শিরোনাম
◈ কালকের মধ্যে জুলাই সনদের আদেশ না হলে ১১ নভেম্বর ঢাকায় জনস্রোত হবে: ইসলামি ৮ দলের হুঁশিয়ারি ◈ পুঁজিবাজারে বড় ধাক্কা: একীভূত প্রক্রিয়ায় পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের লেনদেন স্থগিত ◈ আমরা সরকারের চালাকি বুঝি, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করব, ঘি আমাদের লাগবেই: ডা. তাহের ◈ বিএনপিতে যোগদান নিয়ে যা জানালেন স্নিগ্ধ ◈ সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে জামিন দিল হাইকোর্ট ◈ সিরীয় বংশোদ্ভূত জোহরান মামদানির স্ত্রী রামা দুয়াজি এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনায় ◈ জুলাই চার্টার নিয়ে রাজনৈতিক বিভাজন গভীরতর: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও গণভোটের সময়কালেই মূল অচলাবস্থা ◈ পাঁচ দফা দাবিতে রাজধানীতে জামায়াতসহ আট ইসলামি দলের যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা শুরু ◈ আলী রীয়াজ নয় মাসে ৮৩ কোটি টাকা খরচ করে পালিয়েছে: মোশাররফ আহমেদ ঠাকুর (ভিডিও) ◈ ডিবি হারুনকে সরাতে শেখ হাসিনার নির্দেশ, দায় চাপালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর: ওবায়দুল কাদের-হারুন অডিও ফাঁস

প্রকাশিত : ০৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০২:০৪ রাত
আপডেট : ০৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জোট রাজনীতির সমীকরণে স্থগিত ৬৩ আসন, বিএনপি’র প্রার্থী তালিকা নিয়ে কৌতূহল

সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৩৬টি আসনে দলীয় প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করছে বিএনপি। এর মধ্যে নেতিবাচক তথ্য পাওয়ায় মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থী স্থগিত করা হয়েছে।  বাকি ৬৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। এই আসনগুলোতে এখন চোখ প্রথম দফায় মনোনয়ন না পাওয়া দলের নেতা ও সমমনা দল এবং জোট নেতাদের। ফাঁকা রাখা এই আসনগুলো ঘিরে আছে নানা হিসাবনিকাশ। সম্ভাব্য নির্বাচনী জোট, রাজনৈতিক সমঝোতার উপর নির্ভর করবে এসব আসনে কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন। তবে ফাঁকা আসনে বিএনপি’র দলীয় অনেকে মনোনয়ন পাবেন। বাকিগুলো থাকবে জোটসঙ্গীদের জন্য। 

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, দুই-একদিনের মধ্যে বিএনপি’র নির্বাচন সংক্রান্ত লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা সমমনাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক করে আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি ঘোষিত আসনগুলোর মধ্যে কয়েকটি আসনে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা করেছেন সমমনা দলগুলোর কয়েকজন নেতা। তাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ওই আসনগুলোতে প্রার্থী দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। যদিও তারা এখন আলোচনার মাধ্যমে অন্য আসনেও নির্বাচন করতে আগ্রহী বলে মিত্র দলগুলোর মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মানবজমিনকে জানিয়েছেন।

প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর গত মঙ্গল ও বুধবার সমমনাদলগুলোর নেতারা অনানুষ্ঠানিক বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। মির্জা ফখরুল মিত্রদলগুলোর নেতাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, তাদের জন্য আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। সমঝোতার মধ্যদিয়ে ওই সব আসন তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। যেসব আসনে সমমনা দলগুলো মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। এরমধ্যে বেশ কিছু আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। যদিও ঘোষিত কিছু কিছু আসনও পরিবর্তনের সুযোগ আছে বলেও জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। শিগগিরই জোটের প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে। 

সমমনা দল ও বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন, জোটের তালিকা চূড়ান্ত করতে দুই-একদিনের মধ্যে তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে। প্রথম পর্যায়ে দলের লিয়াজোঁ কমিটির নেতাদের সঙ্গে মিত্রদের বৈঠক হবে। এরপরে তারেক রহমানের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলোর বৈঠক হবে। এসব বৈঠকে জোটের প্রার্থী তালিকা ও আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। 

যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটের জন্য বেশ কিছু আসন খালি রেখেছে বিএনপি। এর মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব লক্ষ্মীপুর-৪ আসন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে নির্বাচন করতে চেয়েছেন। ওই আসনে বিএনপি এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬, বিজেপি’র চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থর জন্য ঢাকা-১৭, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের জন্য পটুয়াখালী-৩, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের জন্য ঝিনাইদহ-২, সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসানের জন্য ঠাকুরগাঁও-২ আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

মাহমুদুর রহমান মান্না মানবজমিনকে বলেন, প্রার্থী ঘোষণার পর বিএনপি’র সঙ্গে এখনো কোনো কথা হয়নি। তবে আমি বগুড়া-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে চাই। আর বিএনপি’র সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে আমরা নির্বাচনে যাবো।  

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি’র সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এসব ঠিক হবে।

১২ দলীয় জোটের ৩টি আসন খালি রাখা হয়েছে। এই তিনটি আসনে গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে প্রচারণাও চালাচ্ছেন তারা। এরমধ্যে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের জন্য পিরোজপুর-১, বাংলাদেশ এলডিপি’র চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিমের জন্য লক্ষ্মীপুর-১, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদার জন্য কিশোরগঞ্জ-৫।
শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে আমাকে শতভাগ কনফার্ম করেছে বিএনপি। সেই অনুযায়ী আমি নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণাও চালাচ্ছি। জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে খুব অল্প সময়ে বিএনপি’র সঙ্গে তাদের বৈঠক হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক। তার জন্য চট্টগ্রাম-১৪ এবং মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদের জন্য কুমিল্লা-৭ আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে বলে বিএনপি’র দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। রেদোয়ান আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আমাদের ৫টি আসন ছাড় দিয়েছিল। এবার তো আমাদের প্রত্যাশা আরও বেশি। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি বলতে পারবো। 

এ ছাড়া এনডিএম-এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের জন্য ঢাকা-১৩, এনপিপি’র চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের জন্য নড়াইল-২ এবং ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপি’র সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। এসব আসনেও কাউকে মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি।
মোস্তাফিজুর রহমান ইরান মানবজমিনকে বলেন, ঝালকাঠি-১ আসন থেকে নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচনী এলাকায় আমি প্রচারণাও চালাচ্ছি। বিএনপি’র দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও তিনি সাক্ষাৎ করছেন বলে জানিয়েছেন।  

ওদিকে ঢাকায় ১৫টি আসনের মধ্যে ৯টিতে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি। ৬টি আসন ফাঁকা রেখেছে। এরমধ্যে ঢাকা-৮ আসন থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। তবে বিএনপি সেখানে প্রার্থী করেছে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে। অন্যদিকে ঢাকা-৬ আসনে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। কিন্তু ঢাকা-৬ আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী করেছেন দলের চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক পরামর্শ সহায়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে।

সাইফুল হক মানবজমিনকে বলেন, আমি ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এখন ঢাকা-১২ আসন হলেও দলীয়ভাবে সম্মত হতে পারি। 
সুব্রত চৌধুরী বলেন, বিএনপি’র সঙ্গে এ বিষয়ে এখনো আমাদের কোনো কথা হয়নি। আলোচনা করে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। 

এ ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলীয় সদস্য ফরম পূরণ করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে দিয়ে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপি তাকে প্রার্থী করতে পারে এমন গুঞ্জনও রাজনীতির অঙ্গনে রয়েছে।

অন্যদিকে নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা জোটের ইসলামী দলগুলোর ১২ নেতা প্রার্থী হতে পারেন। এরমধ্যে ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রিন সিগন্যালও দেয়া হয়েছে। ওদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সঙ্গে বিএনপি’র আসন সমঝোতা নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও জাতীয় নাগরিক পার্টি এককভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এর বাইরে বাম ঘরানার ৬ দলীয় জোটের সঙ্গেও আলোচনা করছে বিএনপি। 

সমমনাদের কতো আসন ছাড়বে বিএনপি তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে শরিকদের ৫৮ আসনে ছাড় দিয়েছিল বিএনপি। এরমধ্যে ২২টি আসন দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামীকে। কিন্তু এবার নির্বাচনে জামায়াতকে বিএনপি’র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সমমনাদলগুলোর ২০ থেকে ২৫টি আসনে মনোনয়ন পাওয়ার মতো প্রার্থী রয়েছে বলে মনে করছেন বিএনপি’র নেতারা। উৎস: মানবজমিন।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়