শিরোনাম
◈ মার্কিন শুল্কে তৈরি পোশাক খাতের উদ্বেগ অস্বস্তি কি কেটে গেছে? ◈ স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত সশস্ত্র প্রতিরোধ চলবে: হামাসের ঘোষণা ◈ এনসিপি নেতাদের ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ নিয়ে ভিডিও বার্তা ◈ নাশকতার আশঙ্কায় আগস্টজুড়ে চলবে চিরুনি অভিযান: ডিএমপি ◈ সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ◈ নিবন্ধনপ্রত্যাশী এনসিপিসহ ১৪৪ দলের তথ্য জমার সময়সীমা শেষ আজ ◈ ঘরে ঘরে হঠাৎ বেড়েছে জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলাব্যথা, চিকিৎসকরা বলছেন একসঙ্গে তিন ভাইরাস ছড়াচ্ছে ◈ জুলাই সনদ নিয়ে ভুয়া‌ চিঠি, পুলিশ সদর দপ্তরের হুঁশিয়ারি ◈ শেখ হাসিনার বিচারের আগে নির্বাচন হবে না: উপদেষ্টা ফরিদা আখতার (ভিডিও) ◈ বেনাপোল বন্দর এলাকায় দুর্ধর্ষ চুরির ৪৮ ঘন্টার মধ্যে চোর গ্রেফতার

প্রকাশিত : ০৩ আগস্ট, ২০২৫, ০১:৩৬ রাত
আপডেট : ০৩ আগস্ট, ২০২৫, ০৪:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন।। বাংলাদেশে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন৷ উচ্চকক্ষের একশ আসনের নির্বাচন হবে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে৷ নিম্নকক্ষের তিনশ আসনের নির্বাচন হবে আগের মতোই আসনভিত্তিক সরসারি ভোটে৷

আর নারী আসনের সংখ্যা আগের মতোই থাকছে ৫০টি৷ তবে, রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে সাত শতাংশ আসনে নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন দিতে হবে৷ তিনশ আসনে এটা এটা ঘূর্ণায়ন পদ্ধতিতে হবে৷ ফলে সব মিলিয়ে সংসদের আসন সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৪৫০টি৷

এক শতাংশ ভোট পেলেই উচ্চকক্ষে আসন
৩১ জুলাইয়ের সবশেষ বৈঠকে উচ্চকক্ষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঐকমত্য কশিমন৷ তবে, উচ্চকক্ষের সদস্যদের আইন প্রণয়ন করার কোনো ক্ষমতা থাকবে না৷ কোনো রাজনৈতিক দল ন্যূনতম এক শতাংশ ভোট পেলেই উচ্চকক্ষে আসন পাবে৷ অর্থাৎ এক শতাংশ ভোট পেলেই উচ্চকক্ষের একশটি আসনের মধ্যে একটি আসন পাবে ওই রাজনৈতিক দল৷ এক্ষেত্রে, ওই দলটি নিম্নকক্ষে কোনো আসন যদি জিততে যদি ব্যর্থও হয়, তা উচ্চকক্ষে কোনো বাধা তৈরি করবে না৷

উচ্চকক্ষের এখতিয়ার
উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির প্রস্তাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি একমত হয়েছে৷ তবে, এরবিরোধিতায় আছে বিএনপিসহ কয়েকটি দল৷ কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, উচ্চকক্ষের নিজস্ব কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকবে না৷ তবে, অর্থবিল ছাড়া অন্য সব বিল নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষে উপস্থাপন করতে হবে৷ উচ্চকক্ষ কোনো বিল স্থায়ীভাবে আটকে রাখতে পারবে না৷ এক মাসের বেশি কোনো বিল আটকে রাখা হলে, সেটি উচ্চকক্ষে অনুমোদিত বলে গণ্য করা হবে৷

নিম্নকক্ষের প্রস্তাবিত বিলগুলো পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করবে উচ্চকক্ষ এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তা অনুমোদন অথবা প্রত্যাখ্যান করতে হবে৷ যদি উচ্চকক্ষ কোনো বিল অনুমোদন করে, তবে দুই কক্ষে পাস হওয়া বিল রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানো হবে৷

আর যদি উচ্চকক্ষ কোনো বিল প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে তা সংশোধনের সুপারিশসহ নিম্নকক্ষে পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো হবে৷ নিম্নকক্ষ সেই সংশোধনগুলো আংশিক বা পূর্ণভাবে গ্রহণ কিংবা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে৷

রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, ‘‘উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ক্ষমতার একটি ভারসাম্য তৈরি হবে৷ যারা নিম্নকক্ষে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, তারা উচ্চকক্ষে তা নাও পেতে পারে৷ আর উচ্চকক্ষে প্রকৃত জনমতের প্রতিফলন হবে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘যদিও উচ্চকক্ষের যে ক্ষমতা প্রস্তাব করা হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়৷ তারপরও তারা প্রশ্ন তুলতে পারবেন৷ আলোচনা করতে পারবেন৷ দেশের মানুষও সেটা জানবেন৷ আর ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো তার ভিত্তিতে জনমত গড়ে তুলতে পারবে৷''

পুরো নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হলেই ভালো হতো বলে মনে করেন এনসিপির এই নেত্রী৷ তিনি বলেন, ‘‘তাতে প্রকৃত জনমতের প্রতিফলন হতো৷ তারপরও শুধু উচ্চকক্ষে হলেও কিছুটা ভারসাম্য তৈরি হবে৷''

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি যে বলছে নিম্নকক্ষের আসনের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হবে, সেটা হলে তো আর পিআর পদ্ধতি হলো না৷''

তবে বিএনপি এবং তাদের মিত্র-জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির দাবি, উচ্চকক্ষের আসন নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে দিতে হবে৷ তারা উচ্চকক্ষের এখতিয়ার নিয়েও আপত্তি তুলেছে৷

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ওই দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘উচ্চকক্ষে একশ আসনে নির্বাচনের যে পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে, সেই প্রস্তাবের আমরা তীব্র বিরোধিতা করছি৷ বিএনপি ও কয়েকটি দল ও জোট এই পদ্ধতি এবং প্রস্তাবিত ক্ষমতার সঙ্গে একমত নয়৷ আমাদের ভিন্নমত লিখিতভাবে লিপিবদ্ধ না হলে আমরা এটিকে অনুমোদন দেব না৷''

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা মনে করি যদি প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হয় তাহলে সংসদের ভারসাম্য নষ্ট হবে৷ দেখা যাবে নিম্নকক্ষে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে একটি দল সরকার গঠন করলেও উচ্চকক্ষে অন্যান্য দল এক হয়ে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে৷ তাদের আসন বেশিও হয়ে যেতে পারে৷ তাই আমরা বলেছি নিম্নকক্ষে যে আসন তার আনুপাতিক হারে উচ্চকক্ষে আসন বণ্টন করতে হবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা শুধু নিম্নকক্ষের হাতেই থাকতে হবে৷ উচ্চকক্ষের হাতে এটা থাকার বিরোধী আমরা৷ এর কারণ হলো, যারা ভোটারদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন, তাদের বাইরে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা কারো থাকতে পারে না৷ উচ্চকক্ষের যারা তারা তো সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন না৷''

অন্যদিকে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম উচ্চকক্ষ গঠনের বিরোধিতা করেছে৷

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘‘আসলে আমরা সংসদে উচ্চকক্ষেরই বিরোধিতা করেছি৷ কারণ, আমরা মনে করি বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে উচ্চকক্ষ একটা হাতি পোষার মতো৷ আসলে ওখানে যা হবে তা হলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কিছু লোককে উচ্চকক্ষের সদস্য করবে, যাদের কিছু দেয়া দরকার তাদের৷ আবার কাউকে পুরস্কার হিসেবে ওই পদ দেবে৷ এতে আসলে কাজের কাজ কিছু হবে না৷ আসলে যা দরকার তা হলো, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা৷ সেটা যদি করা হয় তাহলে সংসদ আসলে আইন প্রণয়নে মনোনিবেশ করতে পারবে৷ সেটা না করে উচ্চকক্ষের নামে যা করা হচ্ছে, তাতে কিছু লোককে উচ্চকক্ষের নামে সংসদদে নেয়া ছাড়া আর কিছুই হবে না৷''

যা বলছেন বিশ্লেষকেরা
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পুরো নির্বাচনই সংখ্যানুপাতিক হলে ভালো হতো৷ তাতে আসলে ভোটারদের মতের প্রকৃতই প্রতিফলন ঘটতো৷ তবুও উচ্চকক্ষেই তা হচ্ছে, সেটাও একটা ভালো উদ্যোগ৷ এতে জবাবদিহিতা বাড়বে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও নির্বাচন পদ্ধতি বিশ্লেষক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যদি উচ্চকক্ষেও আনুপাতিক নির্বাচন হয় তাহলে সেখানে অন্তত প্রকৃত ভোটের প্রতিফলন ঘটবে৷ সেখানে ভোটের অনুপাতে অনেক ছোট দলও আসন পাবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় আসলে প্রকৃত অর্থে ভোটারদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে না৷ যেমন, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিলো মোট ভোটের ৪১ শতাংশ৷ আসন পেয়েছিলো ১৯৩টি৷ আর আওয়ামী লীগ পেয়েছিলো ৩৯ শতাংশ৷ কিন্তু আসন পেয়েছিলো মাত্র ৩০টি৷ এখন বিশ্বের অধিকাংশ দেশে আসনভিত্তিক না হয়ে আনুপাতিক নির্বাচন হচ্ছে৷''

বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে এই অধ্যাপক বলছেন, ‘‘বিএনপি বলছে, উচ্চকক্ষের আসন নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে দিতে হবে৷ আসলে সেটা তো কোনো পিআর পদ্ধতির নির্বাচন নয়৷ সেটা আগের পদ্ধতিই, সংসদে যেভাবে নারী আসন ভাগ হয়৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘‘আসলে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ভোটের অনুপাতে হয়৷ এখন নিম্নকক্ষ হবে প্রচলিত পদ্ধতিতে আর উচ্চকক্ষ হবে আনুপাতিক, এটা একটা মিশ্র পদ্ধতি হয়ে গেল৷ আমার কাছে এটা অদ্ভুত মনে হচ্ছে৷ এতে আসলে দেখা যাবে, উচ্চকক্ষে ক্ষমতাসীন দল তার প্রভাব হারাতে পারে৷''

তিনি বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতির দুর্বলতা হচ্ছে, এতে দুর্বল সরকার গঠিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ সরকারটি কোয়ালিশন সরকারের মত হয়৷ শতকরা ৫০ ভাগের বেশি ভোট না পেলে কোনো দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না৷ আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত যা দেখা গেছে তাতে ৩৪-৪০ শতাংশ ভোট পেলেই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া যায়৷''

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যে খসড়া পাঠানো হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, যারা ক্ষমতায় যাবে তারা নির্বাচিত সংসদে আগামী দুই বছরের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করবে৷ এখন বিএনপি তো উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের ব্যাপারে লিখিতভাবে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে৷ তাহলে, তারা ক্ষমতায় গেলে তাদের জন্য কি এটা বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা থাকবে?''

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়