শিরোনাম
◈ চশমা ছাড়াই স্পষ্ট দেখা সম্ভব, কার্যকর আই ড্রপ উদ্ভাবন ◈ যেসব বিষয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে নতুন বেতন কাঠামোতে  ◈ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে ইসরা‌য়েল‌কে বহিষ্কারের দাবি জানা‌লেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী ◈ কূটনৈতিক সংকট ছাপিয়ে বাণিজ্যে ভারত–বাংলাদেশের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বাড়ছে ◈ বিএনপিকে চাপে রাখতে জামায়াতের যুগপৎ আন্দোলন ◈ এই সরকারও পুরোনো পথে, প্রশাসনে পদ ছাড়াই পদোন্নতি ◈ এ‌শিয়া কাপ, রা‌তে আফগানিস্তা‌নের মু‌খোমু‌খি বাংলাদেশ ◈ ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম: হিজাব–নন-হিজাব, সবার পোশাক ও পরিচয়ের সমান অধিকার নিশ্চিত হবে ◈ সঙ্কটে এশিয়া কাপ! দা‌বি না মান‌লে, প‌রের ম‌্যাচ আরব আ‌মিরা‌তের বিরু‌দ্ধে খেল‌বে না পাকিস্তান ◈ হ্যান্ডশেক বিতর্কে এবার মুখ খুললেন সৌরভ গাঙ্গু‌লি

প্রকাশিত : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৬:৩২ বিকাল
আপডেট : ২৫ এপ্রিল, ২০২৫, ০৮:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সচিবালয় আগুনের রহস্যজট খোলেনি, আরও ডালপালা মেলেছে, তদন্ত প্রতিবেদন জমা সোমবার

মহসিন কবির:: বাংলাদেশ সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার রহস্যের জট খোলেনি চার দিনেও। এটি পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড নাকি দায়িত্বহীনতা, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কেউ কেউ বলছেন, পরিকল্পিত নাশকতা। তবে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন কেউ কেউ।

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আজাদ মজুমদার বলেন, ‘সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন আগামীকাল প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হবে।’ তদন্ত প্রতিবেদন কি প্রকাশ করা হবে কিনা- এমন প্রশ্নে আজাদ মজুমদার বলেন, এটা প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হবে। প্রকাশ করার বিষয়ে তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সচিবালয়ে গত ছয় বছরে পাঁচটি অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে চারটিই ঘটেছে শর্টসার্কিট থেকে। একটি ঘটেছে গ্যাসের লাইন থেকে। অথচ এসব অগ্নিকাণ্ডে প্রতিটির ক্ষতি ও ভয়াবহতা খুবই সামান্য এবং টাকার অংকে গণনার মতো নয়। রাজনৈতিক দল ও ছাত্র-আন্দোলনের নেতারা বলেছেন, এটি পরিকল্পিত আগুন। এ ক্ষেত্রে বলা যায় যে, সচিবালয়ের ভেতরে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যর্থতা যেমন ছিল, তেমনি তৃতীয় কোনো পক্ষ সুযোগ নিতে পারে।

সচিবালয়ে আগুন লাগার কারণ উদ্ঘাটন এবং সবিচালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে সুপারিশ করতে আট সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যতম সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যায়ের কেমিক্যাল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ইয়াছির আরাফাত খান গতকাল রাতে বলেন, তদন্তের কাজ আমরা করছি। শনিবারও (গতকাল) আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। আমরা প্রত্যক্ষদর্শীসহ দায়িত্বপালনকারীদের বক্তব্য নিয়েছিল। আমরা সব দিক বিবেচনায় নিয়েই তদন্তকাজ করছি।’

আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ বলেছেন, ‘দুর্ঘটনাজনিত শর্টসার্কিট হতে পারে, আরেকটি পরিকল্পিতভাবে শর্টসার্কিট দিয়ে আগুন সৃষ্টি করা যেতে পারে। এই আগুন দেখে মনে হচ্ছে না, স্বাভাবিক শর্টসার্কিট থেকে এটা হয়েছে। পরিকল্পিত শর্টসার্কিটের জন্য ওই ছয়তলায় থাকতে হবে না। আগে থেকে পরিকল্পনা করে দুটি বৈদ্যুতিক তার একসঙ্গে লাগিয়ে বারুদ, গানপাউডার কিংবা কেমিক্যাল রেখে নিচে বৈদ্যুতিক প্লাগ অন করলে বৈদ্যুতিক স্পার্কের কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে।’

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের আরেকজন সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ খান বলেছেন, সচিবালয়ে আগেও একাধিকবার আগুন লেগেছে। এ নিয়ে পিডাব্লিউডি কাজও করেছে। আবার কেন তাহলে আগুন লাগল? আমরা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি- এভাবে কখনও দুর্ঘটনার আগুন লাগে না। দুর্বৃত্তরা যখন আগুন লাগায়, তখন একসঙ্গে একাধিক স্থানে আগুন লাগে। এটা শর্টসার্কিট না, আগুন লাগানো হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট এক বিশেষজ্ঞ বলেন, ৯ তলা ভবনের ৭ তলা, ৬ তলা এবং ৮ তলায় পৃথক তিন স্থানে একই সময়ে আগুনের লেলিহান শিখা দেখা গেছে। শর্টসার্কিটের ঘটনা ঘটলে সেই আগুন একই ফ্লোরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়বে। আগুন এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে একই সময়ে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ নেই। কারণ সচিবালয়ের ভবনগুলোতে প্রতিটি ফ্লোরে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পৃথকভাবে সার্কিট ব্রেকার বসানো রয়েছে। ইচ্ছা করলে যে কেউ একটা ফ্লোরের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ও চালু করতে পারবে। শর্টসার্কিট হলে নির্দিষ্ট ওই ফ্লোরেই আগুন একই সময় ছড়িয়ে পড়বে। অন্য ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ নেই।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, সচিবালয়ের পুরনো কোনো ভবনই অগ্নিঝুঁকিমুক্ত নয়। মাঝেমধ্যেই আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। তবে সেগুলোতে বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। এর আগে গত ১ আগস্ট সচিবালয় ক্লিনিক ভবনে (৯ নম্বর ভবন) নিচতলায় সিঁড়িকোঠায় বিদ্যুতের মেইন ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ডে শর্টসার্কিট থেকে (এমডিবি) আগুন লাগে। তবে সচিবালয়ের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাৎক্ষণিক আগুন নিভিয়ে ফেলেন। ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি সচিবালয়ে ৬ নম্বর ভবনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অগ্নিকাণ্ড হয়। ৬ নম্বর ভবনের সপ্তম তলায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৬০৬ নম্বর কক্ষে ফলস সিলিংয়ের সঙ্গে থাকা টিউব লাইটের স্টার্টারে আগুন লাগে। এতেও কোনো ক্ষতি হয়নি।

এর আগে ২০১৯ সালের ৭ জুলাই সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সপ্তম ও অষ্টম তলার মাঝামাঝি স্থানে বৈদ্যুতিক বোর্ডরুমে শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে। গ্যাস সরবরাহ লাইন থেকে ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর সচিবালয়ের ক্লিনিকের পেছনে গণমাধ্যম কেন্দ্রের সামনে উত্তর দিকের দেয়ালে আগুন লাগে। সেই ঘটনায় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ৪ নম্বর ভবনের সপ্তম তলায় ৬২৯ নম্বর কক্ষে শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগে।

ফায়ার সার্ভিসের সূত্র জানায়, বিগত ছয় বছরে সচিবালয়ে পাঁচটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডের কোনাটাই বড় আকারে ছড়ায়নি। গ্যাস লাইনের দুর্ঘটনা ছাড়া বাকি চারটি ঘটনায় আগুনের সূত্রপাত হয়েছে শর্টসার্কিটের মাধ্যমে। এসব ঘটনায় উল্লেখ করার মতো ক্ষতিও হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়