শিরোনাম
◈ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য করোনা সংক্রমণ রোধে বিশেষ নির্দেশনা ◈ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নবায়নে বাংলাদেশিদের জন্য দুঃসংবাদ ◈ টিউলিপকে ফের তলব, ৫ ঠিকানায় গেল চিঠি ◈ কিয়ের স্টারমারের সাক্ষাৎ না পাওয়া ও টিউলিপ বিতর্কে সাফ জবাব ◈ সচিবালয় অভিমুখে মিছিল: পুলিশের লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড, উত্তপ্ত প্রেস ক্লাব এলাকা ◈ কেউ চাকু‌রিজীবী, কেউ ব‌্যবসায়ী হ‌য়েও খে‌লেন বিশ্বম‌ঞ্চে, ক্লাব বিশ্বকা‌পে অকল্যান্ড সিটির গল্প ◈ গৌরনদীতে  বাসের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত-১ ◈ শেরপুরে যাত্রীবাহী বাসের সাথে মটরসাইকেলসংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই নিহত-১ ◈ কালীগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত দুই কর্মী নিয়ে জামায়াত-বিএনপি ঠেলাঠেলী ◈ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সূচি প্রকাশ, অ‌স্ট্রেলিয়া খেল‌বে সর্বোচ্চ ম্যাচ, কম ম্যাচ বাংলাদেশের

প্রকাশিত : ১৫ জুন, ২০২৫, ১০:৫৫ দুপুর
আপডেট : ১৫ জুন, ২০২৫, ০৮:০৬ রাত

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

নির্বাচন কি ফেব্রুয়ারিতেই হবে?

এল আর বাদল : বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার ও অন্যতম প্রধান দল বিএনপি, বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই পক্ষই ছাড় দিয়ে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের ব্যাপারে একমত হয়েছে। লন্ডনে অনুষ্ঠিত প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একান্ত বৈঠক থেকে এমন বার্তা এসেছে।

তবে রোজা শুরুর আগে এই সময়ে নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংস্কার ও বিচারের অগ্রগতির দুটো শর্ত রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।
যদিও এ ধরনের সমঝোতা নিয়ে আপত্তি তুলেছে জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপি দল। -- বি‌বি‌সি বাংলা

প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচন কী ফেব্রুয়ারিতেই হচ্ছে, রাজনীতিতে কি অস্বস্তি, অনিশ্চয়তা কেটে যাবে?

নির্বাচনের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তির কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ছিল। একইসঙ্গে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এখন লন্ডন বৈঠকের বার্তা সে পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে।

বিএনপি অবশ্য মনে করছে, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। লন্ডন বৈঠকের যৌথ ঘোষণা অনুযায়ী সরকারকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন করতে হবে।

সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্বাচন প্রশ্নে অবস্থানের পরিবর্তনকে বিএনপি তাদের বিজয় হিসেবেই দেখছে। যদিও বিএনপিকেও ডিসেম্বরেই নির্বাচনের অবস্থান থেকে সরতে হয়েছে।

তবে, সরকার প্রধানের সঙ্গে কোনো একটি দলের নেতার বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়ে যৌথ ঘোষণা দেওয়ার নজির বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেই বলে বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে।

শুক্রবার লন্ডনে বৈঠকটি চলেছে দেড় ঘণ্টা সময় ধরে। এর সিংহভাগ সময়ই একান্তে কথা বলেছেন অধ্যাপক ইউনূস এবং তারেক রহমান।

বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তবে একান্ত বৈঠকে ঠিক কী কথা বা আলাপ হয়েছে বা কোন ধরনের সমঝোতা হয়েছে, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা রয়েছে।

অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি নেতার বৈঠকের যৌথ ঘোষণা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি। দলটির নেতারা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে একটি দল বা এক ব্যক্তির সঙ্গে সমঝোতা করা হয়েছে। এটিকে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে প্রতারণার শামিল বলেও বর্ণনা করছেন তারা।

এনসিপির এই আপত্তিকে বিএনপি ও এর মিত্র দলগুলো আমলে নিচ্ছে না বলা যায়। বিএনপি নেতারা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে দুজন ছাত্র প্রতিনিধি রয়েছেন। এছাড়াও সরকারের ওপর এনসিপির একটা প্রভাব ছিল। কিন্তু নতুন এই দলটি মানুষের মাঝে সেভাবে অবস্থান তৈরি করতে পারেনি।

ফলে এনসিপির অবস্থান ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করেন না বিএনপি নেতারা।

অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম আরেক অংশীজন জামায়াতে ইসলামী অবশ্য রোজার আগে বা পরে নির্বাচন করার দুটি প্রস্তাবের কথাই বলে আসছিল। তবে বিএনপির সঙ্গে সরকার প্রধানের বৈঠক ও যৗেথ ঘােষণার প্রক্রিয়া নিয়ে এনসিপির অবস্থানের সঙ্গে জামায়াতের অবস্থানের মিল রয়েছে।

বিদেশের মাটিতে একটি দলের সঙ্গে সরকার প্রধানের বৈঠক থেকে দেশের নির্বাচন নিয়ে যৗেথ ঘােষণা দেওয়ায় সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জামায়াত। এছাড়া ইসলামপন্থী ও বামপন্থী অন্য দলগুলার ভিন্নমত থাকলেও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ক্ষেত্রে তা বাধা হয়ে দাঁড়াবে না বলে বিএনপি মনে করে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, অনেক দলের ভিন্নমত থাকলেও ফেব্রুয়ারিকে লক্ষ্য হিসেবে নিয়ে দেশ নির্বাচনী সড়কে উঠেছে, এখন সাধারণ মানুষের মধ্যেও সেই ধারণা তৈরি হবে।

-- ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে রাজি কেন সরকার?--

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলে আসছিলেন।

সেখান থেকে কিছুটা সরে এসে এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। সে ঘোষণা এসেছিল ঈদ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া তার ভাষণে। জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলো সে ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছিল। এনসিপিও আপত্তি করেনি। তবে আপত্তি তুলেছিল বিএনপি ও এর মিত্ররা।

নির্বাচনের এই সময় নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়ছিল। ফলে সরকারের সহযোগিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তির অসহযোগিতার প্রশ্ন সরকারের ওপর চাপ তৈরি করেছিল। সেই চাপের মুখে নির্বাচন প্রলম্বিত করার পথে হাঁটা সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল না।

এখন এপ্রিল থেকে সরে আসার পেছনে ওই পরিস্থিতি সরকার অনুধাবন করেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন।

লেখক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, সরকার প্রধান বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন দূর করতে চেয়েছেন। সে কারণে আগের অবস্থান থেকে অনেক ছাড় দিয়ে এখন তাদের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলতে হয়েছে।

-- বিএনপিও ছাড় দিয়েছে, কিন্তু কেন?--

দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর আগে বলেছিলেন, ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে হবে। সেই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছিল, নির্বাচনের সময় নিয়ে বিএনপি একা হয়ে পড়ছে কী না?

কিন্তু দেখা যাচ্ছে, লন্ডন বৈঠকের ব্যাপারে সরকার প্রস্তাব দিয়েছিল এবং বিএনপিরও আগ্রহ ছিল। শেষপর্যন্ত সেই বৈঠকে তারেক রহমান রোজার আগে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রস্তাব দেন। তার প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা একমত হন।

যদিও দলটির নেতারা এটিকে তাদের বিজয় বা রাজনীতির টার্নিংপয়েন্ট হিসেবে দেখছেন। কিন্তু ডিসেম্বরেই নির্বাচনের প্রশ্নে তাদের ছাড় দিতে হয়েছে।

বিএনপি যে তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে আসছে, তাদের একজন খলিলুর রহমান, লন্ডন বৈঠকের পর তাকেই বিএনপির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করতে দেখা গেছে।

ফলে দলটি তাদের অন্য দাবিগুলোর ব্যাপারে ছাড় দিয়েছে, এমন আলোচনাও রয়েছে রাজনীতিতে। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, নির্বাচনে তাদের ক্ষমতায় আসার বিষয়ে একটা বিশ্বাস কাজ করছে দলটিতে। সেই সম্ভবনা দলটি হারাতে চায় না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়