ভারতের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় গোপনে স্মার্টফোন নির্মাতাদের নির্দেশ দিয়েছে, নতুন সব ডিভাইসে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সাইবার নিরাপত্তা অ্যাপ প্রি-ইনস্টল করে দিতে হবে। অর্থাৎ, ভারত সরকার নির্দেশিত এই অ্যাপটি ফোনে বিল্ট–ইন অবস্থায় রাখতে হবে। এই অ্যাপ মুছে ফেলার সুযোগও থাকবে না। সরকারি আদেশটি দেখায় যে, বিষয়টি নিঃসন্দেহে অ্যাপলসহ গোপনীয়তা-সংশ্লিষ্ট মহলের আপত্তির মুখে পড়তে পারে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে সাইবার অপরাধ ও হ্যাকিং বেড়ে যাওয়ায় ভারত এমন পথে হাঁটছে, যেমনটি বিশ্বের নানা দেশ অনুসরণ করেছে। সর্বশেষ রাশিয়াও এই পথে হেঁটেছে। চুরি যাওয়া ফোন ব্যবহার করে প্রতারণা ঠেকানো বা রাষ্ট্র-নির্দেশিত সেবা প্রচারে বাধ্যতামূলক অ্যাপ ইনস্টলের নিয়ম এর অংশ।
অ্যাপলের সঙ্গে অতীতে ভারতের টেলিকম নিয়ন্ত্রক অ্যান্টি-স্প্যাম অ্যাপ নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়েছিল। এবার অ্যাপলও নতুন আদেশের আওতায় পড়েছে। স্যামসাং, ভিভো, অপ্পো ও শাওমি প্রভৃতি সংস্থাও এতে অন্তর্ভুক্ত।
গত ২৮ নভেম্বর জারি হওয়া এই নির্দেশনা স্মার্টফোন কোম্পানিগুলোকে ৯০ দিনের সময় দিয়েছে। এর মধ্যে নতুন সব ডিভাইসে সরকারের ‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপ প্রি-ইনস্টল করতে হবে এবং ব্যবহারকারীরা এটি বন্ধ বা অপসারণ করতে পারবে না।
নির্দেশনাটি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি; নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানিকে ব্যক্তিগতভাবে পাঠানো হয়েছে। প্রযুক্তি-আইন বিশেষজ্ঞদের একজন জানিয়েছেন, ভারতের এই পদক্ষেপ উদ্বেগ সৃষ্টি করবে। ইন্টারনেট অধিকারকর্মী মিশি চৌধুরী জানান, ‘সরকার কার্যত ব্যবহারকারীর সম্মতিকেই অর্থহীন করে ফেলছে।’ এ ধরনের বাধ্যতামূলক অ্যাপ ইনস্টল করার নির্দেশ দিয়ে গত আগস্টে রাশিয়া সমালোচনার মুখে পড়েছিল।
বিশ্বের বৃহত্তম মোবাইল বাজারগুলোর একটি ভারত। এখানে ১২০ কোটির বেশি গ্রাহক। সরকারি তথ্য বলছে, জানুয়ারিতে চালু হওয়া অ্যাপটি এখন পর্যন্ত ৭ লাখের বেশি হারানো ফোন উদ্ধার করতে সাহায্য করেছে; শুধু অক্টোবরেই ৫০ হাজার ফোন ফিরে এসেছে।
ভারত সরকার জানিয়েছে, ডুপ্লিকেট বা নকল আইএমইআই নম্বরের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক অপব্যবহার ও প্রতারণার মতো গুরুতর সাইবার ঝুঁকি মোকাবিলায় অ্যাপটি অপরিহার্য।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের মতে, ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের সাড়ে ৭৩ কোটি স্মার্টফোনের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশে অ্যাপলের আইওএস ছিল; বাকি সবই অ্যান্ড্রয়েডভিত্তিক।
অ্যাপল নিজের অ্যাপ প্রি-ইনস্টল করে ঠিকই, কিন্তু তাদের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো সরকারি বা তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ বিক্রির আগে ফোনে দেওয়া যায় না। বিষয়টি সরাসরি জানেন এমন একজন সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কাউন্টার পয়েন্টের গবেষণা পরিচালক তরুণ পাঠক বলেন, ‘অ্যাপল ইতিহাসে কখনো এ ধরনের অনুরোধ সহজে মানেনি। সম্ভবত তারা সমঝোতার চেষ্টা করবে। বাধ্যতামূলক প্রি-ইনস্টলের বদলে ব্যবহারকারীকে অ্যাপ ইনস্টলে উৎসাহিত করার প্রস্তাব দিতে পারে।’
অ্যাপল, গুগল, স্যামসাং ও শাওমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। ভারতের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ও সাড়া দেয়নি।
অ্যাপটির মূল উদ্দেশ্য হলো সব টেলিকম নেটওয়ার্কে হারানো বা চুরি যাওয়া ফোন ব্লক ও ট্র্যাক করা। এটি ব্যবহারকারীদের প্রতারণামূলক সংযোগ শনাক্ত ও বিচ্ছিন্ন করতেও সাহায্য করে। চালুর পর থেকে অ্যাপটি পাঁচ মিলিয়নের বেশি বার ডাউনলোড হয়েছে। এটি ৩৭ লাখের বেশি হারানো বা চুরি যাওয়া ফোন ব্লক করতে সাহায্য করেছে, আর ৩ কোটি প্রতারণামূলক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সরকার বলছে, অ্যাপটি সাইবার হুমকি প্রতিরোধে সহায়ক এবং হারানো ফোন শনাক্ত ও ট্র্যাক করতে পুলিশকে সহযোগিতা করে। একই সঙ্গে কালোবাজারে নকল ডিভাইস ঢোকার পথও বন্ধ করে।
সূত্র: আজকের পত্রিকা