শিরোনাম
◈ ১ লাখ ৮২২ জন শিক্ষক নিয়োগে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ◈ যে কারণে পরিচালক সুভাষ ঘাইয়ের ওপর হাত তুলেছিলেন সালমান ◈ সেনা বা পুলিশ চেকপোস্টে তল্লাশির ভিডিও ধারণ ও প্রচার নিয়ে প্রশ্ন ◈ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসলামী দলগুলো, এবার আগাচ্ছে ভিন্ন ভাবে ◈ ইরানের এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংসের দাবি ইসরায়েলের, তেহরানের আকাশসীমায় ‘পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ’ ◈ মঙ্গলবার সি‌রি‌জের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা মু‌খোমু‌খি ◈ ক্লাব বিশ্বকা‌পের অ‌ভি‌ষেক ম‌্যা‌চে  অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে ৪-০গো‌লে হারা‌লো পিএসজি ◈ কর্মীদের ভাতা কমিয়ে দিলো ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড, কিছু অবাধ্য কর্মীর জন্যই এই সিদ্ধান্ত ◈ ক্রিকেটেও ভারতকে টক্কর, এ‌শিয়া কাপ না হ‌লে ত্রিদেশীয় সি‌রি‌জের আ‌য়োজন কর‌বে পাকিস্তান ◈ ইরানসহ ৪ দেশ মিলে ইসলামিক আর্মি গঠনের প্রস্তাব

প্রকাশিত : ০১ অক্টোবর, ২০২৩, ১২:৫৬ রাত
আপডেট : ০১ অক্টোবর, ২০২৩, ১২:৫৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হিজাব বা নারীর পোশাক নিয়ে কথা

আজিজুর রহমান আসাদ

আজিজুর রহমান আসাদ: নব্বই দশকের প্রথমার্ধে, মৌলবাদ নিয়ে পিএইচডি গবেষণা করছি। মৌলবাদ নিয়ে যা পাই পড়ি, তথ্য খুঁজি। এই সময় ফরাসী একটি সিনেমা দেখেছিলাম মৌলবাদ ও হিজাব নিয়ে। একটি মেয়ে হিজাব পরে স্কুলে যাচ্ছে। ভালো ছাত্রী, কোনো বন্ধু নেই, এই বয়সে যা থাকার কথা। ওর হিজাব পরা দেখে সবাই অবাক, কারণ ওর পরিবার থেকে কোনো চাপ ছিলো না, যদিও তখন ফ্রান্সে ইসলামি জঙ্গিবাদ ও নারী হিজাবিদের সংখ্যা বাড়ছে। মেয়েটি মধ্যপ্রাচ্যে মিথ্যা অজুহাতে মার্কিন ও ন্যাটোর সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ মেনে নিতে পারেনি। এই দেশের মানুষদের প্রতি একধরনের এম্প্যাথি থেকে সে ‘মুসলিম’ পোশাক হিসেবে হিজাব পরে। সে একেবারেই ধার্মিক নয়, নামাজ রোজা কিছুই করে না। 

একদিন ওর সমবয়সী আরেকটি মেয়ে, সেও মুসলমান, রাস্তায় এই হিজাবি মেয়েটিকে আক্রমণ করে। টেনে হিজাব খুলে ফেলে মেয়েটির মুখে থুথু দেয়, প্রচণ্ড ঘৃণায়। ছবিতে যা বোঝা যায়, এই হিজাব বিরোধী সহিংস মেয়েটির ভাই সদ্য মৌলবাদী হয়েছে, সে তার বোনকে হিজাব পরাতে চায়, খৃস্টান সহপাঠীদের সঙ্গে মিশতে বাধা দেয়, প্রেম করতে বাধা দেয়। উদাহরণÑ দেয় এই হিজাব পরা ‘ভালো মেয়েটির’ যে ভালোছাত্রী ও ভালো ‘মুসলমান’। হতাশ মেয়েটি ভাইয়ের সঙ্গে পারে না, সব রাগ গিয়ে পরে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের প্রতিবাদে হিজাব পরা মেয়েটির উপর। 

আমার এক জার্মান বন্ধুর ১৯ বছরের মেয়ে জার্মানিতে কালো রঙয়ের পুরো শরীর ঢাকা আবায়া পরে। আমার এই নারী-বন্ধুর বাবা ভারতীয় হিন্দু মা জার্মান খৃস্টান। মেয়েটি একটি ইরাকি ছেলের সঙ্গে প্রেম করে। ছেলের পরিবার মেয়েটিকে খুবই ভালোবাসে। প্রতিদানে মেয়েটি ইরাকি ‘মুসলমান’ পোশাক পরে, হবু শাশুড়িকে ইমপ্রেস করতে চায়। বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশে একটি জেলা শহরে গিয়েছিলাম, গবেষণার কাজে। ২০ জনের মতো কিশোরী মেয়েদের একটি গ্রুপের সঙ্গে কথা হয়। একজন মাত্র সালোয়ার কামিজ পরা, কেউ কেউ মাথায় হিজাব কিন্তু মুখ খোলা, কয়েকজন মাত্র শুধু চোখ দেখা যায়। আমি পোশাকের এই নানা ধরনের সঙ্গে ক্ষমতাসম্পর্ক বোঝার চেষ্টা করি, কার প্রভাবে কি বিবেচনায় এরা পোশাক নির্বাচন করেছে?  

পোশাকের পছন্দ নিয়ে কথা শুরু হয়। সালোয়ার কামিজ পরা মেয়েটির ভাষ্য, তাঁর মা চান, মেয়ে যেন সাহসী স্বাধীন মানুষ হয়ে ওঠে। হিজাব এখন এই অঞ্চলে ট্রেন্ড। মেয়েটি তাঁর বিশিষ্টতা প্রমাণে, হিজাব পরবেনা, 'বাঙালি' পোশাক পরবে। পুরো মুখ ঢাকা দুই বোন, তাঁদের পোশাক নিয়ে খুবই ক্ষুদ্ধ দাওয়াতি দলের অ্যান্টি দের প্রতি। 'দাওয়াতি দলের' (জামাতে ইসলামি) কারণে এদের মা বাইরে যেতে দিতে চায় না। এরা এই মিটিংএ আসার জন্য বোরখা পরেছে, কারণ তা না হলে মা আসতে দেবে না। বাইরে যাওয়ার স্বাধীনতা পাওয়া যায়, পোশাকের পরাধীনতায়। অন্যদের হিজাব পছন্দের কারণ ‘নিরাপত্তা’, একটি মিথ তৈরি হয়েছে যে হিজাব পরা থাকলে বখাটেরা হ্যারাস করবেনা।(যদিও সাভারে এক মাদ্রাসা হুজুর শতাধিক হিজাবি মেয়েকে যৌননিপীড়ন করে।)  

সম্প্রতি ইরানের হিজাব বিরোধী আন্দোলনের কথা সবাই জানি। গত বছর ২০২২ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর মাহসা আমিনিকে পুলিস হিজাব না পরার কারণে হত্যা করে। মেয়েটির বয়স মাত্র ২২ বছর। হিজাব না পরার অধিকার আদায় করতে গিয়ে পুলিসের গুলিতে নিহত হয় ৫৩০ জন মানুষ। গ্রেফতার করা হয় ২২০০০ লোককে। ইরানের মেয়েদের 'হিজাবভীতি' বাস্তব, কারণ হিজাব কোন পোশাক না, নিপীড়নের অপর নাম। হিজাব কোন কাপড় খণ্ড না, রক্তপাত, সহিংসতা ও হত্যার প্রতীক।  হিজাব মৌলবাদের ধর্মীয় প্রভাবের প্রতীক, ইউরোপ আমেরিকা ভারতে সংখ্যালঘু আত্মপরিচয় রাজনীতির প্রতীক, বাংলাদেশে প্রধানত ধর্ষকামী পুরুষের থেকে নিরাপত্তা লাভের প্রতীক।

হিজাব বা নারীর পোশাক নিয়ে কথা বলার আগে, আপনাকে সমাজ প্রেক্ষিত বুঝতে হবে। মূল দ্বন্দ্বটি পিতৃতন্ত্রের ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে নারীর স্বাধীনতার। হিজাবের পক্ষে মৌলবাদের ‘ধর্মীয়’ যুক্তি আছে, আবার অনেক লিবারেল ও সেক্যুলারদের ‘মানবাধিকার’ যুক্তি আছে। বিপরীতে, সাম্যবাদী ও নারীবাদীদেরও হিজাবের বিপক্ষে অনেক যুক্তি আছে। ইরানের মানুষ কেবল যুক্তিতে নেই, বাস্তব হিজাব বিরোধী সংগ্রামে আছে, রক্ত ও জীবন দিয়ে। 

হিজাব নিয়ে কথা বলতে হলে, আগে পিতৃতন্ত্রের ক্ষমতা, শরীরের রাজনীতি, পোশাকের রাজনীতি, মৌলবাদী রাজনীতি, আত্মপরিচয়ের রাজনীতি ইত্যাদি নিয়ে বুঝতে হবে। ‘পোশাক ব্যক্তির স্বাধীনতা, যার যা ইচ্ছে পরবে’Ñ এই ধরনের অতিসরল (নাইভ) ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসুন। ব্যক্তি মানুষকে পোশাক পছন্দ না হলেও পরতে হয়। পরে নানা বাধ্যবাধকতা ও সামাজিক রাজনৈতিক কারণে, ফ্যাশনের কারণে, শ্রেণিঅবস্থান প্রকাশের জন্য, পরকালের লোভে, সামাজিক রাজনৈতিক ভয়ে, সারভাইভাল স্ট্রাটেজি হিসেবে, কিংবা প্রতিবাদ হিসেবেও। রাজনীতির লেন্স দিয়ে হিজাবকে না দেখলে, বিভ্রান্ত আপনি, পিতৃতান্ত্রিক নিপীড়ন ও সহিংসতার অসচেতন সমর্থক হয়ে উঠবেন।  লেখক: গবেষক  

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়