শিরোনাম
◈ দারিদ্র্য কারও স্বপ্নের পথে বাধা হওয়া উচিত নয়: প্রধান উপদেষ্টা ◈ দেউলিয়ার পর্যায়ে ১২ ব্যাংক, গ্রাহকদের টাকার কী হবে? (ভিডিও) ◈ এ‌শিয়া কা‌পের ফাইনা‌লে ভারত, ব্যাটিং ব্যর্থতায় ৪১ রা‌নে হে‌রে গে‌লো বাংলাদেশ ◈ ট্রাম্পকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা (ভিডিও) ◈ সাকিবকে টপকে গেলেন মোস্তাফিজ ◈ মির্জা ফখরুলের সাক্ষাৎকার নিয়ে তোলপাড় ◈ সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের চেক দিয়ে উত্তোলন ১.৭৬ কোটি, দুদকের জব্দ ৮৩ লাখ ◈ সেনাবাহিনীরে দিবেন, তাপসের প্রশ্নে হাসিনা বলেন, বাবা চিন্তা কইরা কথা কইয়ো (অডিও) ◈ হাসিনা পরিবারসহ ১১টি শিল্প গ্রুপের ৪৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ ◈ লাদাখে বিক্ষোভে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ: পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে নিহত ৪, আহত ডজনখানেক (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৮:২২ রাত
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:১৮ রাত

প্রতিবেদক : মনিরুল ইসলাম

সেনাবাহিনীরে দিবেন, তাপসের প্রশ্নে হাসিনা বলেন, বাবা চিন্তা কইরা কথা কইয়ো (অডিও)

জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। কিন্তু উনি যা যা পোড়াতে বলেছিলেন, সেগুলো না পুড়িয়ে সেতু ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের ফোনালাপের বরাত দিয়ে মিজানুল ইসলাম এ কথা জানান। 

এদিন জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ৫৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা।

জবানবন্দিতে তিনি জানান, শেখ হাসিনার কথোপকথনের ৬৯টি অডিও ক্লিপ এবং তিনটি মোবাইল নম্বরের কল রেকর্ড জব্দ করা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মিজানুল ইসলাম সেতু ভবনের কথা উল্লেখ করে বলেন, শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে ফোনালাপে শেখ হাসিনা নিজেই আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি বললাম একটা জিনিস পোড়াতে, যা যা পোড়াতে। ওরা পুড়িয়ে দিল সেতু ভবন।

তার মানে আগুন দেওয়ার নির্দেশ উনিই দিয়েছেন। কিন্তু উনার কাঙ্ক্ষিত জিনিস না পুড়িয়ে অন্য স্থাপনা পোড়ানো হয়েছে।

শেখ হাসিনা ও শেখ ফজলে নূর তাপসের মধ্যকার কল রেকর্ডের কথোপকথনে শোনা যায় যে….

শেখ হাসিনা: হ্যালো

তাপস: জ্বি, সালামালাইকুম

শেখ হাসিনা: হ্যাঁ, ওয়ালাইকুম আসসালাম

তাপস: জি

শেখ হাসিনা: বল বাবা

শেখ হাসিনা: তুমি নরমাল ফোনে কল দেও ইন্টারনেটের অবস্থা ভালো না

তাপস: নরমাল ফোনেই, নরমাল ফোনেই

শেখ হাসিনা: আচ্ছা বল বাবা

তাপস: জ্বি, সন্ত্রাসীরাতো বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় বিভিন্ন সময় ঘুরতেছে, এখন কোথায় কি আক্রমণ করে যাচ্ছে না তো

শেখ হাসিনা: না, করতেছে আমরা ওদের আবার ব্যবস্থা নিচ্ছি আমি, আর আবাহনী ক্লাবে কি আগুন দিছে

ভাপস: ওরা মনে হয় সচিবালয়ে তো আক্রমণ করছে আবাহনী ক্লাবে ও

শেখ হাসিনা: কোথায়?

তাপস: সচিবালয়ে তো আক্রমণ করছে, আপনি জানেন না

শেখ হাসিনা: না

তাপস: হ্যাঁ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী তো ঐখানে আছে, সচিবালয়ে কয়েকবার ওরা আক্রমণ করছে, ওরা তো রাতে যদি আবার কোথাও কোথাও বিভিন্ন সংবেদনশীল বাসা বাড়িতে আক্রমণ করে তাহলে তো ইয়ে হবে

শেখ হাসিনা: রাতের বেলা সব ভিজিলেন্স থাকবে এবং এই এতদিন তো, আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখনি ব্যবস্থা নিচ্ছি। একটু আন্তে আন্তে অনেক জায়গায় গেদারিং ক্লিয়ার হচ্ছে

তাপস: ওরা মনে হচ্ছে না ইয়ে করবে, রাতে মনে হয় ওদের আরো অনেক কিছু পরিকল্পনা আছে মনে হচ্ছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো আমাকে তাই বললো, আভাস দিল এবং আপনাকে ও মনে হয় বলছে কিছু যে রাতে যদি সর্বোচ্চ সর্বোচ্চ না ইয়ে করে করবেন নাকি?

শেখ হাসিনা: কি করবো?

তাপস: মানে সেনাবাহিনী দিবেন?

শেখ হাসিনা: বাবা, একটু চিন্তা করে কথা কইও

তাপস: জ্বি

শেখ হাসিনা: এটাই তাদের আকাঙ্খা

তাপস: বুঝতেছি আমি টেকনিকেললি এইটা বুঝতেছি কিন্তু ওরা মনে হয় ঐ পথে নেওয়ার জন্য ইয়ে করছে

শেখ হাসিনা: দরকার নাই ওটা দরকার নাই আমি সেনাপ্রধানের সাথে কথা বলছি ওরা রেডি থাকবে ঠিক আছে, এখনতো আমরা অন্য ইয়ে করতেছি। ড্রোন দিয়ে ছবি নিচ্ছি আর হেলিকপ্টারে ইয়ে হচ্ছে মানে কয়েক জায়গায়

তাপস: তাহলে ঐ কিছু ছবি দেখে পাকড়াও করা যায় না রাতের মধ্যে

শেখ হাসিনা: সবগুলিকে এরেস্ট করতে বলেছি রাত্রে

তাপস: হ্যাঁ, পাকড়াও করলে ওদেরকে

শেখ হাসিনা: না ওটা বলা হয়ে গেছে, ওটা নিয়ে র‍্যাব ডিজিএফআই এনএসআই সবাইকে বলা হইছে যে যেখান থেকে যে কয়টা পারবা ধইরা ফেলো

তাপস: জ্বি

শেখ হাসিনা: ওটা বলা আছে, আর যেখানে গেদারিং দেখবে সেখানে ঐ উপর থেকে, এখন উপর থেকে করাচ্ছি, অলরেডি শুরু হইছে কয়েকটা জায়গায়

তাপস: জ্বি

শেখ হাসিনা: হইয়া গেছে

তাপস: জ্বি জ্বি, মোহাম্মদপুর থানার দিকে মনে হয় ওরা যাচ্ছে এটা আমাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললো

শেখ হাসিনা: মোহাম্মদপুর থানার দিকে

তাপস: হ্যাঁ

শেখ হাসিনা: ওখানে পাঠাইয়া দিক র‍্যাব

তাপস: জ্বি, তাহলে আপনার নির্দেশনা লাগবে

শেখ-হাসিনা: আমার নির্দেশনা দেওয়া আছে ওপেন নির্দেশনা দিয়ে দিছি, এখন লেথাল ওয়েপন ব্যবহার করবে। যেখানে পাবে সোজা গুলি করবে।

তাপস: জি

শেখ হাসিনা: ওটা বলা আছে আমি এতদিন বাধা দিয়ে রাখছিলাম। ঐ যে স্টুডেন্ট রা ছিল ওদের স্ট্যাডির কথা চিন্তা করে, তারপর তো—ঐ

তাপস: না রাতে স্টুডেন্ট না রাতে হলো ওরা সন্ত্রাসী

শেখ হাসিনা: কি করছে তোমার, ঐ যে আমাদের রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলের একটা বাচ্চা ছেলে, তার শিক্ষক তাকে ডাইকা নিয়ে আসছে, শিক্ষক নাকি আবার শিবির করতো, ওরা জানে না। তারপর সেই ছেলেটা মারা গেছে, তার মাত্র বুকে একটা গুলি অথচ পুলিশ কিন্তু কোন রিভলবার ব্যবহার করেনি

তাপস: হ…জ্বি

শেখ হাসিনা: এইরকম ঘটনা তারা ঘটাইছে

তাপস: জ্বি আপনি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ইয়ে করেন

শেখ হাসিনা: সব জায়গায় আগুন.. বিআরটি বিটিআরসি বন্ধ করে দিছে, পোড়াইয়া দিছে, বিটিভি পোড়াইয়া দিছে এখনতো ইন্টারনেট বন্ধ সব পোড়াইয়া দিছে, এখন চলবে কিভাবে

তাপস: জ্বি, এটা ভালো হইছে, জ্বি

শেখ হাসিনা: না পোড়াইয়া দিছে, মেশিনপত্র সব পুড়ে গেছে, আমি বলছি যা যা পোড়াতে.., ও আমাদের সেতু ভবন পোড়াইছে

তাপস: জ্বি, ওরা রাতে মনে হয় আরো ব্যাপক আক্রমণ করবে

শেখ হাসিনা: হ্যাঁ, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সেটা পোড়াইছে

তাপস:জি, কারন এই যে আমি ফিরলাম, আমি দেখলাম যে রাস্তায় রাস্তায় ওরা বিভিন্ন জায়গায় ইয়ে করতেছে

শেখ হাসিনা: কোন কোন জায়গায়?

তাপস: বনানীতে ও বনানী গুলশানে তো সচারাচার করে না, কিন্তু বনানী গুলশানে ওরা ইয়েতে চলে আসছে- –কোথাও কোথাও ইয়ে করতে পারে মুভমেন্ট আছে সবজায়গায়

শেখ হাসিনা: ঠিক আছে আমি দেখছি

তাপস: জ্বি

শেখ হাসিনা: তোমরা সাবধানে থেকো

তাপস: জ্বি আমি সাবধানে আছি

শে হাসিনা: আচ্ছা

তাপস: ধরপাকড় করতে হবে সব ধরে ফেলতে হবে রাতের মধ্যে

শেখ হাসিনা: না না ওটা বলে দেওয়া আছে অলরেডি, আর একটু আর একটু রাইত গাঢ় হলেই শুরু হবে

তাপস: ফ্রি–জ্বি

শেখ হাসিনা: অন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি

তাপস: জ্বি–জ্বি

শেখ হাসিনা: জ্বি আচ্ছা

তাপস: সালামালাইকুম

এই মামলায় প্রসিকিউসন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করছেন। সেই সাথে অপর প্রসিকিউটররা শুনানিতে উপস্থিত থাকেন।পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। আর এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

শেখ হাসিনা ও তাপসের ফোনালাপের রেকর্ড ছাড়াও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে দুটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামালের একটি ফোনালাপের রেকর্ড ট্রাইব্যুনালে শোনানো হয়।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়