ইফতেখার আলম বিশাল, রাজশাহী প্রতিনিধি : ভারত থেকে আমদানি করা মথ ডালে ক্ষতিকর রং ও কেমিক্যাল মেশানো হচ্ছে—এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে কর্মরত কোয়ারেন্টাইন বিভাগের কর্মকর্তারা। অসাধু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী চক্র এই মথ ডালকে মুগ ডাল হিসেবে বাজারজাত করছে। এতে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ এবং দেশের নিম্ন আয়ের জনগণ পড়ছেন গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এস আই এম রাজিউল ইসলাম এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবু তালেব জানান, ল্যাব রিপোর্টে প্রমাণ হয়েছে আমদানি করা মথ ডালে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও রং মেশানো হয়েছে। এই ডাল খেলে হজম শক্তি কমে যাওয়া, পেটের সমস্যা, বদহজম, এমনকি লিভার সিরোসিস পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের জন্য এটি ভয়াবহ হুমকি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতে মথ ডাল খাদ্যপণ্য নয়, বরং গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেখানে আইন অনুযায়ী এই ডালে কেমিক্যাল বা রং মেশানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বাংলাদেশে সেই নিষিদ্ধ পশুখাদ্যই কৌশলে মুগ ডাল হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৩৫-৩৬ হাজার মেট্রিক টন মুগ ডাল উৎপাদন হয়, যা চাহিদার মাত্র ২৫%। ফলে বাকি ৭৫% আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। এই ঘাটতির সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে কেমিক্যালযুক্ত মথ ডাল এনে মুগ ডাল হিসেবে বিক্রি করছে।
সোনামসজিদ স্থলবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে এ পর্যন্ত ৭,৭৭৭ মেট্রিক টন কেমিক্যালযুক্ত মথ ডাল আমদানি করেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে—বিসমিল্লাহ ফ্লাওয়ার মিল, বিসমিল্লাহ ডাল মিল, নিঝুম শস্য ভান্ডার, এম এ ট্রেডিং, শ্যামলী ডাল মিল, বাবর ডাবল মিল ও মেসার্স সালমান খুরশিদ ডাল মিল।
কোয়ারেন্টাইন বিভাগ জানিয়েছে, স্থলবন্দরে পণ্যের শুধু প্যাকেট, ওজন ও পোকামাকড় পরীক্ষা করা হয়। কেমিক্যাল বা রং মেশানো হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার মতো পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা নেই।
বিএসটিআই রাজশাহী বিভাগের পরিচালক জহরুল সিকদার এবং এডি শরিফুল ইসলাম জানান, মথ ডাল বিএসটিআই অনুমোদিত পণ্যের তালিকায় নেই। তালিকাভুক্ত না হওয়ায় তারা ল্যাব টেস্ট করতে পারছেন না। তবে সরকার পণ্যটি তালিকাভুক্ত করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আক্তার বলেন, “যেহেতু ল্যাব রিপোর্টে কেমিক্যাল থাকার প্রমাণ মিলেছে, সেহেতু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনস্বার্থে এ ধরনের পণ্য বাজারে ছড়ানো বন্ধ করতে হবে।”
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক বনি আমিন খান ও স্থলবন্দর জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির জানান, কেমিক্যালযুক্ত মথ ডাল আমদানি বন্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে।
সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, হিলি, বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দরের কোয়ারেন্টাইন কর্মকর্তারা একযোগে বলেন, মথ ডাল আমদানি করে কেমিক্যাল মেশানোর মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে প্রতারিত করা হচ্ছে। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। অবিলম্বে এ আমদানি বন্ধ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে মুগ ডালের ছদ্মবেশে কেমিক্যালযুক্ত পশুখাদ্য বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য তালিকায় স্থায়ীভাবে ঢুকে পড়বে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে।