ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ: হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে যখন বিছানায় শুতে যেতেব, নিজের উভয় হাতের তালু একত্রে মিলিয়ে তাতে সূরা, কুল হু আল্লাহু আহাদ,কুল আউউযু বি রাব্বিল ফালাক এবং কুল আউউযু বি রাব্বিন নাস পড়ে ফু দিতেন। অতপর তিনি নিজের হাতের তালুদ্বয় সমস্ত দেহে তা যতদুর পৌছতে সক্ষম ফিরাতেন। প্রথমে মাথায়, অতঃপর মুখমণ্ডলে, তারপর দেহের সামনের ভাগে। তিনি এভাবে তিনবার করতেন। [সহীহ বুখারী ও মুসলিম ]
কালামে ইলাহীর শব্দভাণ্ডারে, তাঁর উচ্চারনে এবং এর বিষয়বস্তু সব কিছুর মধ্যেই কল্যাণ, প্রাচুর্য ও বরকত লুকিয়ে আছে। এর সম্পূর্ণটাই বরকত আর বরকত, কল্যাণ আর প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে আল্লাহর কালাম বুঝতেন এবং তদানুযায়ী কাজ করতেন এবং এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অনুযায়ী সমগ্র পৃথিবীতে আল্লাহর কালেমাকে সমুন্নত করার জন্য আপ্রান চেষ্টা করতেন, অনুরূপভাবে তিনি কালামে ইলাহীর মধ্যে নিহিত অন্যান্য বরকতও লাভ করার চেষ্টা করতেন। যেমন, কুরআনের আয়াত পড়ে পানিতে ফু দেয়া এবং নিজে পান করা বা অন্নকে পান করানো, তা পড়ে হাতে ফু দেয়া অতঃপর তা দেহে মর্দন করা- এভাবে তিনি কুরআনের বরকতের প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য কোন দিকই ছাড়তেন না। আজো যদি কোন ব্যক্তি এরূপ করে তবে করতে পারে এবং এটাও বরকতের কারন হবে। তবে একথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, এই বরকতের ফায়দা কেবল এমন ব্যক্তিই লাভ করতে পারে, যে কুরআনের বাহ্যিক দিকের সাথে সাথে এর বাতেনি দিকের সাথেও সম্পর্ক বজায় রাখে। যদি কোন ব্যক্তি কুরআনের উদ্দেশ্যের বিপরীত জীবন যাপন করে, আবার সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পড়ে নিজের বুকে ফুক দেয়, তাহলে প্রশ্ন জাগে- সে অবশেষে কোন ধরনের বিপর্যয় ও অনিষ্ট থেকে পানাহ চাচ্ছে? সে যে সুদ খেয়ে সমাজের অনিষ্ট সাধন করেছে- এখন পুলিশ বাহিনী যেন তাঁকে গ্রেপ্তার না করে- এজন্য আশ্রয় প্রার্থনা করছে? এই জন্য একথা ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে, যে ব্যক্তি বাস্তব ক্ষেত্রে কুরআনের লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করছে কেবল সে-ই এর বরকত ও কল্যাণ লাভ করতে সক্ষম হবে। এরপর কুরআনের শব্দগুলোর মধ্যে যে বরকত রয়েছে তা সে অনায়াসে লাভ করতে পারবে। কিন্তু যে ব্যক্তি রাত দিন কুরআনের বিরুদ্ধে লড়ছে এবং নিজের কথায় ও কাজে কুরআনের নির্দেশের পরিপন্থী কাজ করছে তাঁর জন্য এই বরকত ও কল্যাণ হতে পারে না। [তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা- ১৫৪]
কুরআনের প্রতিটি অক্ষরের বিনিময়ে দশ নেকী: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ পাঠ করে তাঁর জন্য এর বিনিময়ে একটি করে নেকী রয়েছে। ( কুরআনে এই মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে যে ) প্রতিটি নেকীর বিনিময়ে দশগুন সওয়াব রয়েছে। আমি একথা বলছি না যে, ‘আলিফ, লাম, মীম’ একটি হরফ। বরং এলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ। [তিরমিযি, দারেমী]
অর্থাৎ ‘আলিফ- লাম- মীম’ কয়েকটি হরফের সমন্বয়। প্রতিটি অক্ষরের বিনিময়ে একটি করে নেকী রয়েছে এবং প্রতিটি নেকীর বিনিময়ে দশগুন পুরস্কার রয়েছে।