সুদিন চট্টোপাধ্যায় : আজ লীলা নাগ রায়-এর প্রয়াণবার্ষিকী। [১১ জুন ১৯৭০] তাঁকে তেমন করে আর আমরা মনে রাখিনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরে প্রথম ছাত্রী। ঢাকায় দ্বিতীয় বালিকা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। বিএ পাশ করেছিলেন কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে ১৯২১ সালে। সে বছর মেয়েদের মধ্যে তিনিই হন প্রথম। তাঁর বাবা গিরীশচন্দ্র নাগ ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট , মা কুঞ্জলতা দেবী চৌধুরী অত্যন্ত সমভ্রান্ত মহিলা। তাঁদের পিতৃ-পরিবার তৎকালীন সিলেটের অন্যতম সংস্কৃতমনা ও শিক্ষিত একটি পরিবার। লীলা নাগ ১৯৩৯ সালে বিপ্লবী অনিল রায়কে বিয়ে করে হন লীলা রায়, সম্পূর্ণ নাম, লীলাবতী রায়। ঢাকাকে কেন্দ্র করে বাংলার নারীদের মুক্তি ও আত্মসচেতনতার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন এই দৃঢ়চেতা, দেশপ্রেমী, দুঃসাহসিনী মহিলা। তাঁর বিশ্বাস এবং বক্তব্য ছিল সমাজে ও সংসারে নারী-পুরুষ সমকক্ষতা স্বপ্ন দেখে অথবা বক্তৃতা করে আরব্ধ করা যাবে না। তার জন্য প্রয়োজন ব্যাপক নারী শিক্ষা এবং সমস্ত ধরণের কাজকর্মে তাদের এগিয়ে এসে অর্থ উপার্জনের দ্বারা স্বাবলম্বী হবার মানসিকতা।
বাঙালি মেয়েদের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহ তৈরির জন্যে তিনি ঢাকা শহরে একে একে প্রতিষ্ঠা করেন আরমানীটোলা বালিকা বিদ্যালয়, কামরুন্নেসা গার্লস হাই স্কুল এবং নারীশিক্ষা মন্দির, যা পরবর্তী কালে শের-এ-বাংলা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় রূপে পরিচিত হয়। লীলাবতী ছিলেন অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী এক আপসহীন লড়াকু ব্যক্তিত্ব। ১৯২৬ সালে তিনি তৈরি করেন ‘দীপালী ছাত্রী সংঘ’ নামে ছাত্রীদের রাজনৈতিক সংগঠন, ১৯২৮-এ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে যোগ দেন। ১৯৩০ সালে মহিলাদের আবাস ‘ছাত্রীভবন’ প্রতিষ্ঠা করেন। সুভাষচন্দ্র বসুর ফরোয়ার্ড ব্লক গঠিত হলে তিনি এই সংগঠনে আত্মনিয়োগ করেন। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সংস্পর্শে এসে স্বাধীনতা আন্দোলনে কারাবরণ ও ঔপনিবেশিক অত্যাচার সহ্য করেন। ১৯৩১ সালে কেবলমাত্র নারীদের উদ্যোগে, রচনায় ,পরিচালনায় ও তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় জয়শ্রী পত্রিকা। দেশভাগ ও দাঙ্গায় বিধ্বস্ত মানুষের দ্বারে দ্বারে তিনি ঘুরেছেন সেবা, পূনর্বাসন এবং ভালোবাসার স্পর্শ নিয়ে। দাঙ্গা বিধ্বস্ত নোয়াখালীতে গান্ধিজির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ২০১০ সালে ঢাকায় যখন যাই খোঁজ নিয়েছিলাম স্বাধীন বাংলাদেশে কোথাও কোনো স্থাপনা আছে নাকি তাঁর নামে, নিদেনপক্ষ কোনো রাস্তার নামকরণ। হতাশ হয়েছি। ঢাকা তাঁকে মনে রাখেনি, কলকাতাও তাঁকে ভুলে গেছে। ফেসবুক থেকে