ড. কামরুল হাসান মামুন: জার্মানির ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে খালেদ মুহিউদ্দীন আমাদের ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেন। এই অনুষ্ঠানটি ছিল অনেকটা বিবিসি থেকে প্রচারিত হার্ড টক্ এর মতো। দারুণ, দারুণ প্রশ্ন এবং দারুণ সব উত্তর, প্রতিউত্তর আর পাল্টা প্রশ্ন। বাংলাদেশের কোনো টিভি বা রেডিও চ্যানেল এরকম একটি সাক্ষাৎকার নেওয়া এবং প্রচার করার সাহস রাখে? খালেদ মুহিউদ্দীন পেরেছেন। কারণ ডয়চে ভেলে একটি বিদেশি চ্যানেল। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের মানুষ ড. ইউনূস সম্পর্কে বিশদভাবে জানার সুযোগ পেলো। দেশের প্রায় সকল মিডিয়া এখন বিটিভি হয়ে গিয়েছে। কারণ সকল প্রাইভেট মিডিয়া সেন্টারগুলোর মালিকও সরকারি দলের নেতা বা বড় সুবিধাভোগী।
খালেদ মুহিউদ্দীনের পুরো অনুষ্ঠানটি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনেছি। এমনি এমনি কি আর সারা বিশ্বের সকল ক্ষমতাধর মানুষেরা তার জন্য পাগল। যেই মানুষটাকে আমাদের মাথার উপরে রাখা উচিত সেই মানুষটাকে আমরা নিয়মিতভাবে আছাড় দিচ্ছি। যেই মানুষটা ইচ্ছে করলেই বিশ্বের যেকোনো দেশের নাগরিক হয়ে থাকতে পারতেন, সেই মানুষটি নানা দেশের নাগরিক হওয়ার আমন্ত্রণকে ছুঁড়ে ফেলে বাংলাদেশেই থেকে যেতে চাইছেন। তিনি বলেছেন, আমি এই দেশের সন্তান, এই দেশেই থাকবো। যেই মানুষটার নিজের নামে কোনো বাড়ি নাই, সম্পদ নাই সেই মানুষটাকে ন্যাক্কারজনকভাবে হেনস্থা করছি। এই বছর প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিকে ড. ইউনূসের সামাজিক ব্যবসাকে ধারণ করেছে।
পৃথিবীর প্রায় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. ইউনূসের সামাজিক ব্যবসার ধারণা পড়ানো হয় এবং অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনূস সেন্টার আছে। ড. ইউনূসকে নিয়ে ১২২ জন নোবেল বিজয়ী বিবৃতি দেন এবং তাকে নিয়ে তারা শংকা প্রকাশ করেছেন। পৃথিবীতে এমন দেশ কোথায় আছে যেই দেশে তার নোবেল জয়ীকে এত হেনস্থা করে আর এমন মানুষ কোন দেশে আছে যার জন্য ১২২ জন নোবেল জয়ী একত্রিত হয়ে বিবৃতি দেয়? এই দেশের অনেক মানুষ আছে যারা ব্যাংকের টাকা লুটে নিয়ে বিদেশে পাচার করছে, অথবা দুর্নীতি করে বিদেশে টাকা পাচার করছে তারা কত সম্মানে দেশের রাজার মতো আছে। আর এই মানুষটি বরং বিদেশ থেকে টাকা উপার্জন করে দেশে আনছে সেই টাকা আবার নিজের নামে রাখছেন না। অতচ তার নামে মামলা টামলা করে তাকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছে। খালেদ মুহিউদ্দীনের সেই সাক্ষাৎকারের হাজার হাজার মানুষ কমেন্ট করেছেন। সেখান থেকে একটি কমেন্ট এখানে কাট পেস্ট করলাম।
পড়ুন এবং ইউনূসকে জানুন। ‘আমি প্রফেসর ডক্টর ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের থেকে শিক্ষা ঋণ পেয়েছিলাম। কৃষক বাবার আমরা ৪ বোন ১ ভাইয়ের টেনে-টুনে চলা সংসারে সে সময় মাসে ৩০০০ হাজার টাকার ঋণই অনেক বেশি ছিলো। এখন উচ্চ শিক্ষার জন্য ইউরোপে আছি জার্মান সরকারের স্কলারশিপ পেয়েছি। টাকার ঋণ তো ২০১০ সালেই শোধ করেছি। তবে মানুষ হিসেবে এই ঋণ কোনোদিনই শোধ করতে পারবো না। এরকম মানুষ শুধু সে একা নয়। অসংখ্য। শুধু তাই না ড. ইউনূস দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের নার্সিং ইনস্টিটিউট গড়েছেন। সেখান থেকে দেশে আন্তর্জাতিক মানের নার্স তৈরি হচ্ছে যারা দেশে এবং বিদেশে সুনামের সাথে কাজ করছে। এমন মানুষকে আমরা কীভাবে এতো হেনস্থা করি? লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মতামত লিখুন :