শিরোনাম

প্রকাশিত : ৩০ মার্চ, ২০২৩, ১২:২৪ রাত
আপডেট : ৩০ মার্চ, ২০২৩, ১২:২৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অর্থনৈতিকভাবে আমাদের আরও ভালো থাকার অনেক পটেনশিয়াল ছিলো

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: অনেকেই দেখি, আজ থেকে ৫০ বছর কিংবা ৩০ বছর আগের তুলনায় বাংলাদেশের গরিব মানুষেরা কতো ভালো আছে, তার ফিরিস্তি দিয়ে যাচ্ছেন। গত ৫০ থেকে পৃথিবীর জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যেভাবে বেড়েছে, তাতে উন্নত বিশ্বের মানুষের জীবন যাত্রার মানও আজ থেকে ৩০ বছর আগের তুলনায় অকল্পনীয়ভাবে বেড়েছে। তার স্পিলওভার ইফেক্ট লেগেছে পৃথিবীর গরিব দেশগুলোতেও। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবীর প্রডাক্টিভিটি বেড়েছে অকল্পনীয়ভাবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এইসব আবিষ্কারে আমাদের কি বিন্দুমাত্রও অবদান আছে? এই যে আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করছি, হাতে হাতে স্মার্ট ফোন এইসব কি আমাদের আবিষ্কার? এই যে যোগাযোগের বিশ্বময়কর উন্নতি তাতে কি আমাদের কোনো অবদান আছে? মধ্যপ্রাচ্যে বিশাল কর্মযজ্ঞের কারণে প্রচুর শ্রমিক প্রয়োজন হয়। সেখানে ৩ গুণ খরচ বেশি দিয়ে আমাদের শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়েছে। এরা স্কিলড না হওয়ায় এতো বিপুল সংখ্যায় মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েও যথেষ্ট রেমিটেন্স আনতে পারেনি। 

তাদের নিজেদের জীবন যাত্রার মানও কি কাঙ্খিত বৃদ্ধি ঘটেছে? আমরা বরং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এইসব আবিষ্কার ব্যবহার করে বেশি ফসল ফলাতে গিয়ে কীটনাশক, সার, এন্টিবায়োটিক ইত্যাদি অপব্যবহার করে অনেক উপকারী প্রাণীকে বিলুপ্ত করে ফেলেছি, জনস্বাস্থকে হুমকির মধ্যে ফেলেছি। পলিথীনকে ভালো কাজে ব্যবহার করতে গিয়ে দেশের পরিবেশ ধ্বংস করে ফেলছি। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কলকারখানায় উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে নদ-নদীকে দূষিত করে মেরে ফেলেছি। অশিক্ষিতের হাতে ইন্টারনেট তুলে দিয়ে বলদামি চাষের ব্যবস্থার মাধ্যমে বলদামির মাধ্যমে হিরো হওয়ার ব্যবস্থা তৈরি করেছি। সারা পৃথিবীর সকল দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান ৩০-৫০ বছর আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। এই ভালো থাকাটা কারা এবং কেমন মানের সরকার তার উপর তেমন নির্ভর করেনি। সুতরাং এখন মানুষের মাটির ঘরের জায়গায় টিনের ঘর বা ইটের ঘর আছে, জুতা পড়ে, মোবাইল আছে মানেই মানুষ সুখে আছে তা না। 

গড় উন্নয়ন সকলের বেড়েছে। সকলের চাহিদা বেড়েছে। এখন মানুষের ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনতে হয়, মোবাইল ডাটা কিনতে হয়, সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে হয়। তার উপর খাদ্য দ্রব্য কেনাতো আছেই। এইসব করতে যেই অর্থ প্রয়োজন মানুষ সেটা করতে পারছে কি না। দ্রব্যমূল্যের দাম যেইভাবে বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের আয় বাড়ছে কি না। যেহেতু মানুষের আয় নির্দিষ্ট তাই মানুষ কষ্টে আছে। এদের কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটা দিবেন না প্লিজ। ইচ্ছে করলেও মানুষ এখন ৫০ বছর আগের জীবন যাত্রায় ফিরে যেতে পারবে না। ওই জীবনের সঙ্গে তুলনা করে আমরা কতো ভালো আছি বলবেন না প্লিজ। এই জীবনের যতোটা লাক্সারি আছে, তার কোনোটার জন্য আমাদের কোনো সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। উগান্ডা, রোয়ান্ডার, ঘানার মানুষদের জীবন মানও বৃদ্ধি পেয়েছে। বরং আমাদের আরও অনেক অনেক ভালো থাকার অনেক পোটেনশিয়াল ছিলো। কেবল যদি চুরি, দুর্নীতি, লুটপাট, পাচার ইত্যাদি না থাকতো। এইসব কারা করে? যাদের ক্ষমতা আছে কেবল তারাই এইসব করতে পারে। আমরা স্বাধীন হয়েছি ৫২ বছর হয়ে গিয়েছে। এইটা কম সময় না। রাজনীতি ঠিকভাবে চললে, ভালো মানের নেতৃত্ব থাকলে দেশে এতদিনে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় থাকতো, ভালো মানের শিক্ষা থাকতো, গবেষকদের গবেষণা করার পরিবেশ থাকতো। 

পৃথিবীতে এমন একটি উদাহরণ দিনতো যেই দেশে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া উন্নত হয়েছে। একটি উদাহরণও পাবেন না। অর্থনৈতিকভাবে চীন উন্নত হচ্ছে। তার আগে বা একই সঙ্গে যত বেশি উন্নত হচ্ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বাড়ছে আর তার সঙ্গে গবেষণার মানও বাড়ছে। আর আমাদের? সময় যতো যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ততোই খারাপ হচ্ছে। দেশকে উন্নত করতে উন্নত মানের মানুষ দরকার। সেই মানুষ তৈরির কারখানাতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা পাস করে তারাইতো মোটা দাগে দেশ চালায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান যদি ভালো না হয় তাহলে কারা দেশকে উন্নত করবে। কিছু সেতু, কিছু রাস্তা, কিছু ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি করলেই টেকসই উন্নয়ন হয় না। চাকচিক্যপূর্ণ জামা পড়া যেমন সন্দুর রুচিশীল জামা কাপড় না তেমনি অবকাঠামোর চাকচিক্য উন্নয়নের সূচক নয়। যারা এই জিনিসটা বুঝতে অক্ষম তারা কীভাবে দেশের উন্নয়ন ঘটাবে? লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়