মহসিন কবির: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই সময় দেয়া সাক্ষাৎকার নিয়ে রাজনীতিতে তোলপার সৃস্ঠি হয়েছে। মির্জা ফখরুল কোনো বিদেশি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেননি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। একই সঙ্গে দলটির মহাসচিবের নামে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটি ডাহা মিথ্যা ও মনগড়া তথ্য বলেও জানানো হয়েছে।
এর আগে বলা হয়ছে ভারতের দৈনিক পত্রিকা ‘এই সময়’-এ প্রকাশিত বি মির্জা ফখরুলের সাক্ষাৎকার ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
কলকাতার পত্রিকা এই সময়-এ প্রকাশিত এই সাক্ষাৎকারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের যেসব বক্তব্য এসেছে, এমনটি তিনি বলেননি বলে তাঁর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে
কলকাতার পত্রিকা এই সময়-এ প্রকাশিত এই সাক্ষাৎকারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের যেসব বক্তব্য এসেছে, এমনটি তিনি বলেননি বলে তাঁর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছেএই সময়– এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের একাংশের স্ক্রিনশট
জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) এখন আর কোনো শক্তি মনে করে না বিএনপি। জামায়াতে ইসলামীকে আর মাথায় উঠতে দেবে না। দলটির যত না শক্তি, বিএনপি অকারণে তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। সোমবার পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়।
‘বিএনপি-জামায়াতকে ভারত কেন এক বন্ধনীতে রাখছে, প্রশ্ন মির্জার’ শিরোনামে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটি নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন ও বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। সাক্ষাৎকারের কিছু বক্তব্য নিয়ে জামায়াতে ইসলামী তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এনসিপি নেতারাও।
যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা বিএনপির মহাসচিবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সময়–এ সাক্ষাৎকারটি ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর। বিএনপির মহাসচিব এ ধরনের বক্তব্য দেননি।
প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের শুরুটা ছিল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের কাছে প্রশ্ন ছিল আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন কি আদৌ হবে? জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি যেভাবে একটার পরে একটা নতুন দাবি তুলছে এবং সেগুলো পূরণ না হলে নির্বাচন হতে দেবে না বলছে, অনেকেই সংশয়ে।
মির্জা ফখরুলের জবাব ছিল, আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতেই ভোট হবে। সংশয়ের কোনো জায়গা নেই। কোনো অশান্তি হবে না। মানুষ ভোটাধিকার ফেরত চাইছেন, নির্বাচন চাইছেন। উৎসবের মতো ভোট হবে ফেব্রুয়ারিতে।
জামায়াত যে বলছে পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি ছাড়া ভোট হবে না, এনসিপি প্রচলিত সংবিধান বাতিল করে আগে গণপরিষদের নির্বাচন চাইছে। না হলে ভোট হতে দেবে না বলছে—এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুলের যে বক্তব্য ছাপা হয়েছে, তাতে বলা হয়, ‘জামায়াত ভোটে আসবে। পিআর-টিআর নয়, মানুষ যে পদ্ধতিতে ভোট বোঝেন, সেই প্রচলিত পদ্ধতিতেই হবে বাংলাদেশের ভোট। জামায়াতও দেখবেন অংশ নেবে। আর এনসিপিকে আমরা কোনো শক্তি বলেই আর মনে করি না। এটা ঠিক, এই ছাত্ররাই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের বারুদে আগুনটা দিয়েছিল। এখন আর তাদের কিছু নেই। ডাকলে লোকও আসে না।’
এনসিপির এখন একমাত্র লক্ষ্য বিএনপিকে সরকার গঠন করতে না দেওয়া—এমন বক্তব্যও এসেছে এই সাক্ষাৎকারে।
এই সময় সাক্ষাৎকারের এক প্রশ্নে মির্জা ফখরুলের জবাব হিসেবে লেখা হয়েছে, আগামী নির্বাচনে জামায়াত বিএনপির কাছে ৩০টা আসন চেয়েছে। বিএনপি উৎসাহ দেখায়নি।
এই প্রশ্নের জবাবে আরও লেখা হয়েছে, ‘আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি, জামায়াতকে আর আমরা মাথায় উঠতে দেব না। তারা যত বড় না শক্তি, আমরা অকারণে তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। পিআর-টিআর সবই বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল। জামায়াত কিন্তু নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করছে। আসলে দেশে প্রবলভাবেই মানুষ নির্বাচন চাইছেন। সেনাবাহিনী চাইছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসও চাইছেন।’
২৫ বছর ধরে বিএনপির সঙ্গে জামায়াত একসঙ্গে ছিল, সে জন্য দল দুটির নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হয় কি না। এমন প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, ‘ভুল। আওয়ামী লীগ এই অপপ্রচার ভারতকে বিশ্বাস করিয়েছে। তারা শুধুই নির্বাচনী শরিক। তারা ধর্মীয় রাজনীতি করে, আমরা করি না। আসলে আওয়ামী চশমা দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে দেখেই ভুলটা করেছে। বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগই রাখেনি। আজ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ক্ষোভের পাহাড় তীব্র ভারত-বিরোধিতায় পর্যবসিত হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ, জাসদ বা ওয়ার্কার্স পার্টির মতো দলগুলো আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না? এই প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুলের যে বক্তব্য ছাপা হয়েছে, সেটা হলো ‘আমরা বলেছি আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকেরা সবাই, এমনকি জাতীয় পার্টিও নির্বাচনে অংশ নিক। একটা সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট হোক। এ জন্য অনেকে আমাকে ভারতের এজেন্ট, আওয়ামী দালাল বলে গালাগাল দিচ্ছে। কিন্তু শেখ হাসিনার অপকর্ম আমরাও কেন করব? হাসিনা ১৫ বছর প্রতিপক্ষকে ভোটে দাঁড়াতেই দেননি, তার শাস্তি পেয়েছেন। একই কাজ করলে আমরাও তো প্রতিফল পাব। তবে মানুষ এত রক্ত দেখেছেন, এত প্রাণহানি—তাঁদের মধ্যে আওয়ামী-বিরোধিতা রয়েছে।’
এ ধরনের বক্তব্য দেননি, দাবি বিএনপির মিডিয়া সেল সদস্যের
এই সময়-এর অনলাইনে প্রকাশিত বিএনপির মহাসচিবের সাক্ষাৎকারটির বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হলে এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়।
মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা মির্জা ফখরুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের বিষয়ে যোগাযোগ করেছেন। মির্জা ফখরুল জানিয়েছেন, এই সময়-এ প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে তিনি এ ধরনের বক্তব্য দেননি। সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ ভুল ও বিভ্রান্তিকর।
প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে দেওয়া বক্তব্য ও মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, বিএনপির মহাসচিব জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি এবং সংগঠনের মর্যাদা সম্পর্কে তাচ্ছিল্যের ভাষায় কথা বলেছেন। এ ধরনের সম্পূর্ণ অসত্য, অমর্যাদাকর ও প্রতিহিংসাপরায়ণ বক্তব্য। এই বক্তব্যের সঙ্গে সত্য ও শিষ্টাচারের কোনো মিল নেই।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারফাইল ছবি
বিবৃতিতে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এ বক্তব্য তাঁর (মির্জা ফখরুল) হয়ে থাকে, তবে বাধ্য হয়ে আমরা তার প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি। পাশাপাশি এই বক্তব্য যদি তাঁর হয়ে থাকে তাহলে জামায়াতে ইসলামী কার কাছে এই আসনগুলো দাবি করেছে, তার প্রমাণ জাতির কাছে উপস্থাপন করার জন্য দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিএনপির কাছে ৩০ আসন চাওয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করে দিয়ে গোলাম পরওয়ার বিবৃতিতে বলেন, ‘কারও কাছে আসন চাওয়ার রাজনীতির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান সময়ে দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই।’ ভবিষ্যতে এ ধরনের অসত্য ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য বিএনপির মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।
এদিকে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তাঁর দলের বিষয়ে সাক্ষাৎকারে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে বলেছেন, এনসিপি কোনো শক্তি কি শক্তি নয়, এটা রাজপথে, ভোটের মাঠে জনগণই রায় দেবে।
নিউইয়র্কের বিমানবন্দরে আখতার হোসেনকে হেনস্তা করার ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার সুযোগ নেই উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, একদিকে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী কার্যক্রম করছে, অন্যদিকে দেশের কোনো কোনো রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার ষড়যন্ত্র করছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার অথবা আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করার কোনো সুযোগ নেই। যারা এটা করার চেষ্টা করবে, জনগণ তাদের বিরুদ্ধেই দাঁড়াবে। তাদের রাজনীতি বাংলাদেশ থেকে নাই হয়ে যাবে।’