রাজধানীর মিটফোর্ডে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে এক ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনার পর সারাদেশে ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের একের পর এক নেতার পদত্যাগের খবর পাওয়া যাচ্ছে। শনিবার (১২ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত ৩০ জনের বেশি নেতা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পদত্যাগ করেছেন। অনেকেই পদত্যাগের ঘোষণার সঙ্গে তারা কোন কমিটির কী দায়িত্বে ছিলেন সেই প্রমাণও দিচ্ছেন ফেসবুকে। সূত্র: ঢাকামেইল
শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি আবেগঘন পোস্ট দিয়ে পদত্যাগ করেন আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (এইউএসটি) শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক লিসানুল আলম লিসান। ফেসবুকে পোস্টে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত কারণে’ তিনি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি লেখেন, ‘জন্মলগ্ন থেকে পারিবারিক রাজনীতির সূত্র ধরে দীর্ঘ ১০ বছরের উর্ধ্বে এই দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম।’
লিসানুল আলম লিসান ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে,আমি ব্যাক্তিগত কারণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল,আহসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ‘সাধারণ সম্পাদক’ পদ থেকে সরে দাড়াচ্ছি। জন্মলগ্ন থেকে পারিবারিক রাজনীতির সূত্র ধরে দীর্ঘ ১০ বছরের উর্ধ্বে এই দলের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলাম। বিএনপির একদম দুঃসময়েও দলের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলাম। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাবা জেলে থাকাকালীন (মামলা সংখ্যা ২৮), দীর্ঘ দুই মাসের ঊ র্ধ্বে বাড়ি ছাড়া হয়েছি। ভোর রাতে লুকোচুরি করে আম্মার সঙ্গে একবার দেখা করে আসতাম। ২৮ অক্টোবর সমাবেশ পরবর্তীও হরতাল অবরোধসহ বহু কার্যক্রমে যুক্ত ছিলাম। এই দলের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি ও বহু নির্মমতার ভাগিদার আমি হয়েছি। সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনেও সরাসরি সামনের সারিতেই আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম। এই সব কিছুর মূলে আমার একটাই স্বপ্ন ছিলো, ‘নতুন বাংলাদেশের বিনির্মাণ এবং একটা সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ।’
এছাড়াও পদত্যাগে ঘোষণা দিয়েছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য পারভেজ রানা প্রান্ত। শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দিয়ে বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। সবাই অবগতির জন্য জানাচ্ছি, আমি ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটির ‘আহ্বায়ক সদস্য’ পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বর্ষ থেকেই আমি ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। এই তিন বছরে সংগঠনের অনেকের ভালোবাসা পেয়েছি। আমি তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষণ করছি। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রদল এবং বিএনপির অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের নীতিবহির্ভূত কাজের জন্য আমি মানসিকভাবে অস্বস্তিবোধ করি। কখনো কখনো সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিলেও তা আমার দৃষ্টিতে যথেষ্ট নয় বলে মনে হয়েছে। আমি আশা রাখব জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং বিএনপির অন্যান্য অঙ্গসংগঠন বিশৃঙ্খলতা কাটিয়ে উঠে সম্পূর্ণ ছাত্রবান্ধব এবং জনবান্ধব হবে।’
ছাত্রদল মৌলভীবাজার জেলা শাখার সদস্য মুহাম্মাদ রাব্বি মিয়া ব্যক্তিগত কারণে সংগঠন থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। শুক্রবার (১১ জুলাই) দিবাগত রাতে নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে রাব্বি মিয়া বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, মৌলভীবাজার জেলা শাখা কমিটি'র সদস্য পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। বিগত কয়েক বছর ধরে আমি ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম এবং এই সময়ে সংগঠনের অনেকের ভালোবাসা পেয়েছি। তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’
তবে সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রদল এবং বিএনপির অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ‘নীতিবহির্ভূত কার্যক্রম’ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে কিছু নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ড আমাকে মানসিকভাবে অস্বস্তিতে ফেলেছে। কখনো কখনো সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা আমার কাছে যথেষ্ট মনে হয়নি।’
এছাড়াও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. জাহিমুর রহমান জিসান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইশতিয়াক রহমান পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। শনিবার (১২ জুলাই) সকালে একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তারা দল থেকে পদত্যাগ করে নিজেদেরকে অরাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করেন।
ফেসবুক পোস্টে গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইশতিয়াক রহমান ও সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. জাহিমুর রহমান জিসান লেখেন, ‘আমি স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে এবং ব্যক্তিগত কারণে দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করছি। আজ থেকে নিজেকে অরাজনৈতিক মানুষে পরিণত করলাম। ব্যক্তিগতভাবে যে আদর্শ আমি ধারণ করতাম, ৫ আগস্ট-পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে সেই আদর্শের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি সাংঘর্ষিক।’
পোস্টে তারা আরও লেখেন, ‘দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় ভবিষ্যতে সেই আদর্শ কতটা সফল হবে, তাও প্রশ্নবিদ্ধ। যে আদর্শ নিয়ে ‘জুলাই বিপ্লব’ হয়েছিল, সেই শহীদদের রক্তের সঙ্গে কোনো গাদ্দারি আমি মেনে নিতে পারি না, সম্ভবও নয়। দেশের জন্য কাজ করতে কোনো দলীয় পদবির প্রয়োজন নেই দেশকে যে ভালোবাসে, সেই-ই প্রকৃত সন্তান। দেশের প্রয়োজনে সদা প্রস্তুত। সাধারণ জনতার কাতার থেকেই দেশের মঙ্গল কামনা করি। প্রত্যাশা করি, পরবর্তীতে দেশের শাসনব্যবস্থা যাদের হাতেই উঠুক, তারা যেন নিজেদের দেশের শাসক নয়, সেবক মনে করে।
পিরোজপুর জেলার তৃণমূল ছাত্রদেল নেতা রাকিব হাওলাদার লিখেন- আমি মো. রাকিব হাওলাদার, পিরোজপুর জেলার, ৩নং দূর্গাপুর ইউনিয়নের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি পদ থেকে নিজ ইচ্ছায় পদত্যাগ করিতেছি। আমার আল্লাহর কাছে হাশরের ময়দানে জবাব দিতে হবে আমার। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তিনি কমিটির প্যাডের ছবি শেয়ার করেন।
এদিকে সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনায় সারা দেশেই ছাত্রদলসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। অনেকেই দলের রাজনীতি থেকে সরে আসার ঘোষণা দিচ্ছেন।