শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্র সরে এলে বিশ্বরাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে কে: বাইডেন ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ◈ মা হিসেবে পূর্ণ অভিভাবকত্ব পেয়ে দেশের ইতিহাসে নাম লেখালেন অভিনেত্রী বাঁধন ◈ আরও তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক ◈ সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ ◈ তাপপ্রবাহে উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা,  বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ ইউনিসেফের ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ০৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ০১:৩৪ রাত
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ০১:৩৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘বাঙালি মুসলমানের মন’ ছফার অজ্ঞতা ও কুযুক্তির এক প্রামাণ্য দলিল!

মাসুদ রানা

মাসুদ রানা: আহমদ ছফা ‘বাঙালী মুসলমানের মন’ রচনাটি, তাঁর দাবী-মতে, নাস্তিক আবুল ফজলকে মাথায় টুপি পরে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যেতে দেখে রেগে- মেগে একরাতে লিখেছেন বাঙালী মুসলমানের মনের পরিচয় হিসেবে, যা আমার মতে, তাঁর অজ্ঞতা ও কুযুক্তির একটি প্রামাণ্য দলিল। আহমদ ছফার অজ্ঞতা হচ্ছে, তিনি বাংলা পুঁথি ‘শহীদে কারবালা’য় বর্ণিত আরব দেশে হিন্দু-ব্রাহ্মণের ঐতিহাসিক উপস্থিতিকে বাঙালী মুসলমানের একটি অসম্ভব কল্পনা মনে করেছেন। আর, তাঁর কুযুক্তি হচ্ছে, তিনি মনে করেন কারবালাতে নবী মুহম্মদের দৌহিদ্র হোসেনের প্রতি ভালোবাসা থেকে হিন্দু ব্রাহ্মণের মুসলিম হয়ে যাওয়ার কাহিনীটি হিন্দুর প্রতি মুসলমানের প্রতিশোধ স্বরূপ, যা একটি যুক্তি-বিরোধী যুক্তি।

এ-বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমি ‘বাঙালী মুসলমানের মন’ নিয়ে দীর্ঘ সমালোচনা লিখেছি। সেখান হাদিস, ইসলামের ইতিহাস ও ধর্মনিরপেক্ষ গবেষণা গ্রন্থ এবং হোসেনী ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের জীবন্ত মানুষের কথা উল্লেখ করে আমি দেখিয়েছি যে, আরব দেশে হিন্দু ব্রাহ্মণের উপস্থিতি ছিলো এবং তাঁরা ইমাম হোসেনের পক্ষে লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেই থেকে আজও তাঁরা ভারতের হোসেনী ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় হিসেবে গর্বিত ও পরিচিত। আহমদ ছফা তা জানতেন না বলেই এটিকে বাঙালী মুসলমানের কল্পনা বলে কল্পনা করেছেন।

আহমদ ছফার যুক্তি হচ্ছে, শহীদে কারবালার বাঙালী মুসলমান পুঁথি লেখক হিন্দুদের প্রতি বিদ্বেষী হয়ে প্রতিশোধ স্পৃহা থেকে  হিন্দু ব্রাহ্মণ আজরকে মুসলমান বানিয়েছেন। এটি তাঁর কুযুক্তি এ-কারণে যে, একটি সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষী হয়ে অন্য সম্প্রদায়ের লেখক যখন সাহিত্য সৃষ্টি করেন, তখন তিনি সে-সাহিত্যে ঐ সম্প্রদায়ের লোকদেরকে খল চরিত্রে চিত্রিত করেন, কিন্তু পুঁথিতে বর্ণিত সচ্চরিত্র, উদার ও নিষ্ঠাবান আজরের প্রতি একাত্মতায়, ভালোবাসায় ও শ্রদ্ধায় হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকল বাঙালীকে কাঁদতে দেখি।

আহমদ ছফার হাস্যকর কুযুক্তির বিপরীতে, শহীদে কারবালা পড়ে বাঙালী মুসলমান পাঠকের মনে হিন্দু ব্রাহ্মণের প্রতি নয়, বরং ইসলামের খলিফা মুয়াবিয়ায় পুত্র ইয়াজিদের প্রতি ঘৃণা জন্মায় এবং হিন্দু আজরের প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ জাগে।  ফলে, 'শহীদে কারবালা'র আজর চরিত্র সৃষ্টির পেছনে বাঙালী মুসলমানের হিন্দু-বিদ্বেষ নয়, বরং মুসলিম-আত্মকহলের প্রতি ঘৃণা এবং হিন্দু-মুসলিম পার্থক্যের ঊর্ধ্বে একটি মানবতাবোধ কাজ করেছে।

আমি বিস্মিত হই, আহমদ ছফার এই উদ্ভট ও মূর্খ রচনা 'বাঙালী মুসলমানের মন'কে সন-তারিখ-উদ্ধৃতি ও গ্রন্থ-পৃষ্ঠা মুখস্ত করা এবং ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়া জাকির নায়েকের এক বাংলাদেশী সংস্করণ যেনো বাঙালী মুসলমানের মনোবিশ্লেষণের বাইবেল হিসেবে প্রচার করছেন।

পাঠকের প্রতি আমার অনুরোধ, নিজরাই অনুসন্ধান করে দেখুন হোসেনী ব্রাহ্মণ আছে কি-না। অভিনেতা সুনীল দত্ত, সঞ্জয় দত্ত-সহ অনেক বিখ্যাত হোসেনী ব্রাহ্মণ ছিলেন ও আছেন, যাঁদের পূর্বপুরুষরে আরবে ছিলেন এবং  ইমাম হোসেনের পক্ষে লড়াই করেছিলনে বলে আজও তারা আরবি পঞ্জিকা অনুসারে কারবালার শহীদ দিবস পালন করেন।

পাঠকদের বলবো, 'শহীদে কারবালা' পাঠ করে দেখুন আপনার মনে আজর-বিদ্বেষ আসে নাকি ইয়াজিদ-বিদ্বেষ আসে। দয়াকরে ভাবুন, আহমদ ছফার দাবী-মতে মুসলিম পুঁথি লেখক যদি হিন্দু-ব্রাহ্মণ-বিদ্বেষ থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যেই হিন্দু আজর চরিত্র সৃষ্টি করবেন, তিনি সে-চরিত্রকে হীন না করে মহান করে চিত্রিত করবেন কেনো? অন্যের মুখে ঝাল না খেয়ে দয়াকরে নিজের ক্রিটিক্যাল আঈ গড়ে তুলুন এবং সেই ক্রিটিক্যাল আঈ দিয়েই নিজেই পড়ুন এবং নিজেই বুঝুন। কাউকে জ্ঞান-নবী মানার কোনো দরকার নেই, নিজের বোধ ও বুদ্ধির ওপর ভারসা রাখুন! ০১/১২/২০২২। লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়