শিরোনাম
◈ জুলাই অভ্যুত্থানের সেই ঐক্য কোথায়? ◈ ব্রিটিশদের ‘নাকানিচুবানি’ দিতে ইরানের এক দশকের ‘ছায়া যুদ্ধ’: যেভাবে চলছে যুক্তরাজ্যের ভেতরে গোপন তৎপরতা ◈ চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার জাকির হোসেন বরখাস্ত, আরও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ◈ এবার অঝোরে কাঁদলেন মিসাইল ম্যান কিম জং উন (ভিডিও) ◈ জুলাই নিয়ে ‘আপত্তিকর’ ফেসবুক পোস্ট: পুলিশের বিরুদ্ধে ছাত্রদের অবরোধ-বিক্ষোভ ◈ নতুন উচ্চতায় রেমিট্যান্স: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের সর্বোচ্চ প্রবাহ ◈ ডলারের দরপতনে রেকর্ড, ১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় পতনে বিশ্ববাজারে আস্থার সংকট ◈ “৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের মতোই চব্বিশের যোদ্ধাদেরও জাতি ভুলবে না” — তারেক রহমান ◈ গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান খালেদা জিয়ার ◈ শ্রীলঙ্কার বিরু‌দ্ধে বুধবার  সি‌রি‌জের প্রথম ওয়ানডে ম‌্যা‌চে  মু‌খোমু‌খি  বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ১২ জুন, ২০২৪, ০১:৪৫ রাত
আপডেট : ১২ জুন, ২০২৪, ০১:৪৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ধর্মান্ধতা দিয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন?

মজিবুর রহমান

মজিবুর রহমান: বাংলাদেশে এখন প্রায় ১০ হাজার এটিএম বুথ রয়েছে এবং অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে প্রায় ৯ হাজার শাখা। এই যে প্রযুক্তি যা মানুষের জীবনকে খুবই সহজ করেছে তার কোনো কিছুই কি আমাদের? সবকিছুই আমদানি করতে হয়। ব্যাংকিং সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো কেবল সফটওয়্যার বিক্রি করেই বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে যায়। কেবল একবারেই যে নেয় তাও নয়। এটি ব্যবহারের মাসিক ফি, ইউজার ফি, নতুন প্রোডাক্ট ফি, আপডেট ফিসহ বহু ধরনের টাকাই দিতে হয় নিয়মিত। একটি এটিএম বুথেরও মেশিন থেকে সফটওয়্যার সবই আমদানি করতে হয়। ইউরোপের দেশগুলো বিপুল পরিমাণ আয় করে এখাত থেকে। জার্মান সফটওয়্যার কোম্পানি এসএপি এর মোট সম্পদ ৬৮ বিলিয়ন ডলার। এটা বাংলাদেশের বর্তমান রিজার্ভের ৪গুণ এবং যদি বাংলাদেশের যাবতীয় দেনা বাদ দেওয়া হয় তবে হয়তো ৮গুণ হবে। এটা সম্ভব হয়েছে তাদের বিকশিত জ্ঞানের জন্যই। মেধার বিকাশ না ঘটাতে পারলে কেবল প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার দিনও শেষ হয়ে এসেছে।
ইসরাইল কি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি দেশ? বাস্তবিক তা নয়। ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের প্রাকৃতিক সম্পদহীন একটি দেশ। কিন্তু তারা পৃথিবীর শক্তিশালী একটি দেশ। কেন? ওই দেশটি এতো ধনীই বা কেন? কী আছে তাদের? হ্যাঁ ইসরাইলের নাগরিকদের আছে জ্ঞান। সিঙ্গাপুরও এমন ধরনের দেশ। সেদেশেও প্রাকৃতিক সম্পদ নেই আছে পৃথিবীর সেরা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। সেগুলোই তাদের সম্পদ। অর্থাৎ তারাও জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। পাশ্চাত্য এখন ধর্মকে ফেলে এসেছে পশ্চাতে। তারা নির্ভর করছে জ্ঞানের উপর। ধর্মান্ধতা মানুষকে অকর্মা ও মেধাহীনে পরিণত করে বিপরীতে জ্ঞান মানুষকে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখায়।

আমরা দীপদেশ নাউরুর কথা বলতে পারি। প্রাকৃতিক সম্পদ ফসফরাস বিক্রি করেই তারা পৃথিবীর দ্বিতীয় ধনী দেশে পরিণত হয়েছিল। একসময় ফুরিয়ে যায় প্রাকৃতিক সম্পদ। জ্ঞান না থাকায় তাদের করা বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ হাতছাড়া হয়ে যায়। আজ নাউরু আবারো পরিণত হয়েছে গরিব রাষ্ট্রে। মধ্যপ্রাচ্যের তেল ফুরিয়ে গেলে বা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়লে তাদের অনেক দেশের অবস্থাই নাউরুর মতোই হবে। সৌদি আরব হজ্ব-বাণিজ্য করে কিছুটা টিকে থাকবে, আরব আমিরাত টিকে যাবে বাণিজ্যিক কারণেই। দুবাই প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল নয়। আরব-পারস্যের বাকি দেশগুলোর মানুষ জ্ঞানার্জন করেনি। এ কারণেই শতকোটির মুসলিম দেশ মিলেও হেরে যায় অর্ধকোটির ইসরাইলের কাছে।

সক্রেটিস জ্ঞানী ছিলেন বলেই জানতেন, ‘জ্ঞানই শক্তি’। তথ্য জানা ও তার প্রয়োগ করতে পারলেই সবকিছু বদলে দেওয়া যায়। সুন্দর জীবনের জন্যও জ্ঞান অপরিহার্য। জ্ঞান কোন ভাববাদী জিনিস নয়। কোনো সাধু সন্নাসী বা পীরের দোয়ায় তা কারো মধ্যে প্রবেশ করে না। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে গভীরভাবে ভাবলেও তা আসবে না। জ্ঞান আকাশ থেকে নেমে আসে না, অলৌকিকভাবেও পাওয়া যাবে না। বিশ্বাসের কোনো বইতে জ্ঞানের ছিটাফোটাও থাকে না। তাহলে? কেন ইসরাইলের মতো প্রাকৃতিক সম্পদহীন দেশে জ্ঞানী মানুষ গিজগিজ করে আর প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সৌদি আরবে সাহারা মরুভূমির মতো বিরান জ্ঞানের জগৎ? সুশিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়েই আজ পাশ্চাত্যের দেশগুলো উন্নতির চরম শিখরে। তারা নাগরিকদের দিতে পেরেছে কল্যাণ রাষ্ট্র, কথা বলার স্বাধীনতা আর মুক্তচিন্তা করার অধিকার। বিপরীতে তেল সমৃদ্ধ আরব-পারস্য আজও অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত। নাগরিকগণ কথা বলতে ব্যর্থ, অধিকার আদায়ে অসচেতন ও অন্ধবিশ্বাসে নিমজ্জিত। তাদের ভোটাধিকার নেই আমাদের মতোই। ধর্মীয় জ্ঞান জাগতিক উন্নয়নে আরো প্রতিবন্ধকতাই তৈরি করে। সেখানে অজ্ঞতাকেই জ্ঞান বলে বিবেচনা করা হয়। জ্ঞানকে শৃঙ্খলিত করে রাখে।

জ্ঞানের আলো দিয়েই পাশ্চাত্যের মানুষ আইটি খাত নিয়ন্ত্রণ করছে, উন্নত শিল্পকারখানা স্থাপন করছে ও শিল্প-সাহিত্যে শীর্ষে অবস্থান করছে। আর অন্ধবিশ্বাস ও অজ্ঞতা আমাদের মানুষের মর্যাদাই দিচ্ছে না। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো যে প্রোগ্রাম ব্যবহার করে তা পাশ্চাত্যের তৈরি। একেকটা ব্যাংকের পেছনে ব্যয় করে কোটি কোটি টাকা। বাংলাদেশের ৬২টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে মূল প্রোগ্রাম বিক্রি করেই ওরা নিয়ে গিয়েছে ৮-১০ হাজার কোটি টাকা। এরপর ইউজার বাড়াতে, পোর্ট বাড়াতে, আপগ্রেড পেতে, মাসিক চার্জ ইত্যাদি বহু দিকেই ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত টাকা দিতে হচ্ছে। এটা ১০০ কোটি ব্যারেল তেলের দামের সমান। তেল ফুরিয়ে যাবে কিন্তু জ্ঞানতো ফুরাবে না। এখন ব্যাংকগুলোর উপর চাপ আসছে আরো উন্নত প্রোগ্রাম ব্যবহারের। আবারো লাগবে বিপুল টাকা। বাংলাদেশে এমন প্রোগ্রাম বানাতে পারছে না। কয়েকটি ব্যাংক বাংলাদেশি প্রোগ্রাম ব্যবহার করে বিপদে পড়েছিল। এর থেকে মুক্তির পথ কি? জ্ঞানার্জনইতো! এর চেয়ে বড় শক্তি আর কিছু হয় না।

স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন, হিন্দুত্ববাদ কায়েম হলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। দেশ থেকে ইংরেজগণ বিদায় নিবে, দারিদ্রতা দূর হবে, সুশিক্ষা আসবে। তার ধারণা এসব অলৌকিকভাবেই হয়ে যাবে। এ কারণেই তার গুরুরাও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বলতেন, বিধবাবিবাহ আইন করার দরকার নেই। যখন মানুষ শিক্ষিত হবে তখন এমনিতেই সব ঠিক হয়ে যাবে। এখনো দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে ধর্মান্ধতা তীব্রভাবে বিরাজ করছে। তারা ভাবছে অলৌকিকভাবেই তারা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করবে। দোয়া-প্রার্থনা করেই সব অর্জন করে ফেলবে। তারা সবকিছুতেই দোয়ার কাঙাল। ধর্মালয়ে সারাদিন পড়ে থাকলেও সামান্য জ্ঞানার্জন হবে না। ইসরাইলের বিরুদ্ধে সারাদিন বদদোয়া করলেও ইসরাইলের তেমন কোন ক্ষতি হচ্ছে না। ইতোমধ্যেই ৩৬ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গয়ের জোর আর প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষমতা এখন ফুরিয়ে এসেছে। নাইজেরিয়া পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদপূর্ণ একটি দেশ। আফ্রিকার আরো বহু দেশেই প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। আফগানিস্তানেও বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। আফগানিস্তান ও নাইজেরিয়া কেবল পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্র দেশই নয়, তারা পৃথিবীর অন্যতম অসুখী দেশও। এসব দেশের নাগরিকদের ন্যুনতম মানবাধিকারও নেই। ধর্মান্ধতা, পীর-ফকিরে আস্থা, ভুত-প্রেতে বিশ্বাস মানুষকে অন্ধকার জগতে নিয়ে যায়, যেখানে কোন আলোর দেখা পাওয়া যায় না। ১০ জুন ২০২৪ ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়