শিরোনাম
◈ ভালোবাসার শহর প্যারিসে বৃষ্টিভেজা রাতে শুরু হলো অলিম্পিকস ২০২৪ ◈ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আজ ◈ কারফিউ আরো শিথিলের সিদ্ধান্ত হবে আজ, জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ একদফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির ◈ শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা  ◈ ডিবি হেফাজতে কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ◈ কোটা আন্দোলন: ঢামেকে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীসহ তিন জনের মৃত্যু ◈ হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব জনগণ একদিন আদায় করে নেবে: মির্জা ফখরুল ◈ প্রতিটি হামলার ঘটনার বিচার হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ সাম্প্রতিক সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৩:১৬ রাত
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৩:১৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নতুন শিক্ষা কারিকুলাম : ‘নবম-দশম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান-উচ্চতর গণিত ও বাস্তবতা

শিশির ভট্টাচার্য্য
শিশির ভট্টাচার্য্য: [১] নবম-দশম শ্রেণির যে পদার্থ বিজ্ঞান বইটার এতো প্রশংসা করলাম, সেটি নাকি আর পড়ানো হবে না। শুধু একটি সাধারণ বিজ্ঞান পড়ানো হবে। আরে এতো খুবই ভালো খবর, আগে বলতে হয়। আমি মনে করি, এতে কোনো সমস্যা হবে না। শুধু তাই নয়, এটাই উচিত সিদ্ধান্ত। এই কথাটি বলার পেছনে ব্যক্তিগত কারণ আছে। আমি যখন নবম শ্রেণিতে, ১৯৭৬ সালে, আমার বয়স তখন ছিলো মাত্র ১২ বছর। মাধ্যমিক পাস করি যখন, তখন বয়স ১৪ বছর। অল্প বয়সের কারণে কি না জানি না, সব বিষয় আমার কঠিন লাগতো। অথচ বেশ মনোযোগ দিতাম আমি পড়াশোনায় এবং আমার সহপাঠীরা আজও সাক্ষী দেবে, ছাত্রও আমি খারাপ ছিলোাম না। যে বন্ধুরা বিজ্ঞান পড়তো, তাদের পাঠ্যবইও কঠিন মনে হতো। কী বলবো, সাধারণ বিজ্ঞানই কঠিন লাগতো। এখনকার পদার্থ বিজ্ঞান বইটাতে যেসব পড়া আছে, সেগুলো পড়তে হলে, নিঃসন্দেহে আমি অন্তত মাধ্যমিকের চৌকাট পার হতে পারতাম না। 
 
যারা নবম শ্রেণিতে এই বই পড়ানোর পক্ষে, তারা একেকজন বিদ্যাদিগগজ, তাদের সন্তানেরাও, তাদের প্রত্যেকের খুঁড়ে খূঁড়ে দণ্ডবৎ, কিন্তু কথায় বলে ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা!’ নিজের সেই সময়ের প্রাণ এবং পাস বাঁচাতেই আমি চাই, মাধ্যমিক পর্যায়ে এতো কঠিন বিষয় পড়ানো না হোক। আমি যা পারিনি, এখনও পারি না, অন্যের উপর তা চাপিয়ে দেবোÑ এতোটা পাথরমনা আমি হতেই পারবো না। ১৯৭৬ সালে আমি যখন নবম শ্রেণির ছাত্র তখন আমার ক্লাসের চল্লিশ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জনা ছয়েক নিয়েছিলো বিজ্ঞান, জনা চারেক কলা এবং বাকি চল্লিশ জন বাণিজ্য। অবস্থা কি এখন পালটেছে? আমার তো মনে হয় না। ২০২৩ সালে নবম-দশম শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থীর কতোকরা কতোজন বিজ্ঞান নিয়েছে? আমরা যারা বাণিজ্য ও কলা পড়তাম, তারা একটা সাধারণ বিজ্ঞান পড়তাম। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ইত্যাদি পড়তো। আমার মনে একটু হীনম্মন্যতা ছিলো এই ভেবে যে ওরা ভালো ভালো সব বিষয় পড়ে কতো এগিয়ে যাচ্ছে, আমি পড়ে আছি হিসাব-কিতেঠাব নিয়ে। 
 
[২] বছর চারেক পর চাকরির বাজারে গিয়ে দেখি, আমার বিজ্ঞান ও কলার বন্ধুরা আমার সঙ্গে লাইন দিচ্ছে আমলাতন্ত্র কিংবা ব্যাংকে একটা কেরানির চাকরির জন্য। তাদের পদার্থ-রসায়ন-জীববিজ্ঞানে গভীরতর জ্ঞান কোনোই কাজে লাগেনি তাদের জীবনে। আমলাতন্ত্র বা ব্যাংকের কাজের জন্য যতোটুকতো হিসাব-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, ম্যানেজমেন্ট জানা দরকার, তার চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞান আমার ছিলো। আমার বন্ধুদের এসবের কোনো জ্ঞানই ছিলো না। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়রা নিজেরা খেটে মরেছে, কাজের জগতে এসে আমার হক মেরেছে এবং নিজেদের হকটুকতো পায়নি। আমি মনে করি, তারা না হতে পেরেছে ভালো আমলা, না হতে পেরেছে মাঝারি বা নিম্নমানের বিজ্ঞানী। এ ঘটনা শুধু যে বাংলাদেশে, তাতো নয়, বিদেশেও একই চিত্র। 
 
১৯৬৮ সালে প্রথম শ্রেণিতে যখন ভর্তি হয়েছিলোাম, তখন প্রথম শ্রেণির দুই গ্রুপ মিলিয়ে শিক্ষার্থীসংখ্যা ছিলো ৮০ জন। এর মধ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলোাম জনা পাঁচেক। আশেপাশের বিভিন্ন স্কুল থেকে আসা নবম শ্রেণির পঞ্চাশ জন ছাত্রের মধ্যে জনা পঁচিশেক মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলো। আমরা ধরে নিতে পারি,চট্টগ্রামের কতোমিরা এলাকার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৯৬৮ সালে (ধরা যাক) ২৫০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে দশ বছর পর ১৯৭৮ সালে মাধ্যমিক দিয়েছিলো ২৫ জন। বাংলাদেশে শিক্ষার্থী ঝরে (কিংবা ঝড়ে) পড়ার হার যে কোনো ঝড় এবং ফলবান বৃক্ষকে লজ্জা দেবে। কলেজ পর্যায়ে গিয়ে নবম শ্রেণির সাবেক ছাত্র আমরা জনা পাঁচেক ছিলোাম কিনা সন্দেহ। নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান যারা নিয়েছিলো, তাদের মধ্যে একজন মাত্র ডাক্তার হয়েছিলো। ও অবশ্য আমাদের এলাকার ছাত্রও ছিলো না। পরবতীর্কালে এই বন্ধুটি এতটাই কতোসংস্কারাচ্ছন্ন এবং মৌলবাদী মানসিকতেঠাসম্পন্ন হয়েছিলো যে তাকে আমি ফেসবুকে খুঁজে নিয়েও পরে আনফ্রেন্ড করতে বাধ্য হয়েছিলোাম। আমার প্রজন্মের ৯৯%ভাগ শিক্ষার্থী মাধ্যমিকেই ঝরে গেছে। ঐ বন্ধুদের জীবনে বিজ্ঞান বলতে ঐ সাধারণ বিজ্ঞানের জ্ঞানটুকতোই সম্বল। তাই যদি হয়, তবে এই বিজ্ঞানটুকতো যতটা সম্ভব বিশদভাবে পড়ানো দরকার ছিলো, পড়ানো উচিত ছিলো। এই দরকার এবং ঔচিত্যই প্রতিফলিত হয়েছে এতদিন পর, বর্তমান কারিকতোলামে। 
 
[৩] শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া যদি বাংলাদেশের বাস্তবতা হয়, তবে নবম-দশম শ্রেণিতে বিভাগ বেছে নেবার কোনোই যৌক্তিকতেঠা নেই। আগে পরে যারা পড়াই ছেড়ে দেবে, তাদের জন্য বিজ্ঞানই কি, কলাই বা কি। যারা থাকবে, তারাতো ভাগ্যবান এবং বুদ্ধিমান, একটা না একটা ব্যবস্থা তাদের হয়েই যাবে। উন্নত দেশেও, যেমন কানাডার কতোইবেকেও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান কিংবা কলা বেছে নেয়। এরপর দুই বছরের একটি কলেজ ডিগ্রি থাকে, বিজ্ঞান, কলা কিংবা কেউ চাইলে উভয় বিষয়ে। এই কলেজ ডিগ্রি দিয়ে চাকরি-বাকরি করে খাওয়া যায়। এটা অনেকটা আমাদের এককালের পাস কোর্সের মতো। কেউ যদি চায়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এসব পড়তেই পারে। 
 
আর আমরা কী করি? সকল মানের সকল গাঁধার সামনে এমএ ডিগ্রির মুলো ঝুলিয়ে তাদের আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে রাখি, যাতে চাকরি বাজারে তারা ঢুকতে না পারে। অগত্যা তারা দেরিতে কর্মজীবনে প্রবেশ করে, দেরিতে যৌনজীবন শুরু করে, যার ফল ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্যের উপর না পড়ে পারে না। শিক্ষার সঙ্গে জীবনের প্রায় সবকিছু জড়িত, শিক্ষাই যদি হয় আসলেই জাতির মেরুদণ্ড। গত ষাট বছর ধরে নবম শ্রেণিতে আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে আসছে। এই মেধাবীদের কতোকরা হার কতো? খুব বেশি হলে ১%! এই ১%-এর কথা ভেবে মাধ্যমিকের কারিকতোলাম রচনা করা কি যুক্তিযুক্ত? পদার্থবিজ্ঞানের যে বইটির আমি এত প্রশংসা করলাম, সেটি যদি ভালো হয়ে থাকে, তবে একাদশ শ্রেণিতেই সেটি পড়ানো যেতে পারে, যারা সেটা পড়তে চাইবে। যদি তার পরেও কোনো ঘাটতি থাকে, তবে সেই ঘাটতি সহজেই তারা পূরণ করে নিতে পারবে, কারণ তারা মেধাবী। তাছাড়া আজকাল ইন্টারনেটে সব আছে। গুগল-ইউটিউব ব্যবহার করেও অনেক কিছু শেখা যায়। সব বিষয়ের, সব স্তরের কোর্স ইন্টারনেটে সহজলভ্য।
 
কানাডার স্কুলে-কলেজে বিজ্ঞান পড়েছেন যাঁরা, তাঁদের জিগ্যেস করলাম: ‘নবম-দশম শ্রেণিতে পদার্থবিজ্ঞান আর উচ্চতর গণিত বাদ দেওয়া হয়েছে। আপনারা কী মনে করেন?’ ওদের প্রত্যেকের সোজাসাপটা উত্তর ছিলো: ‘বাংলাদেশ উচিত কাজ করেছে। এত অল্প বয়সে পদার্থ বিজ্ঞান পড়ার প্রয়োজনটা কী? আমরাও  তো পড়িনি কানাডায়। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে পদার্থ বিজ্ঞান শুরু করলেই যথেষ্ট। এতো পড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। যতো বেশি পড়াবে ততো বেশি ড্রপআউট। ‘বেশি’ পড়াতে চাও, নাকি ‘বেশির ভাগ’-কে পড়াতে চাও? এGive education to a lot, OR a lot of education to a few? আগে দরকার বেশির ভাগের বিজ্ঞানমনষ্কতা। চারপাশের জগৎ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলে যেন তারা চিনতে পারে। এটুকতো যদি নবম-দশম শ্রেণিতে করা যায়, শেখানো যায়, তাহলেই যথেষ্ট।’
 
[৪] আমার যে সহপাঠীরা বিজ্ঞান বিভাগে চলে গিয়েছিলো আমাকে বাণিজ্য বিভাগে ফেলে, আগেই বলেছি, অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং হিসাবিজ্ঞান সম্পর্কে কিছুই তারা শেখেনি। আমি কিন্তু সাধারণ বিজ্ঞান কমবেশি শিখে আমার ‘বৈজ্ঞানিক’ বন্ধুদের সঙ্গে বিজ্ঞান নিয়ে অন্তত প্রাথমিক আলাপটা করতে পারি। এটা ঠিক, আমি আইনস্টাইন হতে পারিনি, কিন্তু আমরা বন্ধুরা বিজ্ঞানচর্চা দূরে থাক, বিজ্ঞানমনস্কও হতে পারেনি। বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের স্নাতকদের সিংহভাগ অন্ধবিশ্বাসী ও কতোসংস্কারচ্ছন্ন। যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন করতেই তাদের শেখানো হয়নি। অথচ আবদুল্লা আলমুতী শরফুদ্দীনের লেখা সাধারণ বিজ্ঞানেই আমাদের শেখানো হয়েছিলো: বিজ্ঞান কাকে বলে, বিজ্ঞানমনস্ক বলতে কী বোঝায়। বুয়েটের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, শুনেছি বহুদিন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া নিষিদ্ধ ছিলো। কোনো কোনো অভিভাবকের হুমকিতে এখন নাকি গাওয়া হয়। বলুন দেখি, কী লাভ হয়েছে, এতো এতো বিজ্ঞান পড়িয়ে? প্রশ্নটা হায় হায় করা বি-পক্ষের লোকদের কাছেই রাখলাম। প্রতিটি দেশ তার প্রয়োজন ও অবস্থা অনুসারে কারিকুলাম তৈরি করবে। বিশ্বের কোন দেশ কী করছে, তাও জানতে হবে বৈকি। সব দেশে নবম-দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান-কলা-বাণিজ্য বিভাগ করা হয় না। অবশ্য যদি সেটা করা হয়ও বাংলাদেশকে যে বিদেশের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই। বাংলাদেশের দুই একটা ছেলে অল্প বয়স থেকেই গাদা গাদা বিজ্ঞান পড়ে বিদেশের শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতিয়োগিতায় টিকে থেকে পৃথিবীকে আমূল বদলে দেবে, কারও কারও সেই দুঃস্বপ্নের বোঝা, শিক্ষার্থীদের যারা সিংহভাগ, মাঝারি ও নিম্নমানের শিক্ষার্থী, তাদের উপর কোন যুক্তিতে চাপিয়ে দেওয়া হবে?
 
[৫] শৈশব ও তারুণ্যে খুব বেশি লেখাপড়া আমি করিনি। ভাগ্যিস করিনি। তখন এনার্জিটুকতো বেঁচে গিয়েছিলো বলেই আজও লেখাপড়া করে চলেছি। আমরা সহপাঠীরা যারা ভালো ছাত্র ছিলো, বিজ্ঞান পড়েছিলো, কবেই তারা লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। বেশি পড়া গিলতে গিয়েই তাদের এ অবস্থা। ‘এ স্টুডেন্ট ইজ নট এ ভেসেল টু বি ফিলড, বাট রেদার এ ল্যাম্প টু বি লিট।’ আমি কখনও বেশি পড়িনি। পড়তে চাইনি। পড়েছি শুধু সে টুকতোই যা ১. ভালো লাগে এবং ২. যা কাজে লাগে। প্যারিসে সর্বোনে আমার শিক্ষক বলতানস্কি বলতেন: ‘আপনাদের পড়তে হবে না, আমি আপনাদের হয়ে পড়বো। আপনারা ইচ্ছে হলে পড়বেন। পরীক্ষা পাসের জন্য পড়ার দরকার নেই। ক্লাসে এসে আমার কথা শুনলেই হবে।’ এসব বিরল স্বভাবের শিক্ষকের আশকারা পেয়ে সব বিষয়েই কমবেশি আমি ভাবতে পারি। কারণ সব বিষয়েই আমি কমবেশি না পড়লেও গুরুদের মুখে কমবেশি শুনেছি। বর্তমান কারিকতোলাম সম্ভবত, অদূর ভবিষ্যতে আমার মতো, আমার গুরুদের মতো ‘বুদ্ধিজীবী’ সৃষ্টির  সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আমি কেন সমর্থন করবো না, বলুন তো? প্রাণি মাত্রেই নিজের বংশবৃদ্ধি কামনা করে না কি? বাচ্চারা যতো কম পড়বে, ততো বেশি ভাবার সময় পাবে। অভিনয়ের সময় পাবে, রান্না শেখার সময় পাবে, সময় পাবে আলুভর্তা বানাতে শেখার। প্রাচীন গ্রীসে, শিক্ষার সূচনা যেখানে, এক্সট্রা কারিকুলাম কার্যক্রমে অংশ নিতে হতো শিক্ষার্থীদের। কানাডায় এখনও অভিনয়, কিংবা  খেলাধুলা, কিংবা সঙ্গীত, কিংবা নৃত্য, কিংবা যাদু বা পারফর্মেন্স ইত্যাদি কোনো একটা এক্সট্রা কারিকতোলার কার্যক্রমে পাস না করে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়া যায় না।
 
আলুভর্তা নিয়ে কতোই না ক্যাচাল করছে অজরা। ‘দ্বিজ’ মানে ব্রাহ্মণ, জ্ঞানী ব্যক্তি, যার দুই বার জন্ম হয়েছে, একবার মায়ের যোনিদ্বার পার হয়ে, আরেকবার স্কুলের প্রবেশদ্বার পার হয়ে। ‘অজ’ মানে ছাগল, অ-জ, অর্থাৎ যাদের এখনও জন্মই হয়নি, মানুষী মাতার পেট থেকেতো নয়ই, স্কুলমাতার পেট থেকেও নয়। আমার দিস্তা দিস্তা ডিগ্রি আছে, কিন্তু তেমন তেমন আলুভর্তা যদি কেউ বানাতে পারে, আহা! কোথায় লাগে এই সব ফালতু (কাণ্ড) জ্ঞানহীন ডিগ্রি! তবে একটা কথা, সব বই কিন্তু ভালো হয়নি। বাংলা সাহিত্য বইতে এমনভাবে রাজনীতি ঢোকানো হয়েছে যে চোখে লাগে। রাজনৈতিক বিবেচনায় লেখক-কবি নির্বাচন করা হয়েছে। সরকারি, জনগণের অর্থে ছাপানো পাঠ্যবইয়ে রাষ্ট্রপ্রধানের সপরিবার, সপারিষদ চিত্র, দলীয় প্রোপাগাণ্ডা খুব বেমানান, অরুচিকর লাগেÑ এ কথাটা বলতেই হচ্ছে। এসব অপসিদ্ধান্ত কে নেয়, স্বয়ং বাবু, নাকি তৈলবাজ পারিষদ, সে আমরা মরণশীল সাধারণ মানুষ কখনোই জানতে পারবো না। তবে যেকোনো প্রোপাগান্ডা নাৎসি জার্মানির হিটলার-গোয়েবলসের কথা মনে করিয়ে দেয় এবং তাদের কথা মনে হতেই প্রথম যে অনুভূতিটা হয় মনে, সেটা ‘ভয়’, ক্ষমতাবানের জন্যেতো বটেই, আমাদের নিজেদের জন্যেও। এমন স্কুল বানাও তো দেখি ম্যাডামজি, যার স্বাদ পেয়ে ইংলিশ মিডিয়াম এবং মাদ্রাসার ধারে কাছেও আর কেউ ঘেঁসছে না, সবাই তোমার সরকারি বাংলা মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হতে আসছে। দিল্লি আর কেনিয়ায় নাকি এমনটা ঘটেছে। তখন, শুধু তখনই আমরা বলবো, এ জ্ঞানের দীপ (কিংবা আদরের ‘দীপু’) তো নয়, সাক্ষাৎ ‘মণি’! (আপাতত সমাপ্ত)। ফেসবুক থেকে
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়