শিরোনাম
◈ ঘরে ঘরে হঠাৎ বেড়েছে জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলাব্যথা, চিকিৎসকরা বলছেন একসঙ্গে তিন ভাইরাস ছড়াচ্ছে ◈ জুলাই সনদ নিয়ে ভুয়া‌ চিঠি, পুলিশ সদর দপ্তরের হুঁশিয়ারি ◈ শেখ হাসিনার বিচারের আগে নির্বাচন হবে না: উপদেষ্টা ফরিদা আখতার (ভিডিও) ◈ বেনাপোল বন্দর এলাকায় দুর্ধর্ষ চুরির ৪৮ ঘন্টার মধ্যে চোর গ্রেফতার ◈ ‘মেয়েদের নিয়ে নোংরামি থামানোর’ আহ্বান জানিয়ে রাজনীতি ছাড়লেন বৈষম্যবিরোধী নেত্রী (ভিডিও) ◈ ভারতীয় পণ্যে ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে মুখ খুললেন নরেন্দ্র মোদি ◈ ভারতের মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে হিমাচল প্রদেশ—প্রকৃতি ধ্বংসে সুপ্রিম কোর্টের সতর্কবার্তা ◈ সৌদি আরবের সঙ্গে প্রবাসী নিরাপত্তা চুক্তির পথে বাংলাদেশ: আসিফ নজরুল ◈ আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে প্রধানমন্ত্রী মোদি এখনও আমার টুইট কোনও উত্তর দেননি: ট্রাম্প ◈ কলকাতা বিমানবন্দরের কাঁচ ভেঙে পালানোর চেষ্টায় বাংলাদেশি যুবক গ্রেফতার

প্রকাশিত : ০২ আগস্ট, ২০২৫, ০৯:১১ রাত
আপডেট : ০৩ আগস্ট, ২০২৫, ১২:৫৩ রাত

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

দেশ অস্থিতিশীল করতে চায় আওয়ামী লীগ, সতর্ক পুলিশ

মহসিন কবির: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে ৫ আগস্ট। দিনটি সামনে রেখে নানা কর্মসূচি পালন করছে রাজনৈতিক দলগুলো। আওয়ামী লীগও আবারও সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। মাঝেমধ্যে নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করছে। পলাতক নেতারা ভার্চুয়ালি বৈঠক করছেন। দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। একটি জাতীয় গণমাধ্যম এমন খবর প্রকাশ করেছে। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তথ্য এসেছে, আগস্ট মাস ঘিরে বড় ধরনের চোরাগোপ্তা হামলা চালানোর চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গার্মেন্ট শ্রমিকদেরও দলটি ব্যবহার করতে পারে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সরকারের হাইকমান্ডের কাছে এ-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। আওয়ামী লীগের যেকোনো নাশকতা বা অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের শীর্ষকর্তারা ম্যারাথান বৈঠক করছেন। 

গতকাল বুধবারও পুলিশ সদর দপ্তরে অনির্ধারিত একটি বিশেষ বৈঠক হয়েছে। বৈঠক থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিটপ্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সবার মেইলে গোপন নোটও পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে জনমনে আতঙ্ক না ছড়িয়ে কৌশলী অভিযান চালাতে হবে। নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, ১ আগস্ট থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঢাকাসহ সারা দেশে ‘বেশ কঠোর’ থাকবে। পতিত আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী যাতে রাজধানী বা অন্য কোনো স্থানে জড়ো হতে না পারে, সেদিকে বিশেষ নজর দেবে। দেশের সীমান্ত এলাকায় আরও সক্রিয় হবে বিজিবি ও পুলিশ। আবাসিক হোটেল থেকে শুরু করে যানবাহন-রাস্তাঘাটে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় আছে, তাদের নজরদারি করতে বলা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সংগঠিত হচ্ছে। তারা আগস্ট মাসেই মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করবে বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি। যেসব তথ্য পাচ্ছি, তাতে বোঝা যাচ্ছে তারা আগের চেয়ে আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি সদস্য যেকোনো হামলা, নাশকতা প্রতিরোধ করতে সচেষ্ট। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের শীর্ষকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। 

বুধবার পুলিশ সদর দপ্তরে একটি অনির্ধারিত বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠক থেকে সারা দেশের পুলিশ ও র‌্যাবকে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে।’ ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আওয়ামী লীগের বিষয়ে বিশেষ প্রতিবেদন দিয়েছে। তারা কোথায় কোথায় হামলা বা নাশকতা চালাতে পারে, সেই তথ্যও মিলেছে প্রতিবেদনে।

আওয়ামী লীগের পাশপাাশি ছাত্র ও যুবলীগের নেতাকমীরা বেশি বেপরোয়া থাকবে। দেশের প্রতিটি থানা পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। অভিযান চালানোর সময় জনমনে যেন কোনো ধরনের আতঙ্ক তৈরি না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে বলা হয়েছে, নিরপরাধ লোকজনকে হয়রানি বা অর্থ আদায়ের প্রমাণ মিললে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপরারেশন) রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেশে শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। কোনো মহল শান্ত পরিবেশ অশান্ত করার চেষ্টা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।’ দেশবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সতর্ক আছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছর ১ জুলাই থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্দেশে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশও তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করে। এ ঘটনার পর দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে আন্দোলন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন সাধারণ লোকজন ও স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা। ১৬ জুলাই থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে।

বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, মেট্রো রেলস্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সেতু ভবন, বিভিন্ন থানা, পুলিশ ফাঁড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে লুটপাট করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গুলিতে প্রাণ হারান কোমলমতি শিক্ষার্থী, নিরীহ লোকজন। আবার দুর্বৃত্তদের হামলায় একাধিক পুলিশ সদস্যও মারা গেছেন। তাদের হত্যা ও থানা-ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে বেশিরভাগ আগ্নেয়াস্ত্র লুট করা হয়। আওয়ামী লীগের লোকজন বৈধ ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করেছে।

তারাও ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা-জেলা-উপজেলার নেতাকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্তা ও কিছু সম্পাদক আসামি হয়েছেন। তাদের ধরতে পুলিশ একটি তালিকা তৈরি করেছে। গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনই শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ভারতে পালিয়ে যান। 

আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের কিছু নেতা সরকার পতনের আগে ও পরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। অনেকে থাকেন আত্মগোপনে। তাছাড়া সাবেক আইনমন্ত্রীসহ প্রভাবশালী একাধিক মন্ত্রী, এমপি ও কিছু ব্যবসায়ী, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা ধরা পড়ে পুলিশ ও র‌্যাবের কাছে। এক বছর যেতে না যেতেই কেউ কেউ দেশে আসার পাঁয়তারাও করছে বলে পুলিশ তথ্য পেয়েছে। তথ্য পেয়ে নড়েচড়ে বসেছেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। সারা দেশে বাড়িয়েছে নজরদারি।

পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একসময় বাঘা বাঘা নেতার গর্জনে আমরা ছিলাম দিশেহারা। অথচ আজ তাদের দুরবস্থা। আমাদের তথ্যানুযায়ী, শতাধিক নেতা কলকাতায় আছেন। তাদের বিষয়ে আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। তারা কোন হোটেল বা বাসায় অবস্থান করছেন, সেই তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। কলকাতায় আমাদের সোর্স লাগানো আছে।’

কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, বুধবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একটি নির্দেশনা এসেছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা চোরাগোপ্তা হামলা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। দলটির পলাতক নেতারা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। পুলিশ স্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কঠোর নজরদারির পাশাপাশি হোটেলসহ নানা স্থানে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।

তবে জনমনে কোনো ধরনের আতঙ্ক তৈরি করতে নিষেধ করা হয়েছে বার্তায়। পুলিশ সুপাররা বলেন, ‘বার্তা পেয়ে আমরা সতর্কবস্থায় আছি।’ আবাসিক হোটেল ও যানবাহনে তল্লাশি চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পলাতক আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাদের  ধরার চেষ্টা চলছে। সীমান্ত এলাকায় বিজিবির পাশাপাশি পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি থানায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনও উল্লেখ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ-সংগঠনগুলো আগস্ট মাসে চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে পারে। এ সময় তারা বিভিন্নভাবে একত্রিত হয়ে স্বল্প সময়ের মিছিল করে আবার বিচ্ছিন্নভাবে জনসাধারণের সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করবে। বর্তমান সরকারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ করতে ছদ্মবেশে সক্রিয় থাকবে নেতাকর্মীরা। ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়কে কেন্দ্র করে অনলাইন ও অফলাইনে সংঘবদ্ধ প্রচারণার মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করবে। দলটির নেতা ও কর্মী সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা, থানায় হামলা, গার্মেন্ট শ্রমিকদের ব্যবহার ও ভাঙচুর চালাতে পারে।

এসব বিষয় মাথায় রেখে বিশেষ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসসহ সন্দেহভাজন সব যানবাহনে তল্লাশি, বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন, বিমানবন্দরের আশপাশে নজরদারি এবং মোবাইল প্যাট্রল বাড়াতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল, সাইবার প্যাট্রলিং এবং গোয়েন্দা নজরদারি জোরদারের নির্দেশও রয়েছে।

আগামী ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান দিবস উদযাপন ঘিরে কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সবকিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়