রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় হঠাৎ বেড়েছে জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলাব্যথায় আক্রান্ত রোগী। বিশেষ করে গত দুই সপ্তাহে সরকারি হাসপাতালগুলোতে এসব উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ১৪ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। একই পরিবারের একাধিক সদস্য একই সঙ্গে আক্রান্ত হচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, এটি মৌসুমি ভাইরাস জ্বর হলেও বিশেষ করে ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া একসঙ্গে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। ফলে রোগীরা বেশি জটিলতায় পড়ছেন।
শনিবার সমকালকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘একটি পরিবারে একজন প্রথমে আক্রান্ত হচ্ছেন, তার পর ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অন্যরাও একই উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। শরীর ব্যথা, মাঝারি জ্বর, গলাব্যথা, মাথা ভার ও হালকা কাশি– এগুলোই সাধারণ লক্ষণ।’
ঢামেক হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ের প্রথম ১৪ দিনে যেখানে আট হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছিলেন, সেখানে ১৪ থেকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে এ সংখ্যা দাঁড়ায় সাড়ে ৯ হাজারের বেশি। এ সময়ে ভাইরাস জ্বরবিষয়ক ৭৫ হাজারেরও বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিত্রও অভিন্ন। ২৯ জুলাই হাসপাতালটির ডেঙ্গু কর্নারে ভর্তি ছিলেন ৩৪ জন, শিশু কর্নারে আরও ১১ জন। পুরো জুলাইয়ে এখানে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৫৪৫ জন, এর মধ্যে দ্বিতীয়ার্ধে ভর্তি হয়েছেন ৮২০ জন, যা আগের চেয়ে অনেক বেশি।
মুগদা জেনারেল হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, বেশির ভাগ রোগীর একই ধরনের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে– জ্বর, কাশি, গলাব্যথা ও দুর্বলতা। এসব সাধারণ ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ হলেও ডেঙ্গু ও ইনফ্লুয়েঞ্জাও একসঙ্গে ধরা পড়ছে, যা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। চিকিৎসকদের মতে, অনেকেই হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফলে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি পরিসংখ্যানের তুলনায় কয়েক গুণ হতে পারে।
চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে বিভ্রান্ত না হতে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে বলছেন বাংলাদেশে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, চিকুনগুনিয়ায় হাড়ের সন্ধিতে তীব্র ব্যথা হয়, র্যা শ ওঠে। ডেঙ্গুতে চোখের পেছনে ব্যথা, পাতলা পায়খানা ও পেট ব্যথা দেখা দেয়। ভাইরাস জ্বর হলে শুধু প্যারাসিটামলই যথেষ্ট, অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়াই ভালো।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আবহাওয়ার হঠাৎ গরম, আবার বৃষ্টি এই বৈচিত্র্য ভাইরাস সংক্রমণ বাড়াচ্ছে। এর সঙ্গে পানিবাহিত রোগও বেড়েছে, বিশেষ করে বন্যাকবলিত এলাকায়। জনসচেতনতা বাড়ানো ও রোগের লক্ষণ বুঝে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই এখন সবচেয়ে জরুরি। না হলে সাধারণ ভাইরাস জ্বরও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। উৎস: সমকাল।