শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০৭ রাত
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কারাগার-২ : প্রেডিক্টেবল এন্ডিং আর দুর্বল লজিকের গল্প

রাজিয়া সুলতানা জেনি

রাজিয়া সুলতানা জেনি : বহুল প্রতীক্ষিত ‘কারাগার সিজন-২’ ওয়েব প্ল্যাটফর্ম ‘হৈচৈ’-এ চলে এসেছে। প্রথম সিজন বেজায় হিট করেছিলো। ফলে দ্বিতীয় সিজনের জন্য এক্সপেক্টেশান খুব বেশি ছিলো। প্রথম সিজনে বেশ কিছু প্রশ্ন জাগানো হয়েছিল, দ্বিতীয় সিজন ছিল মূলত সেই প্রশ্নের উত্তর পর্ব। প্রথম সিজন শেষে ছোট্ট একটা ঝলক ছিল, যেখানে বোঝানো হয়েছিল, কাহিনির সাথে মুক্তিযুদ্ধ কিংবা একাত্তর কোনোভাবে জড়িত। প্রথম সিজনের সাথে অলিখিত এক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল সিজন-২।

তাই একে নিয়ে ছিল আশঙ্কা, ‘সিজন ওয়ানের চেয়ে ভালো হবে তো?’ সিজন ওয়ানের সাফল্যকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে তো? আশঙ্কা আরেকটাও ছিল। সুন্দর একটা গল্প দিয়ে শেষ করতে পারবে তো?

আশঙ্কাগুলো অবশেষে সত্য প্রমাণিত হলো। প্রথম সিজন যেখানে টানটান উত্তেজনার জন্ম দিয়েছিল, সেখানে সিজন-২ ছিল বেজায় ম্যাড়ম্যাড়ে। প্রেডিক্টেবল। আর স্লো। রিপিটেশানে ভরপুর।

কেমন যেন জোড়াতালি দিয়ে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। আর কাহিনি হিসেবে যা উপস্থাপন করা হলো, তা ছিলো বেজায় ক্লিশে।

শাওকীর একটা সাক্ষাৎকার দেখেছিলাম। সেখানে উনি বলেছিলেন, ‘একদিন কারাগারে একজন কয়েদি বেশি পাওয়া গেলো। এই আইডিয়া নিয়ে এই গল্পের যাত্রা শুরু’। নো ডাউট, আইডিয়া ব্রিলিয়ান্ট।

কিন্তু সমস্যা হলো এই আইডিয়াকে সাপ্লিমেন্ট করার মতো গল্পের যোগান দিতে না পারলে, আইডিয়া এবং সিরিজ দুটোই মুখ থুবড়ে পড়বে। সেটাই ঘটেছে এই সিরিজে। প্রথম সিজনে তেমন কোনো গল্প ছিলো না, ছিলো এক রাশ প্রশ্ন। আর প্রত্যাশা,

দারুণ কিছু হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় সিজনে।’ ‘বিশাল এক রহস্য ভেদ হবে। সিজন-২ দেখতে গিয়ে হোঁচটটা খেলাম সেখানেই। একাত্তর কিংবা মুক্তিযুদ্ধ যখনই নাটক বা সাহিত্যের বিষয় হয়েছে, তখনই প্রেডিক্টেবল হয়ে গিয়েছে।

দুটো ব্যাপারে বেজায় কমন ছিল। প্রথমটা ‘রেপ’ আর দ্বিতীয়টা প্রিয় মানুষকে হারানো। এছাড়া ‘রাজাকার’দের কাণ্ড কারখানা, মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতা এসবও এসেছে। আর সমস্যাটা এখানেই।

নতুনত্ব দেওয়ার তেমন অপশনই নেই। আর গল্পকার যখন সব প্রশ্নগুলোর উত্তর যখন একাত্তর কেন্দ্রিক করলেন, তখন নিজের অজান্তেই পায়ে কুড়াল বসিয়ে দেন। গল্প থেকে সারপ্রাইজ এলিমেন্টটা নিজেই ছেঁটে ফেলেন। দর্শক বুঝে যায়, কী আসতে যাচ্ছে গল্পের শেষে। 

কাহিনিকার হয়তো ইমোশন ঢালবার জন্য গল্পের প্লট একাত্তরে নিয়ে যান। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে, বুঝেই হোক, আর না বুঝেই হোক, কাহিনিতে টুইস্ট দেওয়ার স্কোপটা যখন নষ্ট করে ফেলেন তখন সেটা কাভার আপ করতে দ্বিতীয় সিজনকে মেলোড্রামা নির্ভর করতে বাধ্য হন।

আর এখানেই গল্পটা তার ফ্লেভার হারায়। থ্রিলার গল্পের দ্বিতীয় পর্ব পুরোটাই যদি মেলোড্রামা হয়, তাহলে গল্প বাড়ি খাবেই। সিরিজটার দ্বিতীয় দুর্বলতা ছিল সাবপ্লটে। বেজায় অপ্রয়োজনীয় কিছু সাবপ্লট।

মাহার গল্পও যেমন মূল গল্পকে সাপ্লিমেন্ট করে না। তেমনি জল্লাদের গল্পটাও। প্রয়োজনীয়তাটা কি ছিল জল্লাদের গল্পটার? জাস্ট দড়িটার জন্য? আর যুদ্ধশিশু কিংবা মাহার মায়ের ইমোশনাল গল্পগুলো মুখে বললে কি আর সেই পেইন ফিল করানো যায়?

আরেকটা ব্যাপার গল্পকার বেশ লেজে গোবরে করেছেন, তা হচ্ছে গল্পের জাল গোটানোতে। জেলারের গল্পটা গোটানো কিংবা সহকারী জেলারের প্রতিশোধ নেয়ার গল্প, এগুলো সিজন-২ এ আর তেমন কোনো ইমপ্যাক্ট ফেলে না। কেউ জানতেই আগ্রহী হয় না, ‘কী হবে গল্পের ওই অংশে’।

আর গল্পের দুর্বলতম অংশ ছিল লজিক। এতো বছর কেন অপেক্ষা করল ডেভিড? কিংবা জেলে ঢোকার জন্য এমন উদ্ভট রাস্তাই বা বেছে নিলো কেন, জাস্ট একটা ছোট অপরাধ করেই তো ঢুকতে পারতো।

কিংবা সেই মানুষটি যখন জেলের বাইরে ছিলো, তখন কিছু করেনি কেন? বিশেষ করে সেই লোকের উকিল যখন ডেভিডের বন্ধু আর তার কথামতো চলে। যাইহোক, কাহিনি সামারাইজ করলে বলা যায়, প্রেডিক্টেবল এন্ডিং আর দুর্বল লজিকের ওপর দাঁড়ানো গল্পকে অযথা লম্বা করা হয়েছে।

তার ওপর অযথা কিছু গল্প দিয়ে দর্শককে ইমোশনাল করার চেষ্টা হয়েছে। টুইস্টগুলোর তেমন জোরালো লাগেনি। মনে হয়েছে, সহজ কাজকে অযথাই কঠিন করে করা হচ্ছে।  
এনিওয়ে, সিরিজের সত্যিকার অর্থে পাওয়া দুটো। শাওকীর দুর্দান্ত ডিরেকশান আর আর্টিস্টদের দুর্দান্ত পারফরমেন্স।

মূল চরিত্রে থাকা সবাই দারুণ অভিনয় করেছে। তবে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ‘রাজু’ চরিত্রটি। সব মিলিয়ে বলব, গুড ট্রাই। ডিরেক্টর আর প্রোডিউসারকে বলবো, এর পরেরবার একটা গল্প হাতে নিয়ে সিরিজ কইরেন, জাস্ট একটা সিনকে গল্প বানাতে যাইয়েন না। তাহলে আরেকটা ডিসআপয়েন্টমেন্টের জন্ম দেবেন। 

এএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়