শিরোনাম
◈ মার্কিন শুল্কে তৈরি পোশাক খাতের উদ্বেগ অস্বস্তি কি কেটে গেছে? ◈ স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত সশস্ত্র প্রতিরোধ চলবে: হামাসের ঘোষণা ◈ এনসিপি নেতাদের ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ নিয়ে ভিডিও বার্তা ◈ নাশকতার আশঙ্কায় আগস্টজুড়ে চলবে চিরুনি অভিযান: ডিএমপি ◈ সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ◈ নিবন্ধনপ্রত্যাশী এনসিপিসহ ১৪৪ দলের তথ্য জমার সময়সীমা শেষ আজ ◈ ঘরে ঘরে হঠাৎ বেড়েছে জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলাব্যথা, চিকিৎসকরা বলছেন একসঙ্গে তিন ভাইরাস ছড়াচ্ছে ◈ জুলাই সনদ নিয়ে ভুয়া‌ চিঠি, পুলিশ সদর দপ্তরের হুঁশিয়ারি ◈ শেখ হাসিনার বিচারের আগে নির্বাচন হবে না: উপদেষ্টা ফরিদা আখতার (ভিডিও) ◈ বেনাপোল বন্দর এলাকায় দুর্ধর্ষ চুরির ৪৮ ঘন্টার মধ্যে চোর গ্রেফতার

প্রকাশিত : ০৩ আগস্ট, ২০২৫, ০৩:০৯ রাত
আপডেট : ০৩ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মার্কিন শুল্কে তৈরি পোশাক খাতের উদ্বেগ অস্বস্তি কি কেটে গেছে?

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন।। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত বাড়তি শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক খাতের অস্বস্তি পুরোপুরি দূর হয়েছে কি-না, কিংবা কতটা দূর হলো সেই প্রশ্ন উঠছে।

এই খাতের ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা বলছেন, গার্মেন্ট বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোর জন্য এই বাড়তি শুল্ক প্রায় বাংলাদেশের মতোই রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি অন্যতম প্রতিযোগী দেশ ভারতের জন্য অতিরিক্ত শুল্ক ২৫ শতাংশ থাকাটা বাংলাদেশের জন্য তা আপাতত স্বস্তির।

তবে তারা মনে করেন, এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে আমদানি শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে গেলে ক্রেতাদের চাহিদা কমে আসা এবং সেটিকে মোকাবিলায় উৎপাদক দেশ হিসেবে পণ্য মূল্য কীভাবে কমিয়ে আনা যাবে সেই উপায় খুঁজে বের করায়।

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ আজই এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র একটি ভারসাম্যপূর্ণ শুল্ক কাঠামো ঘোষণা করায় তাদের চার মাসের উদ্বেগের অবসান হয়েছে।

"বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক অবধারিতভাবে আমাদের পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়াবে, যেখানে শিল্পগুলো আগে থেকেই ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেটাতে প্রানান্তকরভাবে যুদ্ধ করছে। এক্ষেত্রে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে," বলেছেন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।

তবে বাংলাদেশে ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকদের এখনো দৃষ্টি থাকবে চীনের ওপর কতটা বাড়তি শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে বাইডেন প্রশাসন দেশটির ওপর যে অতিরিক্ত শুল্ক দিয়েছিলো তা এখনো বহাল আছে।

উল্লেখ্য, গত জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে আসার পর যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ই একে অপরের পণ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্ক বাড়াতে থাকে যা ১০০ শতাংশের ওপরে পৌঁছে যায়।

"এ ধরনের শুল্কে বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাবের সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে চীনের ওপর কতটা শুল্ক আসে সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে," বলেছেন অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ওপর চূড়ান্ত শুল্কহার ঘোষণা করেন। তাতে বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমে হয় ২০ শতাংশ।

এই শুল্ক কার্যকরের সময়সীমাও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ৭ আগস্ট নির্ধারণ করেছেন মি. ট্রাম্প।

গত এপ্রিলে বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প, পরে জুলাইতে তা ৩৫ শতাংশে নামিয়ে আনেন।

বিজিএমইএ তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, এর আগে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হতো। এখন যে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক নির্ধারিত হয়েছে তার ফলে বাংলাদেশের মোট শুল্কের হার দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশে, যা সুনির্দিষ্টভাবে বিভিন্ন পণ্যের জন্য বিভিন্ন হারে প্রযোজ্য হবে।

বাংলাদেশের কি অস্বস্তি পুরোপুরি কেটেছে?
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ তার নিজের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

আর বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের একক বৃহত্তম বাজার।

আবার যত পণ্য দেশটিতে বাংলাদেশ রপ্তানি করে তার ৮৬ শতাংশের বেশি হলো তৈরি পোশাক।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন বা ৭৫৪ কোটি ডলারের গার্মেন্ট পণ্য।

কিন্তু গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র 'লিবারেশন ডে ট্যারিফ' নামে নতুন শুল্ক ঘোষণা করেছিলো, যাতে বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ ধার্য করা হয়েছিলো। এটি তখন নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করে বাংলাদেশে, কারণ তখন ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ ও পাকিস্তানের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিলো।

এরপর সরকারের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে আলোচনায় ব্যবসায়ীদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য ২০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করায় উদ্বেগের অবসান হয়েছে বলে মনে করেন বিজিএমই সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।

"তবে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে স্পষ্ট বলা আছে, কিছু দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বা নিরাপত্তা চুক্তি আলোচনা এখনো চলমান রয়েছে, যেগুলো সম্পাদিত হলে এসব দেশের শুল্ক আরো কমতে পারে," সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন মি. খান।

পোশাক খাতের ব্যবসায়ী ও বিজিএমইএ'র একজন পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলছেন, ভারত থেকে শুল্ক কম আর প্রতিযোগী দেশ বিশেষ করে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের কাছাকাছি- এটাই আপাতত স্বস্তির বিষয় বলে তারা মনে করছেন।

"কিন্তু এখন দেখতে হবে ক্রেতারা এটা গ্রহণ করে কি-না। তারা দাম কমাতে বলে কি-না। আমার ধারণা ক্রেতাদের সাথে দরকষাকষি এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। কৌশলগত নেগোশিয়েশনটা করা জরুরি হবে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

ব্যবসায়ীদের মতে, গত কয়েক বছরে কারখানা খরচ বেড়েছে এবং এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক এলো। ফলে ইন্ডাস্ট্রি কস্ট (শিল্প খরচ বা উৎপাদন ব্যয়) পর্যালোচনা করতে হবে।

"তবে এটা (যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার মাধ্যমে ২০ শতাংশে সুরাহা হওয়া) একটা সুযোগও হতে পারে। এটাকে কাজে লাগাতে পারলে বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব," বলছিলেন মি. সামাদ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের হিস্যা নিয়ে পোশাক খাতে বাংলাদেশের যারা প্রতিদ্বন্দ্বী তাদের নিয়ে উদ্বেগ কমলেও চীনের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র।

চীনের ওপর এখনো উচ্চ শুল্ক আছে এবং সেটি আরও বাড়লে সেখান থেকে সরে পড়া ক্রয়াদেশ কিছু বাংলাদেশের দিকেও আসবে বলে তারা মনে করেন।

"চীন নিয়ে অনিশ্চয়তা, দাম বাড়ার কারণে মার্কিন বাজার সংকোচন ও বিশ্ব বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা নিয়ে অস্বস্তি এখনো থেকেই গেছে। অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে দেড় ডলারের শার্ট হয়তো সাড়ে তিন ডলার হবে। এতে করে চাহিদা কমে যাওয়ার শঙ্কা আছে," বলছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান।

বিজিএমই অবশ্য মনে করছে, বাংলাদেশের মার্কিন রপ্তানির প্রায় ৭৫ শতাংশ হলো তুলাভিত্তিক পোশাক। এটিকে ব্যবহার করেও আরও কিছু শুল্ক ছাড়ের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।

"শুল্ক সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে বলা আছে, যদি নূন্যতম ২০ শতাংশ আমেরিকার কাঁচামাল (যেমন আমেরিকার তুলা) ব্যবহার করা হয়, তাহলে আমেরিকার কাঁচামালের মূল্যের ওপর এই অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ আমেরিকার কাঁচামাল ব্যবহার করলে আমরা বাড়তি কিছু শুল্ক ছাড় পাবো," সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।
তবে তৈরি পোশাক খাতের মালিকরা এটি মানছেন যে, শুল্ক বাধা মোকাবিলা করে তৈরি পোশাক খাতকে এগিয়ে নিতে হলে বাজার ও পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে এবং নতুন ডিজাইন ও উদ্ভাবনেও বিনিয়োগ করতে হবে।

পাশাপাশি তারা মনে করেন, সরকারকেও দেখতে হবে যে ছোটো ও মাঝারি কারখানাগুলো যেন ব্যবসা থেকে ছিটকে না পড়ে।

প্রসঙ্গত, সরকারের দিক থেকে আগেই জানানো হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে পোশাক শিল্পকে রক্ষাই ছিল তাদের অগ্রাধিকার।

শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া বার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশ ২০ শতাংশ শুল্কহার পেয়েছে—যা তার মূল পোশাক খাতের প্রতিযোগীদের (যেমন শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়া, যারা ১৯ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক পেয়েছে) অনুরূপ।

এর ফলে, পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের আপেক্ষিক প্রতিযোগিতা অক্ষুণ্ণ থাকছে।

ওই বার্তায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান আলোচক ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, "আমরা একটি সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক এড়াতে সক্ষম হয়েছি। এটি আমাদের পোশাক খাত এবং এর ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষের জন্য সুখবর। আমরা আমাদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা অক্ষুণ্ণ রেখেছি এবং বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে প্রবেশের নতুন সুযোগ তৈরি করতে পেরেছি।"

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়