শিরোনাম
◈ সেনাপ্রধানের সঙ্গে জাতিসংঘের গুমবিষয়ক প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ ◈ আতঙ্কে দলে দলে তেহরান ছাড়ছেন বাসিন্দারা ◈ ইশরাককে ‘মেয়র’ পরিচয়ে নগর ভবনে সভা: যা বললেন উপদেষ্টা আসিফ ◈ স্টুডিওতে একজন নারী নিউজ অ্যাঙ্কর সংবাদ পাঠ করার সময় হাঠাৎই বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে (ভিডিও) ◈ ৫ দেশে নতুন মিশন খুলছে বাংলাদেশ সরকার ◈ বিতর্কিত তিন জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে জড়িতদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার ◈ আসছে শক্তিশালী বৃষ্টিবলয় ‘রিমঝিম’, তিন বিভাগে বন্যার শঙ্কা ◈ ১ লাখ ৮২২ জন শিক্ষক নিয়োগে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ◈ যে কারণে পরিচালক সুভাষ ঘাইয়ের ওপর হাত তুলেছিলেন সালমান ◈ সেনা বা পুলিশ চেকপোস্টে তল্লাশির ভিডিও ধারণ ও প্রচার নিয়ে প্রশ্ন

প্রকাশিত : ১৬ জুন, ২০২৫, ০৭:৪৭ বিকাল
আপডেট : ১৭ জুন, ২০২৫, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সেনা বা পুলিশ চেকপোস্টে তল্লাশির ভিডিও ধারণ ও প্রচার নিয়ে প্রশ্ন

বিবিসি বাংলার  প্রতিবেদন।। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যৌথ বাহিনীর চেকপোস্টে ব্যক্তি বা যানবাহন তল্লাশির সময় বিভিন্ন ব্যক্তির ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কিংবা ইউটিউবাররা নিজেরাই বিভিন্ন ব্যক্তিকে সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনেই জেরা করছেন- এমন দৃশ্যও দেখা যাচ্ছে ভাইরাল হয়ে পড়া অনেক ভিডিওতে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেনা বা পুলিশ সদস্যরা বাইক বা গাড়ী থামিয়ে এসব যানবাহনের আরোহী ও চালকদের সাথে যেসব কথা বলেন, সেগুলোর ভিডিও করে প্রকাশ করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই।

আবার ভিডিও করার সময় কেউ বাধা দিলে তাতে অনেক সময় দলবদ্ধ হয়ে তাড়া করা কিংবা ক্ষিপ্ত আচরণ করতেও দেখা যাচ্ছে ভিডিও ধারণকারীদের।

অন্যদিকে রাস্তায় দায়িত্ব পালনের সময় কিছু পুলিশ সদস্যকে ব্লগিং করা অর্থাৎ ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে।

আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠকরা বলছেন, কেউ অনুমতি ছাড়া ছবি তুললে বা ভিডিও করে প্রকাশ করলে বা অন্য কাউকে প্রেরণ করলেও সেটা আইন অনুযায়ী অপরাধ ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন।

তারা বলছেন, এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনও করতে পারেন না। এটি অন্যরা করলে যে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে, একজন পুলিশ সদস্য করলে সেই একই আইনি ব্যবস্থাই তার জন্য প্রযোজ্য হবে।

পুলিশ কর্তৃপক্ষ বলছে, কারও অনুমতি ছাড়া এ ধরনের ভিডিও করা এবং সেগুলো প্রকাশ করা আইনসিদ্ধ নয় ও অনৈতিক।

পুলিশের কেউও যদি আইন লঙ্ঘন করে এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের নীতিমালা পালনে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র তালেবুর রহমান।

আলোচিত কিছু ঘটনা: গত ১৪ই জুন ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তিন তরুণকে তল্লাশি করা হচ্ছে। এ সময় তারা জানায় যে, তারা মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছিলো।

ভিডিও দেখা যায়, সেনা কর্মকর্তা বলছেন, তাদের ব্যবহৃত বাইকের সাইলেন্সার নেই, তাদের কাগজপত্র নেই ও তারা ফোনও বাসায় রেখে এসেছে।

এসময় সাংবাদিক পরিচয়ধারী কয়েকজন সেখানেই ওই তিন তরুণকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। পুরো ঘটনার ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করেছে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমও।

এছাড়া ঢাকার হাতিরঝিল এলাকায় রাতে দুই তরুণী বাইক চালিয়ে যাওয়ার সময় তল্লাশির মুখে পড়েন। এসময় তাদের ঘিরে যা যা ঘটেছে, পুরোটাই ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

গভীর রাতে রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন হাতিরঝিলের প্রবেশপথে হওয়া ওই ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, ওই দুই তরুণী একটি বাইকে করে এসে দাঁড়ানোর পর ক্যামেরা ও মোবাইল ব্যবহার করে ভিডিও করতে করতে কয়েকজন তাদের তাড়া করছে।

দুই তরুণী মুখ ঢেকে তাদের কাছ থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তারা বারবার বলছিলেন 'গালাগালি করিনি ভাই। আপনারা ভিডিও করছেন। আমরা মেয়ে, আমাদের বাসায় সমস্যা হবে'।

এর আগ গত পহেলা মে নড়াইল শহরের হাতির বাগানে চেকপোস্টে এক বোতল মদ সহ এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। এরপর যে ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে এসেছে তাতে দেখা যায় যে তাকে মদের বোতল হাতে দাঁড় করিয়ে ভিডিও করা হয়েছে।

গত ৬ই জুন ব্যাপক প্রচার হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় একটি গাড়ীতে তল্লাশি করে হাফ বোতল মদ পায় যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। তবে তিনি সেই গাড়ী চালাচ্ছিলেন না।

তিনি শান্ত কন্ঠেই যৌথ বাহিনীর সদস্যদের জানান, তিনি ক্লাবে মদ্যপান করেছেন ও আধা বোতল নিয়ে এসেছেন।

এ সময় একদল ব্যক্তি তার ভিডিও করতে শুরু করে ও তাকে নানা ধরনের প্রশ্ন করছিলো। জবাবে তিনি বলছিলেন 'গাড়ী চেক করে দেখুক।তারপর কথা বলবো'।

এক পর্যায়ে তার ভিডিও করা নিয়ে তিনি যৌথ বাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছে তার আপত্তিও প্রকাশ করেছেন।

পরে সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়ে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে লাইসেন্স নেই, এমন ব্যক্তির জন্য মদ্যপান ও মদ বহন করা বেআইনি।

এছাড়া রাস্তায় দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় কিছু পুলিশ কর্মকর্তাকেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্লগিং করতে দেখা যায়।

তারা যানবাহন আটকাচ্ছেন এবং ট্রাফিক আইন ভঙ্গ কীভাবে হয়েছে, সেগুলো বর্ণনা করছেন যাতে অভিযুক্ত ব্যক্তির ছবি বা ভিডিও প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে।

মানবাধিকার আইনজীবী হাসানুল হক বান্না বলছেন, এ ধরনের কাজ কোনোভাবেই আইন সম্মত নয় এবং এটি ব্যক্তির মর্যাদা ও প্রাইভেসির মারাত্মক লঙ্ঘন।

"আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি করতেই পারেন কিন্তু সেটা করার সময় কাউকে ভিডিও করার অধিকার তাদেরও নেই," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তার মতে, কেউ আইন লঙ্ঘন করলে কিংবা যানবাহনে বেআইনি কিছু বহন করলে আইন প্রয়োগকারীরা সংস্থা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন। কিন্তু ওই ব্যক্তির ভিডিও করা বা কাউকে ভিডিও করার সুযোগ দেওয়াটা অপরাধ।

আইন কী বলছে: সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিতি সানজানা বলছেন, সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদে নাগরিকদের চলাফেরার স্বীকৃতি আছে এবং আইনের শাসন ও জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সঙ্গতি রেখে সেই স্বাধীনতা দেওয়া হয়।

"আবার ৩২ অনুচ্ছেদে মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকারের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। জননিরাপত্তা ও জনস্বার্থে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা তল্লাশি করতে পারেন। কিন্তু অনুমতি ছাড়া ছবি তোলা বা ভিডিও করে ছড়িয়ে দেওয়া, এমনকি অন্যের কাছে পাঠানোও সাইবার আইন অনুযায়ী অপরাধ," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও কিছু আইন ও নৈতিকতার বিষয় আছে, যা মেনে চলা জরুরি।

"বিদ্যমান আইনে কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে কারও অনুমতি ছাড়া ছবি তুললে বা ভিডিও করলে কিংবা ভিডিও ধারণ করে অন্য কাউকে দিলে, সেটি হবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন। তেমনটি হলে তা হবে সাইবার আইন অনুযায়ী অপরাধ," বলছিলেন তিনি।

মিতি সানজানা বলেন, অন ডিউটি পুলিশ সদস্যরাও এ ধরনের কাজ করলে তার জন্য বিদ্যমান আইনে শাস্তি ও জরিমানার নিয়ম আছে। অর্থাৎ তারাও তখন একই আইনের আওতায় আসবেন।

মানবাধিকার সংগঠক নুর খান লিটন এভাবে তল্লাশির ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়ার মাধ্যমে যে হেনস্থা ও হয়রানি করা হয় সেই বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

"পুলিশ বা নিরাপত্তা সংস্থা কাউকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। তিনি দোষী, নির্দোষ বা অপরাধী হতে পারেন। কিন্তু তার ভিডিও করে ছড়িয়ে দেয়া অগ্রহণযোগ্য। বাহিনীগুলোর এ নিয়ে সতর্ক হওয়া উচিত," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র তালেবুর রহমান বলছেন, কোন ব্যক্তির অজান্তে বা অনুমতি ছাড়া তার ভিডিও করা বা ছবি তোলা আইন বহির্ভূত কাজ।

তিনি বলেন, তল্লাশি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া এবং এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের সহায়তাও জরুরি।

রাস্তায় দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্লগিং করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশের প্রতিটি ইউনিটকে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের নীতিমালা মেনে চলতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

"এরপরেও কেউ যদি অপেশাদার আচরণ করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে," বলছিলেন তিনি।

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়