় অসুস্থ বাবা এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করা হয়। এতে তিনি পড়ে গিয়ে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায় নাজমুল হক । বিয়ে, গায়েহলুদ, জন্মদিন, ৩১ ডিসেম্বর, বিবাহ বার্ষিকী এমনকি সুন্নতে খাতনার অনুষ্ঠানেও গভীর রাত এমন কি শেষ রাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে গান ও বাদ্যযন্ত্রে যন্ত্রণার মুখোমুখি হতে হয় প্রায় প্রতিটি নগরবাসীকে। কখনো প্রতিবাদ করলে হিতে বিপরিত হওয়াটাই আমাদের সমাজ তথা রাষ্ট্রের নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তাই প্রতিটি সময়ই এধরনের নির্যাতন মেনে নিতে হয় আমাদের নিরীহ নগরবাসীকে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে, এই ধনের শব্দ সন্ত্রাসের জন্য আমাদের দেশে কি কোন আইন নেই? অবশ্যই আমাদের দেশে শব্দ নিয়ন্ত্রণ আইন এবং আইন প্রয়োগের জন্য কর্তৃপক্ষ আছে। শুধু নেই তাদের কোনো কার্যক্রম। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬ এ বিভিন্ন এলাকায় শব্দের মানমাত্রা উল্লেখ আছে।

বিধিমালা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতের বেলায় সর্বোচ্চ ৪৫ ডেসিবেল শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। ওই বিধিমালা অনুযায়ী, খোলা জায়গায়, বিয়ে বা কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, কনসার্ট, রাজনৈতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান, যাত্রানুষ্ঠানে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম করতে পারে। তবে এসব অনুষ্ঠান কোনো আবাসিক এলাকায় করা যাবে না। এসব অনুষ্ঠান করতে গেলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে অনুমতি নিতে হবে। এসব অনুষ্ঠানে শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম করা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে অনুষ্ঠানগুলো অবশ্যই রাত ১০টার মধ্যে শেষ করতে হবে। অথচ রাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে যে উচ্চ শব্দে গানবাজনা হয়, তা ৮০ ডেসিবেলের নিচে কখনোই নয়। যে যার ইচ্ছামতো এসব যতক্ষন খুশি গান ও বাদ্য যন্ত্র বাজিয়ে যাচ্ছে।

আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের দাবি, ঘরে-ঘরে আজ এই ধরনের অনুষ্ঠান, আর তাদের যে লোক বল তা দিয়ে এধরনের অনুষ্ঠান নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয় । আমিও তাদের দাবির সাথে একমত। আমরা আমাদের নানান পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে আনন্দ অবশ্যই করবো, তবে সেই আনন্দ হতে হবে নির্মল বিনোদন। আমার আনন্দ অন্যের জন্য বিরক্তের বা ক্ষতির কারণ হবে এটা কখনোই করা উচিত নয়। এমন কি কারো কাম্য ও নয় । কিন্তু আজ কেন জানি আমরা বড়ই স্বার্থপর হয়েগেছি। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনের কাছে অন্যের ন্যায় সঙ্গত প্রয়োজন ও অর্থহীন। নাজমুল হক সাহেবের মৃত্যু আমাদের সমাজের জন্য আমাদের বিবেকের জন্য অবশ্যই লজ্জাজনক। আমরা চাইবোনা এই ধরনের উশৃঙ্খলার প্রতিবাদ আর কোনো নাজমুল হককে করতে হয়, আর কোনো নাজমুল হককে যেন এভাবে জীবন দিতে না হয় ।

লেখক : কলামিস্ট
সম্পাদনা : গাজী খায়রুল আলম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়