শিরোনাম
◈ পাকিস্তানের আকাশে এক রহস্যময় দৃশ্য! গোপনে ভয়ংকর কোনো অস্ত্রের পরীক্ষা নাকি প্রাকৃতিক ঘটনা? ◈ পরিবেশ ও নদী রক্ষা করে সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ◈ বাংলাদেশে চীনের সহায়তায় ড্রোন উৎপাদন কারখানা স্থাপন করছে বিমানবাহিনী, ডিসেম্বরেই শেষ হবে নির্মাণকাজ ◈ ১৯ বছর পর ময়নুলকে দেশে ফিরিয়ে আনলো সেনাবাহিনী ◈ দেশেই ড্রোন ও অস্ত্র উৎপাদন: প্রতিষ্ঠা হচ্ছে বিশেষায়িত ডিফেন্স ইকোনমিক জোন ◈ মিশরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাদুঘর চালু, কী আছে সেখানে ◈ যে কারণে সকাল থেকে রাজধানীতে তীব্র যানজট, কারণ জানাল ডিএমপি ◈ ‘নৌকা’ উপহার নিয়ে বিপাকে উপদেষ্টা, কী করবেন জানতে চাইলেন ফেসবুকে ◈ বিশ্ব ইজতেমা নির্বাচনের আগে হচ্ছে না: ধর্ম উপদেষ্টা ◈ বিএনপি-জামায়াত টানাপোড়েনে বিব্রত সরকার, উদ্যোগ নিয়েছে সমঝোতার

প্রকাশিত : ০২ মার্চ, ২০২৪, ১২:২৬ রাত
আপডেট : ০২ মার্চ, ২০২৪, ১২:২৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বেইলি রোডের আগুন, জাহান্নামে পোড়া!

কাকন রেজা 

কাকন রেজা: আমাদের উন্নয়নের অসারত্ব আবার দেখিয়ে দিলো বেইলি রোডের আগুন। এই অসারত্বের কথা লিখে আসছি নিমতলী-চুড়িহাট্টার আগুনের ঘটনা থেকে। বলেছি, উন্নয়নের প্রথম ও প্রধান কথা হচ্ছে মানুষের জীবনরক্ষা। বহুতল ভবন আছে। আছে চাকচিক্য, আলোর ঝলকানি। কিন্তু ফায়ার তথা ইমার্জেন্সি এক্সিট নেই, সেই ভবনের সকল চাকচিক্য, আলোর ঝলকানি সব অর্থহীন। তেমনি অর্থহীন হয়েছে আমাদের উন্নয়নের ইমারত। যে ইমারতে ইমার্জেন্সি এক্সিট নেই। 

পরিসংখ্যানে আসি। ফায়ার সার্ভিস বলছে, গত বছরে আগুনে মারা গেছে একশ দুইজন। আহতের সংখ্যা প্রায় তিনশ’র কাছাকাছি। গেলো বছর ঈদের আগে খোদ কেন্দ্রীয় ফায়ার সার্ভিসের কার্যালয়ের সামনেই আগুনে পুড়ে গেছে বঙ্গবাজার। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে হাজারো ব্যবসায়ীর ভবিষ্যৎ। উদ্ধার করা যায়নি কিছুই। ২০১৯-এ নিমতলী-চুড়িহাট্টায় কেমিক্যালের আগুনে পুড়ে মারা গেছে ১৯৫ জন মানুষ। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের একটি গুদামের রাসায়নিক থেকে লাগা আগুনের কথাও মনে আছে অনেকের। এসব আগুন নিয়ে তখনই লিখেছিলাম। একটি নয়, কয়েকটি লেখা। বলেছিলাম আধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার বিষয়ে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বরং উল্টো আমরা শুনে আসছি কথিত উন্নয়নের গল্প, যা মাঝে-মধ্যে পরিণত হয়েছে শোকগাথায়। ২০২২-এ উড়াল সড়ক বানাতে গিয়ে গার্ডার চাপায় মারা গিয়েছিলেন পাঁচজন। সুতরাং উন্নয়নের আলাপ শোকগাথায় পরিণত হবার কথা মিছে নয়। 

১৪ বছর পার হয়ে গেছে নিমতলী দুর্ঘটনার। প্রথম আলো ২০২১ সালে ২৫ এপ্রিল এ বিষয়ে ফলোআপ প্রতিবেদনে জানিয়েছিলো, ১২৪ জন মানুষের মৃত্যুতে কোনো মামলাই হয়নি। শুধু জিডি হয়েছিলো। কিন্তু সেই জিডিরও কোনো তদন্ত হয়নি। কেন হয়নি তার কোনো উত্তর নেই। কেউ চায়নি সেই উত্তর। এখন প্রশ্ন করতে পারেন, কে চাবে? এর উত্তর নেই, বা দেবার ক্ষমতা-সাহস নেই। এই উত্তর না দিতে পারার অসহায়ত্বই হলো উন্নয়নের গল্পের অসারতা। 

আসি আধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা বিষয়ে। ঢাকা শহরের উন্নয়নের গল্প মার খায়, যখন রাস্তায় ফায়ার হাইড্রেন্ট অনুপস্থিত থাকে। সারা ঢাকায় জলাশয় নেই বললেই চলে। হাতির ঝিল থেকে হেলিকপ্টারে পানি নেয়ার ব্যর্থ কসরত আমরা দেখেছি। উল্টো হেলিকপ্টারের পাখার বাতাসে আগুনের পরিধি বেড়েছে। ঢাকায় ফায়ার হাইড্রেন্টের কথা উঠলে সঙ্গতই উন্নয়নের গল্প থেমে যেতে বাধ্য হয়। উপায় কী, কারণ আমাদের তো এক পানিই ভরসা। অথচ কোনো রাসায়নিকে পানি উল্টো কাজ করে।  যা দেখেছি সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডে। তবু আমরা সব আগুনে পানি ছিটিয়ে যাই। কিন্তু সেই পানি ছিটানোর যন্ত্রও আমাদের সে পরিমানে কেনা হয় না। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া হয় না অন্যান্য সামগ্রী কিনতেও। তারচেয়ে অনেক বেশি দেয়া হয় মানুষের প্রতিবাদ বন্ধ করতে গরম পানি ছিটানোর গাড়ি ও অন্যান্য সামগ্রীর জন্য। উৎসবের আতশবাজি কিনতে আমাদের শতকোটি টাকা খরচ হলেও ২০২১-২২ সালে আগুন নেভানোর যন্ত্রাদি কিনতে মাত্র সাড়ে পনেরো কোটি টাকার কিছু বেশি খরচ করা হয়েছে এমনটাই জানিয়েছে ‘শেয়ার বিজ’ তাদের ২০২৩ এর ১৯ এপ্রিল করা এক প্রতিবেদনে। একে কী বলবেন, অক্ষমতাও তো বলতে পারবেন না, যেখানে আতশবাজি কেনা হয় শতকোটি টাকার। বছরব্যাপী নানা উৎসব করা হয় মানুষের ট্যাক্সের টাকার শ্রাদ্ধ করে। তাহলে কী বলবেন, অন্ধত্ব? 

উঁচু ভবনে আগুন নেভানোর সক্ষমতা আমাদের নেই বললেই চলে। আমাদের নেই আধুনিক রোবটিক সিস্টেম, যা এখন উন্নত বিশ্বে ব্যবহার হয়। ফোম নেই আগুন নেভানোর জন্য। নেই ফায়ার বল। যা বেইলী রোডের আগুন নেভানোর জন্য জরুরি ছিলো। আগুন নেভানোর কাজে ড্রোনের ব্যবহার এখন অনেক জায়গাতেই দেখা যায়। আমাদের ড্রোনের ব্যবহার ছবি তোলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আগুন যাতে না ছড়ায় সেজন্য উন্নত বিশ্বে তৈরি করা হয় ঘন কুয়াশা, হাই ফগ। আমরা শুধু পানি ছিটাই। সেই পানি ছিটানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও আমাদের নেই। ঘিঞ্জি এই শহরে নেই কোনো ফায়ার হাইড্রেন্ট। যার ফলেই কেন্দ্রীয় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সমুখে বঙ্গবাজারে আগুন লাগলেও নেভানো সম্ভব হয় না। যেমন নেভানো সম্ভব হয় না উন্নয়নের আগুনে বুলি। শেষ করি ২০২২ সালে একটি লেখার শেষ অংশ দিয়ে, সে লেখায় সামাজিকমাধ্যমে একজনের লেখার উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছিলাম। সঙ্গত কারণেই তার নাম উহ্য রাখা হয়েছিলো। তিনি লিখেছিলেন, ‘একটা জাহান্নামে যাওয়ার আগে আরেকটা জাহান্নামে পোড়াচ্ছো কেন মাবুদ?’  কী ভয়াবহ কথা, কী ভয়াবহ অসহায়ত্ব! বেইলি রোডের পুড়ে যাওয়া মানুষগুলো যেন সে কথারই পুনরাবৃত্তি করে গেলো পুনর্বার। লেখক : সাংবদিক ও কলামিস্ট

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়